সংসদের দুই কক্ষে পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি বিল আইনে পরিণত হয়েছে। আর সেই নয়া কৃষি আইনের জেরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে আলু-পেঁয়াজ। আর তার ফলে অতীতে সরকারি আদেশনামা জারি করে আলু-পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও সম্প্রতি সেই আইনি অস্ত্র হাতছাড়া হয়েছে রাজ্যের। সরকার এখন নিজের মজুত থেকে বাজারে আলু ছাড়তে শুরু করার পরেও খুচরো বাজারে তার দাম কমছে না। হিমঘর থেকে পাইকারি বাজারে আলুর দামে বিশেষ কিছু তারতম্য হচ্ছে না। কিন্তু খুচরো বাজারে পৌঁছে গিয়েই সেই আলুর দামই প্রতি কেজিতে ৬-৭ টাকা দাম বেড়ে যাচ্ছে। শত চেষ্টাতেও তা রোখা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন কৃষি বিপণন কর্তারা।
আলুর মতো আকাশছোঁয়া দাম পেঁয়াজেরও। বঙ্গে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা তেমন পোক্ত নয়। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের কিছু প্রচেষ্টা লকডাউনের কারণে থমকে গিয়েছে। ফলে মহারাষ্ট্র থেকে আসা পেঁয়াজই ভরসা। কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে রোজ পেঁয়াজ লাগে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। তার প্রায় পুরোটাই বাইরে থেকে আনতে হয়। দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গে তার প্রভাব পড়ছে। কৃষি অধিকর্তা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘আমরা এখন অসহায়। কেন্দ্র নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা থেকে আলু-পেঁয়াজ বাদ দেওয়ায় আইন প্রয়োগ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার আমাদের নেই। ২০১৪ সালেও আলুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। সে বার ৪ জুলাই এবং ৭ সেপ্টেম্বর দু’টি আদেশনামার জোরে আলুকে অত্যাবশ্যক পণ্য ঘোষণা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এ বার আমরা তা করতে অক্ষম।’
সরকারি সূত্রের খবর, ডিসেম্বরে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তার আগে দাম কমার সম্ভাবনা কম। কেন্দ্র নভেম্বরে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা আসবে ডিসেম্বরে। আমদানি যখন করতেই হচ্ছে, সেটা অগস্টে করলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকত বলে মনে করছেন কৃষি বিপণন বিশেষজ্ঞেরা। একই ভাবে খুচরো বাজারে আলুর চড়া দাম ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে কর্তাদের ধারণা। চড়া দামের দরুন মাথাপিছু আলুর কেনার পরিমাণ কমছে। কর্তাদের আশঙ্কা, বছর শেষে হিমঘর থেকে যখন সব আলু বার করে দিতে হবে, তখন চাষি বা ব্যবসায়ীরা দাম পাবেন না। সরকারি সূত্রের হিসেব, এখনও রাজ্যের হিমঘরগুলিতে ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু আছে। আগামী দু’মাসে খুব বেশি হলে ১১-১২ লক্ষ মেট্রিক টন আলু লাগবে।
সরকার নিজেরাই ৪২ হাজার টন আলু হিমঘরে রেখেছিল। উৎসবের মরসুমে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চতুর্থীর দিন থেকে তা বাজারে ছাড়তে শুরু করে রাজ্য। এ-পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার টন আলু কলকাতা ও জেলাগুলিতে পাঠানো হয়েছে। তার পরেও দাম কমার লক্ষণ নেই। কৃষি বিপণন কর্তারা জানাচ্ছেন, বুধবার খুচরো বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ছিল ৩৬-৩৭ টাকা কেজি। এ দিন হিমঘর থেকে বেরোনো আলুর দাম ছিল ২৬-২৭ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৩০-৩১ টাকায়। কৃষি বিপণন কর্তাদের বক্তব্য, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরো বাজারে প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা ফারাক হওয়ার কথা। কিন্তু কলকাতার বাজারে পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৬-৭ টাকার। কোনও ভাবেই এতটা ফারাক হওয়ার কথা নয়।