বিহারের রতনৌলি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় সাহানি। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম মুখ হিসেবে একসময়ে খবরের শিরোনামে ছিলেন স্কুলের গণ্ডি ডিঙোতে না পারা এই ব্যক্তি। তিনিই এবার নির্দল প্রার্থী হিসেবে মুজফফরপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ছেন। আর টানা ১০ দিন ধরে তাঁর সমর্থনে সভা করে যাচ্ছেন অর্থনীতিবিদ তথা ইউপিএ জমানার ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের সদস্য জঁ দ্রেজ।
প্রসঙ্গত, তীব্র দারিদ্রের কারণে ক্লাস সেভেনেই স্কুল ছাড়তে হয় সঞ্জয় সাহানিকে। পরিবারের হাল ফেরাতে দিল্লী পাড়ি দিয়েছিলেন। ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতেন সেখানে। রোজগারের অর্থ সঞ্চয় করে বছরে দু’একবার ফিরতেন রতনৌলির গ্রামের বাড়িতে। ২০১১ সালে এভাবেই একবার ছুটি নিয়ে বিহারের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন সঞ্জয়। শুনেছিলেন, কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ করা কিছু খেটে খাওয়া মানুষের অভিযোগের কথা। এরপরই সোজা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে মনরেগা প্রকল্প ও নিজের গ্রাম ও রাজ্যে সেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে পড়তে বসেছিলেন। সেখান থেকেই মনরেগা অ্যাক্টিভিস্ট সঞ্জয় সাহানির উত্তরণ।
এরপর ধারাবাহিক আন্দোলন করে তিনি বাধ্য করেছিলেন বিহার প্রশাসনকে নড়ে বসতে। এর মধ্যেই নিজের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেন সঞ্জয়। সাহানির কথায়, গত আট বছরে ১ লক্ষ ১৫ হাজার মহিলাকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে আনতে পেরেছি। যার মধ্যে ৩৬ হাজার মহিলা আমারই গ্রামের। এছাড়া করোনা পরবর্তী লকডাউনে বিহার থেকে যাওয়া প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিককে সাহায্য করতে হাত বাড়িয়েছেন তাঁরা।
সাহানির পাশে দাঁড়ানো বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদের কথায়, মনরেগা নিয়ে সঞ্জয়ের কাজের মাধ্যমেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। মনরেগা প্রকল্পের অন্যতম কারিগর জঁ দ্রেজ যেই শুনেছেন তাঁর চেনা সঞ্জয় এবার ভোটে লড়ছেন, তিনি সটান পাড়ি দেন বিহার। জমিয়ে প্রচার করছেন ইলেক্ট্রিশিয়ান থেকে সমাজকর্মী, সেখান থেকে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখা মানুষটির জন্য। জঁ দ্রেজের কথায়, শুধু মনরেগা অ্যাক্টিভিস্ট নয়, সাহানি দুর্নীতির বিরুদ্ধে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। সাহানির নিজের টাকা নেই, কিন্তু এই কাজে তাঁকে প্রচুর মানুষ সাহায্য করছেন। তাই সঞ্জয় ভোটে জিতুন বা হেরে যান, এটা গণতন্ত্রের জয়।