ফের ভারতীয় রাজনীতির ময়দানে এক মহীরূহের পতন ঘটল। অবসান হল একটি যুগের। প্রয়াত হলেন আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা পরবর্তী বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যাচ্ছিল তাঁর শরীরে। বিগত কয়েকদিন ধরেই গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এই বর্ষীয়ান নেতা। অবশেষে আজ বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলে।
টুইটে শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি টুইটবার্তায় তিনি বলেন, “দেশের জনপ্রিয় বর্ষীয়ান নেতা এবং আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ-র প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। আসামের পাশাপাশি কেন্দ্রেও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। এই শোকের মুহূর্তে তাঁর পরিবার এবং সমর্থকদের সমবেদনা জানাচ্ছি।”
গগৈয়ের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাহুল গান্ধীও। তিনি বলেন, “শ্রী তরুণ গগৈ সত্যিকারের কংগ্রেস নেতা ছিলেন। আসামের সব মানুষ এবং সম্প্রদায়কে একসঙ্গে নিয়ে আসার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমার কাছে তিনি ছিলেন অসামান্য এবং বিজ্ঞ নেতা। আমি তাঁকে ভালোবাসতাম এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতাম। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”
আদ্যোপান্ত কংগ্রেসি মতাদর্শে বিশ্বাসী তরুণ গগৈ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। পাঁচবারের সাংসদ, চারবারের বিধায়ক এবং রেকর্ড ১৫ বছর আসামের মুখ্যমন্ত্রী থাকা চাট্টিখানি কথা নয়। কংগ্রেস আমলে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী থেকে শুরু করে মনমোহন সিং পর্যন্ত, একাধিক কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়পাত্রও ছিলেন গগৈ।
একদমই অরাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা তরুণ গগৈয়ের রাজনীতিতে প্রবেশ ষাটের দশকের শেষের দিকে। ইন্দিরা গান্ধী তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন ৭১-এ। নিজের শহর জোড়হাট থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন চারবার (১৯৭১-৮৫)। পরবর্তীকালে কোলিয়াবর কেন্দ্র থেকে দু’দফায় সাংসদ হন। আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন দু’বার। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। এমনকি পি ভি নরসিমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হন।
তরুণ গগৈয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্যই হল, আসামকে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত করা। তাঁর ১৫ বছরের রাজত্বে আসামে রাজনৈতিক হিংসা অনেকটাই কমেছিল। উন্নয়নের কাজও নেহাত কম করেননি। প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুতে আসাম তথা গোটা দেশের কংগ্রেসি রাজনীতিতেই বড়সড় শূন্যতার সৃষ্টি হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।