সপ্তাহ তিনেক আগেই দিল্লীর সফদর জং হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে চার উচ্চবর্ণের ব্যক্তির হাতে গণধর্ষণের শিকার হওয়া হাথরসের দলিত মহিলা। যা নিয়ে এখনও তোলপাড় গোটা দেশ। প্রশ্নের মুখে উত্তরপ্রদেশের নারী সুরক্ষা। তবে তাতেও থেমে নেই যোগী রাজ্যে গণধর্ষণের ঘটনা। শুধু তাই নয়। চলছে ‘জঙ্গলরাজ’। এদিকে সরকারি মঞ্চ থেকে ‘মিশন শক্তি’, ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ ঘোষণা হচ্ছে। আর বাস্তবে চলছে বিজেপির গুন্ডাগিরি। এবার যেমন মাঝরাতে থানায় ঢুকে লকআপের চাবি খুলে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে ধৃত এক বিজেপি কর্মীকে বের করে নিয়ে গেলেন বিজেপি বিধায়ক ও তাঁর ছেলে! যোগীর পুলিশ মূক দর্শকের ভূমিকায়। শনিবার মাঝরাতে লাখিমপুর খেরি এলাকার মহম্মদি থানার ঘটনা। বিধায়কের নাম লোকেন্দ্রপ্রতাপ সিং। সব দেখেশুনে মুখ্যমন্ত্রী যোগীর উদ্দেশে বিরোধীদের প্রশ্ন, রাজ্যে কোন মিশন চলছে, বেটি বাঁচাও নাকি অপরাধী বাঁচাও? তৃণমূল কংগ্রেস তুলল রাজ্যপালের প্রসঙ্গ। তাদের কটাক্ষ, উত্তরপ্রদেশে কি রাজ্যপাল নেই?
প্রসঙ্গত, গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেল এখন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল। রাজ্যের নারী সুরক্ষা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠলেও তাঁর মুখে সাড়া নেই। তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের কথায়, ‘বাংলার রাজভবনে এমন একজনকে পাঠানো হয়েছে, কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করলেও যিনি বিজেপির ওপর তৃণমূলের অত্যাচার বলে চালিয়ে দেন। সারাদিন প্রলাপ বকেন। অথচ, উত্তরপ্রদেশে নারী সুরক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারটুকুও হরণ করা হচ্ছে। হাথরসের অনেক আগে থেকেই পুলিশ, প্রশাসন অপরাধীদের আড়াল করতে ব্যস্ত। জেলাশাসক নির্যাতিতার পরিবারকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ, খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর। যোগীর রাজ্যে বিজেপি নেতা-কর্মীদের অপরাধে ছাড়পত্র দিয়ে ধর্মের ষাঁড় হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যে রাজ্যপাল পদে কি কেউ নেই?
সম্প্রতি হাথরসে ১৯ বছরের এক দলিত মেয়েকে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে গোটা দেশ উত্তাল হয়েছে। ক’দিনের মধ্যে সেই হাথরসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪ বছরের এক শিশু। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩ দলিত মেয়ের মুখে অ্যাসিড ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর দু’দিন আগে বালিয়া জেলার দুরজানপুর গ্রামে পুলিশ ও সরকারি আধিকারিকদের সামনেই পরপর গুলি চালিয়ে এক ব্যক্তিকে খুন করেছে বিজেপি বিধায়কের সাকরেদ ধীরেন্দ্র সিং। লাখিমপুর খেরির ঘটনায় যথারীতি বিজেপি বিধায়ক লোকেন্দ্রপ্রতাপ সিং ও তাঁর ছেলেকে না আটকে ইভটিজারকে সঙ্গে নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে যেতে দিয়েছে যোগীর পুলিশ। অথচ, এই ঘটনার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগেই ‘মেয়েদের মর্যাদা রক্ষা’র কথা আওড়ে ‘মিশন শক্তি’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে যোগী সরকার। সরকার জানিয়েছে, এবার থেকে রাজ্যে মেয়েদের ওপর নির্যাতনকারীদের নাম, ঠিকানা জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে।
এদিকে, শনিবার রাতে বিজেপি বিধায়কের সদলবলে থানায় চড়াও হওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, ইভটিজারকে বের করে নিয়ে যেতে পুলিশকর্মীদের কাছে লকআপের চাবি চাইছেন বিধায়ক। এক মহিলার সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। খবর পেয়েই দলবল নিয়ে থানায় হাজির হয়েছিলেন বিজেপি বিধায়ক। রবিবার সকালে হিন্দি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর-সহ টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। রাহুলের কটাক্ষ, ‘কীভাবে শুরু হয়েছিল? বেটি বাঁচাও। আর এখন কেমন চলছে? অপরাধী বাঁচাও।’ একই প্রতিবেদন শেয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথকে নিশানা করেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানাবেন, কোন মিশনের অধীনে কাজ হচ্ছে? বেটি বাঁচাও, নাকি অপরাধী বাঁচাও?’