বুথ ফেরত সমীক্ষায় যেমনটা বলা হয়েছিল ভোট গণনা শুরুর পর ট্রেন্ড ছিল সেটাই। সকালের প্রাথমিক ভোট গণনায় কংগ্রেস ও বামদের সঙ্গী করে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) ‘মহাগঠবন্ধন’ শাসক-জোট এনডিএ-র চেয়ে এগিয়ে থাকছিল ২০-২৫টি আসনে। কিন্তু বেলা যত দুপুরের দিকে গড়াল, তত ‘ব্যবধান’ কমতে লাগল এবং এক সময় জেডি(ইউ) আর বিজেপি ‘মহাগঠবন্ধন’-এর সঙ্গে ২৫-৩০টি আসনের ব্যবধানে এগিয়ে গেল। তারপর একের পর এক নাটকীয় মোড়ের পর অবশেষে গভীর রাতে ভোট গণনা শেষে খাতায়-কলমে নীতিশ কুমার জিতলেন বটে। কিন্তু আসনপ্রাপ্তির নিরিখে বিহারের তৃতীয় দল হল তাঁর জেডিইউ। ছোট শরিক হয়েও নীতিশ কি চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রী হবেন, না কি নীতির প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বিজেপিকে ফল প্রকাশের পরে সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে বিহারের রাজনীতিতে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় দল হিসেবে বিহারে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কংগ্রেসের হলেও সবচেয়ে বেশি মুখ পুড়ল নীতিশ কুমারেরই। কারণ আসন সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় দল হওয়ার পাশাপাশি বিহারের রাজনীতিতে জেডিইউকে টপকে গিয়ে বড় শরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল বিজেপি। আর আসন সংখ্যায় টপকে যেতেই সুর বদলে গিয়েছে বিহারের বিজেপি নেতাদের। প্রাক্তন সভাপতি অমিত শাহ যতই ভোটের আগে বলুন না কেন, এনডিএ জিতলে নীতিশ কুমারই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সমীকরণ পাল্টে যেতেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিহারের বিজেপি নেতারা। প্রচার চলাকালীনই যার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিহারের রাজনীতিতে প্রবল নীতিশ-বিরোধী নেতা গিরিরাজ সিংহ।
অক্টোবর মাসেই তিনি দাবি করেছিলেন, বিজেপি আসন বেশি পেলে রাজ্যের বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। আজ একই দাবি তুলেছেন বিহার বিজেপির নেতা অজয়কুমার চৌধুরি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, বিজেপির হাত ধরে জেডিইউ এ যাত্রায় পার পেয়েছে। তাই এনডিএ জোটের মুখ্যমন্ত্রী করা হোক বিজেপি থেকেই। নীতিশের উচিত এখন দিল্লীতে গিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়া। অন্যদিকে, জেডিইউ নেতাদের বক্তব্য, নীতিশের আজ যে অবস্থা হল, তার পিছনে বিজেপি কম দায়ী নয়। চিরাগ পাসোয়ানকে দিয়ে বিজেপিই আসলে ভোটের আগে মোদীর প্রশংসা আর নীতিশের তীব্র নিন্দা করিয়ে রেখেছে। যার ফলে অন্তত ২৫-৩০টি আসনে জেডিইউ প্রার্থীর জেতা অনিশ্চিত করে দিয়েছেন এলজেপি প্রার্থীরা।
প্রশ্ন, এটা কি আগেই আন্দাজ করেছিলেন নীতিশ? আর সেই আগাম আভাস পেয়েই কি পূর্ণিয়ার সভায় তাঁর ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’-এর ঘোষণা? যদিও শেষ দিনে সহনাভূতি কুড়োতে নীতিশের ওই ঘোষণার পরেও নির্বাচনে তাঁর দলের ফলাফলেই স্পষ্ট বিহারবাসীর আস্থা অনেকাংশেই হারিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, বিজেপির চালে চিরাগের কাছে মাত হওয়ার পরেও কি অমিত শাহদের উপরে ভরসা রাখবেন নীতিশ? অন্যদিকে, পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো নীতিশকেই মুখ্যমন্ত্রী করার প্রশ্নে অমিত শাহেরা সবুজ সঙ্কেত দিলেও একটি বিষয় আগে থেকেই স্পষ্ট, নীতিশ ফের কুর্সিতে বসলেও এই দফায় সরকারের রাশ থাকবে বিজেপির হাতেই। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও প্রথম দিন থেকেই বিজেপি নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনে চলতে হবে নীতিশকে। ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রিত্ব করে আসা নীতিশের পক্ষে কি এভাবে চলা সম্ভব? এক জন ‘অসহায়’ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেয়ে নীতিশ সত্যি ‘সন্ন্যাস’ নেন কি না, সেটাই এখন দেখার!