কথাটি তো কবেই ফুরিয়েছে। নোটে গাছটি কিন্তু একটুও মুড়িয়ে যায়নি। দিব্য স্নেহের শাসন। আজকের ভোগবাদী দুনিয়ার আমরা যারা পণ্য পৃথিবীতে সুখ খুঁজে মরি, তাঁদের নোটেগাছটি কিছু অক্সিজেন যোগাবার ছলে বলে যায়,
“সুখ সুখ করি কেঁদোনা আর
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে
ততই বাড়িবে হৃদয় ভার।”
আজকের প্রাত্যহিক জীবনে কয়েকটা চেনা শব্দ – হতাশা, বিষণ্ণতা, আত্মহত্যা, হেরে যাওয়া …। যদি দাবি করি, ব্লু হোয়েল গেম খেলে যে কিশোর আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল, সে যদি শুধু তাঁর লেখা পড়তো? যে মেয়েটা মায়ের সামান্য বকুনি সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়েছিল সে যদি তাঁর কবিতা আত্মস্থ করতে পারতো! তাহলে অন্যরকম কিছু কি হতে পারতনা?
এই কবিতাগুলোর সাথে আপনি কতটা পরিচিত?
“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে”
বা,
“করিতে পারি না কাজ,
সদা ভয় সদা লাজ,
সংশয়ে সঙ্কল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে”
যদি প্রশ্ন করা হয় এগুলি কার লেখা তাহলে অধিকাংশ মানুষ প্রথমেই কবিগুরুর নাম নেবেন। কিন্তু কবিগুরু ও বিদ্রোহী কবিই তো বঙ্গদেশের একমাত্র কবি ছিলেন না। এই বঙ্গদেশ আরও অনেক প্রতিভার জন্মভূমি। অনেক নারী কবিও এখানে জন্ম নিয়েছেন, রেখে গিয়েছেন তাঁদের অক্ষয় কীর্তি। উপরোক্ত পদ্যদুটি কবি কামিনী রায়ের সৃষ্টি। তাঁকে শুধুমাত্র বাঙালি নারী কবিই বা বলি কিভাবে! তাঁর সম্পূর্ণ পরিচয়, প্রথম বাঙালি নারী গ্র্যাজুয়েট কবি শ্রীমতী কামিনী রায়।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে তিনি কতটা পরিচিত বলা শক্ত। এক সময়ে তিনি কিন্তু ছিলেন মহিলা কবিদের অগ্রগণ্য। ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই অক্টোবর বরিশাল জেলার (এখন বাংলাদেশে) বাসণ্ডা গ্রামে এক মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বৈদ্য পরিবারে কামিনী সেনের জন্ম হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেসময়ের বিখ্যাত লেখক ও ব্রাহ্মসমাজের সদস্য চণ্ডীচরণ সেন। পিতামহ নিমচাঁদ সেন ছিলেন ভাবুক ও ধার্মিক প্রকৃতির লোক। কামিনীর শিশু বয়স থেকেই তাঁর পিতামহ তাঁকে বিভিন্ন শ্লোক আবৃত্তি করে শোনাতেন। তাঁর ভাবধারায় কামিনীর শিশুমন যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিল। বাড়িতে কোন অতিথি এলে কামিনীকে পিতামহের শেখানো শ্লোক আবৃত্তি করে শোনাতে হত। কালো রঙের প্রতি অনেকেরই একটা স্বাভাবিক বিতৃষ্ণা আছে; কিন্তু কালোর বন্দনা করে এরকমই একটি শ্লোক –
“না করিব হিংসা না করিব রোষ
সভার মধ্যে পড়িব শ্লোক
ওহে গোরা কালা কেন নিন্দ?
কালা রজনী সভা করে ছন্দ,
কালা অক্ষর জপয়ে পণ্ডিত,
কালা কৃষ্ণ জগতে পূজিত,
কালা কেশে উজ্জ্বল মুখ,
কালা কোকিলের বচন মধুর।”
কামিনী যে সময়ে মানুষ হয়েছেন তখন মেয়েদের পড়াশোনা শেখার প্রচলন ছিল না। এটি একটি নিন্দনীয় কাজ বলে গণ্য হত। সমাজপতিদের ধারণা ছিল, মেয়েরা লেখাপড়া শিখলেই অন্যের সঙ্গে পত্রালাপ করবে। কামিনীর জননী নিজের চেষ্টায় একটু লেখাপড়া করেছিলেন; তিনি লিখতে ও পড়তে জানতেন। রান্নাঘরে মাটির দেয়ালে শলাকার সাহায্যে অক্ষর লিখতে শুরু করেছিলেন তিনি। লেখা হয়ে গেলে গোবর জল লেপে সেগুলি পরিষ্কার করে রাখতেন যাতে বয়স্কদের চোখে না পড়ে। শোনা যায় কামিনীর জন্মের অব্যবহিত পূর্বে সন্তানের লালন পালন সম্বন্ধে উপদেশ দিয়ে কামিনীর বাবা তাঁর স্ত্রীকে একটি পত্র লিখেছিলেন। যে কোন কারণেই হোক সে পত্র যথাস্থানে না পৌঁছে গ্রামের অন্য এক ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়ে। তিনি চিঠিটি পড়ে কামিনীর পিতামহকে পৌঁছে দেন। এটি জানাজানি হলে এই ‘গর্হিত’ কর্মের জন্য গ্রামে শোরগোল পড়ে যায়।
কামিনী চার বছর বয়সে লেখাপড়া শুরু করেন। মা যখন রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকতেন তখন শিশু কামিনী তাঁর নিজের হাতে তৈরি মাটির দোয়াতে কালি ভরে খাকের কলম দিয়ে তালপাতার উপর লিখতে বসতেন। স্কুলে আপার প্রাইমারী পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পিতার কাছে গণিত শাস্ত্র শিখে তিনি এ বিষয়ে এতদূর পারদর্শী হয়ে ওঠেন যে গণিত শিক্ষক শ্যামাচরণ বসু তাঁকে ‘লীলাবতী’ আখ্যা দিয়েছিলেন। চোদ্দ বছর বয়সে কামিনী মাইনর পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পিতা চণ্ডীচরণ ছিলেন জলপাইগুড়ির মুন্সেফ। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে বিভিন্ন বিষয়ের বহু গ্রন্থ ছিল। সময় পেলেই কামিনী পিতার গ্রন্থাগারে গিয়ে পড়াশোনা করতেন। এ সময়ে প্রায় দেড় বছর কাল তিনি পিতার তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেন। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে ছিল ইংরাজি, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি। ‘Morning and evening meditations’ নামক গ্রন্থ থেকেও রোজ একটি করে কবিতা মুখস্থ করতে হত। পিতা কামিনীকে বলতেন, সর্বদাই মনে রাখবে, ‘Your life has a mission’। এটা সম্ভবতঃ কন্যার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল।
ষোল বছর বয়সে কামিনী প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তাঁর দ্বিতীয় ভাষা ছিল বাংলা। এর দু’বছর পর এফ. এ. পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত ভাষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন এবং পরে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট হবার সম্মান লাভ করেন তিনি। চাকরির সুযোগ এলে পিতার আপত্তিতে সেটা হয়ে ওঠে নি। পিতা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “অধিকাংশ ছেলে আজকাল চাকরী পাবার জন্য পড়াশোনা করেন। জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য নয়। কন্যাকে আমি কখনই চাকরী করিতে দিব না।”
কামিনী সেন তাঁর পরিবারে ব্রাহ্মধর্মের আদর্শেই মানুষ হয়েছিলেন। তাঁর ভগিনী ড: যামিনী সেন লেডি ডাক্তার হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। প্রথমে রাজি না হলেও পরে অন্য অনেকের পরামর্শে কন্যাকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য পিতা কামিনীকে চাকরি করতে বাধা দেন নি এবং ১৮৮৬ সালে কামিনী বেথুন কলেজে শিক্ষয়িত্রীর পদে নিযুক্ত হন। তাঁর রচনা সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন,
“… ‘মেদিনী’ নামক মেদিনীপুরে একখানি সাপ্তাহিক কাগজ ছিল। পিতা তাহার জন্য আমাকে কবিতা দিতে অনুরোধ করেন। তদনুসারে ‘প্রার্থনা’ ও ‘উদাসিনী’ শীর্ষক দুইটি কবিতা দিয়াছিলাম। … ‘আলোচনা’ নামক মাসিক পত্রিকায় প্রসন্নময়ী দেবীর লিখিত ‘কেন মালা গাঁথি’ – ‘কুমারী চিন্তা’ নামক কবিতা পড়িয়া আসিয়া পরদিন ‘সঞ্জীবনী-মালা’ লিখি। প্রসন্নময়ী প্রবীণা বিবাহিতা – কুমারীর চিন্তা লিখিলেন, আমি কুমারী হইয়া প্রবীণার মত তাহার উত্তর দিলাম। এ এক তামাসা!”
সিভিলিয়ান কেদারনাথ রায় বিয়ের অনেক আগেই কামিনী রায়ের কবিতার গুণগ্রাহী ছিলেন। তাঁরই আগ্রহে ১৮৯৪ সালে কামিনী সেনকে তিনি পত্নী রূপে গ্রহণ করেন। কামিনী সেন রূপান্তরিত হন কামিনী রায় নামে, যে নামে তিনি পরবর্তী কালে কবি হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। বিয়ের অব্যবহিত পরে কামিনী রায় তেমন ভাবে কবিতা লেখেন নি, শুধু ‘গুঞ্জন’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময়ে তিনি গৃহকর্ম ও সন্তান পালনই তাঁর প্রধান কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন। জনৈক বন্ধু তাঁকে কবিতা না লেখার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন, “এগুলিই আমার জীবন্ত কবিতা।”
তিনি সংসারে মন দিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তাঁর অদৃষ্টে সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। ১৯০০ সালে তাঁর এক সন্তানের মৃত্যু হয়। ১৯০৮-এ ঘোড়ার গাড়ি উলটে গিয়ে তাঁর স্বামী পরলোক গমন করেন। কন্যা লীলা ও পুত্র অশোকের মৃত্যু ১৯২০ সালে। এত শোকের আঘাতে কবি মুহ্যমান হয়ে পড়েন। পুত্র অশোকের মৃত্যুর পর রচিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘অশোক সঙ্গীত’। শোকের আঘাত কাটিয়ে ওঠার জন্য তিনি আবার কবিতা লেখায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর গ্রন্থ প্রকাশনার সময় নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য দেখা যায়।
তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ – ‘আলো ও ছায়া’ (১৮৮৯); ‘নির্ম্মাল্য’ (১৮৯০); ‘পৌরাণিকী’ (১৮৯১-৯২ সালে রচিত, ১৮৯৯-এ প্রথম প্রকাশ); ‘অম্বা’ (নাট্যকাব্য, ১৮৯১-এ রচিত ও ১৯১৫ তে প্রকাশিত); ‘গুঞ্জন’ (শিশু কবিতা পুস্তক, ১৯০৫); ‘ধর্ম্মপুত্র’ (অনুবাদ গল্প, ১৯০৭); ‘শ্রাদ্ধিকী’ (১৯১৩); ‘অশোক স্মৃতি’ (স্মৃতিকথা, ১৯১৩); ‘মাল্য ও নির্ম্মাল্য’ (১৯১৩); ‘অশোক সঙ্গীত’ (১৯১৪); ‘সিতিমা’ (গদ্য নাটিকা, ১৯১৬); ‘ঠাকুরমার চিঠি’ (১৯২৩); ‘দীপ ও ধূপ’ (১৯২৯); ‘জীবন পথে’ (১৯৩০) ও ‘ড: যামিনী রায়ের জীবনী’ (জীবনী গ্রন্থ)।
কবিতা ছাড়া বিভিন্ন ধরণের লেখা তিনি লিখলেও মূলতঃ কবি হিসাবেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর কবিতা ‘নব্যভারত’, ‘প্রবাসী’, ‘বিচিত্রা’, ‘বঙ্গলক্ষী’ প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত। তাঁর অনেক লেখা রচনা কালের বহু পরে প্রকাশিত হয়েছে। ‘অম্বা’ প্রকাশিত হয়েছে রচনা করার চব্বিশ বছর পরে। একটা চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন,
“আমার মনে হয় আমি কিছু অকালপক্ক ছিলাম। কতকগুলি বিষয় আমি রবীন্দ্রনাথের পূর্ব্বেই লিখিয়াছি, কিন্তু তিনি যখন লিখিয়াছেন, অনেক সুন্দর করিয়া লিখিয়াছেন। যাহা শীঘ্র বাড়ে, তাহা শীঘ্রই নষ্ট হয়, প্রকৃতির মধ্যে ইহা সর্ব্বদাই দেখি। অশ্বত্থ বটাদি বনস্পতি ধীরে বাড়ে, যত দীর্ঘায়ু হয়, লাউ, কুমড়া, শশা, অন্য শাকাদি সে রকম হয় না। দু’দিনে বাড়ে, দু’দিনে মরে। যে সব ছেলে Precocious তাঁহাদের মধ্যে কেহই বড় হইয়া বড়লোক হয় না। আমার মধ্যে একটা precocity ছিল, কিন্তু বয়সের সঙ্গে বৃদ্ধি দেখা গেল না। অবশ্য সারা জীবন কতকগুলি প্রতিকূল ঘটানার মধ্য দিয়াই আসিতে হইয়াছে। সাহিত্যের সাধনা ও অনুশীলনের সুযোগ ঘটে নাই। মনের জড়তাও ছিল।”
কামিনী রায়ের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’। এটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৯৯ সালে এবং অষ্টম সংস্করণ বের হয় ১৯২৫-এ। গ্রন্থটি যে পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছিল, এটা তারই প্রমাণ। কবিবর হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এই গ্রন্থটি পাঠ করে প্রশংসার সঙ্গে লিখেছিলেন,
“এই কবিতাগুলি আমাকে বড়ই সুন্দর লাগিয়াছে; স্থানে স্থানে এমন মধুর ও গভীর ভাবে পূর্ণ যে, পড়িতে পড়িতে হৃদয় মুগ্ধ হইয়া যায়। ফলতঃ বাঙ্গালা ভাষায় আমি এইরূপ কবিতা অতি অল্পই পাঠ করিয়াছি। … বস্তুতঃ কবিতাগুলির ভাবের গভীরতা, ভাষার সরলতা, রুচির নির্মলতা, এবং সর্বত্র হৃদয়গ্রাহিতাগুণে আমি নিরতিশয় মোহিত হইয়াছি। পড়িতে পড়িতে গ্রন্থকারকে কতই সাধুবাদ প্রদান করিয়াছি। আর বলিতে কি স্থলবিশেষে হিংসারও উদ্রেক হইয়াছে।”
এক সময়ে কবির ‘সুখ’ কবিতাটি লোকের মুখে মুখে ফিরত। কবিতার কয়েক পংক্তি নিম্নরূপ,
“নাই কি রে সুখ? নাই কি রে সুখ?
এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?
যতনে জ্বলিয়া কাঁদিয়া মরিতে
কেবলই কি নর জনম লয়? …
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবনে মন সকলই দাও
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও। …
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।”
‘আলো ও ছায়া’ কাব্যের অন্তর্গত এই কবিতাটি কবির মাত্র ষোল বছর বয়সে রচিত। ‘বাঙ্গালার মহিলা কবি’ গ্রন্থের রচয়িতা যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত কামিনী রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কবি তাঁকে ‘সুখ’ কবিতাটি লিখবার ইতিহাসটি জানিয়েছিলেন,
“১৮৮০ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখ মীরজাফার্স লেনের বাড়ীতে কবিতাটি রচিত। এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিবার ছয় মাস পূর্ব্বের লেখা। শ্রীযুক্ত – সর্ব্বদাই জানাইতেন যে তাঁহার জীবন দুঃখময় এবং ভবিষ্যতের ভাবনায় অন্ধকার। তাঁহাকে সান্ত্বনা দিবার ছলেই এবং তিনি প্রবাস যাইবার পূর্ব্বে আমার নিকট একখানি কবিতা চাহিয়াছিলেন, সে জন্যও বটে, আমি এই কবিতা রচনা করি। … সকলের ভাল লাগিয়াছে বলিয়া এটা রাখিয়া দিয়াছিলাম। নতুবা বয়সের অনুচিত পাকামি হইয়াছে বলিয়া কবে ছিঁড়িয়া ফেলিতাম। সাড়ে পনের বৎসর ছিল তখন আমার বয়স। তৎপূর্ব্বে কবে আমি সংসারে প্রবেশ করিলাম আমার বিশেষ দুঃখ কি নৈরাশ্য কেন? এ সকল প্রশ্ন অনেকে করিয়াছেন, উত্তর দিবার ছিল না। বন্ধু অবলা (বর্তমানে লেডি বসু – বিশ্ববিশ্রুত বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্র বসুর পত্নী) সুশীলকুমার গুপ্ত নাম দিয়া এই কবিতা আমার অজ্ঞাতসারে ঢাকায় ‘বান্ধবে’ পাঠাইয়াছিলেন, কিন্তু সম্পাদক উহা প্রকাশ করেন নাই। আমি নিজে বিভূতি গুপ্ত নাম দিয়া উহা ‘আর্য্যদর্শনে’ পাঠাইয়াছিলাম ছাপা হয় নাই। সহপাঠিনী কুমুদিনী, তখন খাস্তগীর পরে মিসেস দাস, বেথুন কলেজের Lady Principal উহা ‘বঙ্গদর্শনে’ দিবার জন্য কোন আত্মীয়কে দিয়া বঙ্কিমবাবুর নিকট পাঠান। বঙ্কিমবাবু বলেন তিনি ‘বঙ্গদর্শনের’ ভার ছাড়িয়া দিয়াছেন। আজকাল দেখি কতকগুলি স্কুলপাঠ্য গ্রন্থেও এই ‘সুখ’ খানিকটা স্থল জুড়িয়া বসিয়া আছে।”
কামিনী রায়ের ‘মা আমার’ কবিতায় দেশপ্রেমের উদার ধ্বণি অনুরণিত,
“যেই দিন ও চরণে ডালি দিনু এ জীবন
হাসি অশ্রু সেইদিন করিয়াছি বিসর্জ্জন।
হাসিবার কাঁদিবার অবসর নাহি আর,
দুঃখিনী জনমভূমি মা আমার, মা আমার। …
মরিব তোমারি কাজে, বাঁচিব তোমারি তরে,
নহিলে বিষাদময় এ জীবন কে বা ধরে?
যতদিন না ঘুচিবে তোমার কলঙ্কভার,
থাক প্রাণ, যাক প্রাণ, মা আমার, মা আমার।”
এই কবিতাটি সম্বন্ধে কবি লিখেছিলেন,
“মা, আমার, মা আমার, গানটিতে আমি ‘মা’ ভাবটিকে সমস্ত অনুরাগ ও ব্যাকুলতা দিয়া ভরিতে চাহিয়াছিলাম, কিন্তু সঙ্গীতজ্ঞ নই বলিয়া দিয়াছিলাম একটা সহজ সুর – আমার নির্দ্দেশ মত উপেন্দ্রকিশোর রায় মহাশয় দিয়াছিলেন। অনেক বৎসর পরে রবিবাবু যখন তাহার ‘অয়ি ভুবনমনমোহিনী মা’ রচনা করিয়া গাহিলেন, সে ভাষা, সে সুর, সে বর্ণনাসৌন্দর্য্য আমার গানটাকে কতদূর ফেলিয়া গেল। তবু আমার গানটাকে আমি মূল্যহীন মনে করি না। ইহার মূল্য ভিতরের ভাবে – অন্তরে যে সাধনা, যে তপস্যার শিখা একটু প্রকাশ করিতেছে ও অপর প্রাণে সঞ্চারিত করিতে পারিয়াছে তাহাতেই।”
এক ব্যক্তি কামিনী রায়কে বলেছিলেন –“আপনার ‘মা আমার’ ‘মা আমার’ গানটাই আমার জীবনের মূলমন্ত্র হইয়া আমাকে চালাইয়াছে।”
‘আলো ও ছায়া’ কাব্যে প্রণয়ের কবিতায় আশা নিরাশা, সুখ দুঃখ, আলোর দিশা ও বঞ্চনার ছায়া যেন যুগপৎ সঞ্চারিত হয়েছে। এর কিছুটা দেখা মেলে কবির ‘প্রণয়ে ব্যাথা’ কবিতায়,
“কেন যন্ত্রণার কথা, কেন নিরাশার ব্যাথা,
জড়িত রহিল ভবে ভালবাসা সাথে?
কেন এত হাহাকার, এত ঝ’রে অশ্রুধার?
কেন কন্টকের স্তূপ প্রণয়ের পথে?
বিস্তীর্ণ প্রান্তর মাঝে প্রাণ এক যবে খোঁজে
আকুল ব্যাকুল হয়ে সাথী একজন,
ভ্রমি বহু, অতি দূরে পায় যবে দেখিবারে
একটি পথিক প্রাণ মনের মতন,
তখন, তখন তারে নিয়তি কেন রে বা’রে
কেন না মিশাতে দেয় দুইটি জীবন?
অনুলঙ্ঘ্য বাধারাশি সমুখে দাঁড়ায় আসি
কেন দুই দিকে আহা যায় দুই জন? …”
কবি কখনো কামনাহীন উদার নির্মল নিরাসক্ত প্রেমের স্বর্গীয় আনন্দময় ও মহিমাময় রূপটি বর্ণনা করেও আমাদের চমৎকৃত করেছেন। এটির সরল প্রকাশ ঘটেছে তাঁর ‘সে কী’ কবিতায় –
“ ‘প্রণয়’?
‘ছিঃ’
‘ভালবাসা প্রেম?’
‘তা ও নয়।’
‘সে কি তবে?’
‘দিও নাম, দিই পরিচয় –
আসক্তি বিহীন শুদ্ধ ঘন অনুরাগ,
আনন্দ সে নাহি তাহে পৃথিবীর দাগ;
আছে গভীরতা আর উদ্বেল উচ্ছ্বাস,
দু’ধারে সংযম-বেলা, ঊর্দ্ধ্বে নীল আকাশ,
উজ্জ্বল কৌমুদী তলে অনাবৃত প্রাণ,
বিশ্ব প্রতিবিম্ব কার প্রাণে অধিষ্ঠান,
ধরার মাঝারে থাকি ধরা ভুলে যাওয়া,
উন্নত-কামনা-ভরে ঊর্দ্ধ্ব দিকে চাওয়া …।”
নিপীড়িত নারীদের জন্য কবি অকুন্ঠভাবে আন্তরিক। অপরের উদাসীনতা তাঁকে পীড়িত করেছে। তাঁর আক্ষেপ তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এইভাবে,
“সীতা সাবিত্রীর জনমে পাবিত,
ভারতে রমণী হারায় মান,
শুনিয়া নিশ্চিন্ত রয়েছিস সবে,
তোদের সতীত্ব শুধু কি ভাণ?
রমণীর তরে কাঁদে না রমণী,
লাজে অপমানে জ্বলে না হিয়া?
রমণী শকতি অসুরদলনী,
তোরা নিরমিত কি ধাতু দিয়া?”
‘চাহিবে না ফিরে?’ কবিতায় পতিত ও আর্তের জন্য কবির গভীর সহানুভূতি ও হৃদয়াবেগ উৎসারিত হয়েছে,
“পথে দেখে ঘৃণাভরে কত কেহ গেল সরে
উপহাস করি কেহ যায় পায়ে ঠেলে,
কেহ বা নিকটে আসি বরষি সান্ত্বনা রাশি
বঞ্চিতেরে ব্যাথা দিয়ে যায় শেষে ফেলে। …
বর্তিকা লইয়া হাতে চলেছিল একসাথে
পথে নিভে গেছে আলো পড়িয়াছে তাই,
তোমরা কি দয়া করে তুলিবে না হাত ধরে
অর্ধদন্ড তার লাগি থামিবে না ভাই?
তোমাদের বাতি দিয়া প্রদীপ জ্বালিয়া নিয়া
তোমাদের হাত ধরি হোক অগ্রসর
পঙ্কমাঝে অন্ধকারে ফেলে যদি যাও তারে
আঁধার রজনী তার রবে নিরন্তর।’’
পাপকে ঘৃণা করলেও পাপীকে ঘৃণা না করার চিরন্তন নীতিবোধ ও আদর্শের দ্বারা কবি অনুপ্রাণিত ছিলেন। এর প্রমান পাওয়া যায় তাঁর লেখা নিম্নের কবিতা থেকে,
“সত্য দোষে আপনার চরণ স্খলিত তার
তাই তোমাদের পদ উঠিবে ও শিরে?
তাই তার আর্ত্তরবে সকলে বধির রবে?
যে যাহার চলে যাবে – চাহিবে না ফিরে?”
কবি যেমন কামনা বর্জিত স্বর্গীয় প্রেমের বাণী উচ্চারণ করেন, প্রেমের মুগ্ধতায় আত্মদানের অঙ্গীকারও সমভাবে নিবেদিত হয়েছে তাঁর ‘নিরুপায়’ কবিতায়,
“প্রিয়তম, কহ তুমি যাহা ইচ্ছা তব,
যত রুক্ষ তীক্ষ্ণ বাণী আছে গো ভাষায়
সব আনি হান প্রাণে, আমি সয়ে রব
সিক্ত চোখে, মৌন মুখে, আমি নিরুপায়।
তুমি পতি, তুমি প্রভু, ম্ন, মান মম
সকলি তোমার হাতে দল’ যদি হায়;
এই রমণীর মন, তাহা, প্রিয়তম
তোমার চরণ প্রান্তে লূটাবে ধরায়।”
‘এরা যদি জানে’ কবিতায় সমাজের অন্ত্যজ মানুষের প্রতি কবির গভীর সহানুভূতি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে উৎসারিত হয়েছে, একই সঙ্গে উচ্চবর্ণের অজ্ঞানতাজনিত অবজ্ঞাকেও আঘাত হেনেছেন অন্তিম সময়ের কঠোর বাস্তবতায়,
“এদেরও তো গড়েছেন নিজে ভগবান,
নবরূপে দিয়েছেন চেতনা ও প্রাণ,
সুখ দুঃখে হাসে কাঁদে স্নেহ প্রেমে গৃহ বাঁধে
বিধে শল্যসম হৃদে ঘৃণা অপমান,
জীবন্ত মানুষ এরা মায়ের সন্তান। …
উচ্চকূলে জন্ম ব’লে কতদিন আর
ভাই বিপ্র রবে তব এই অহঙ্কার?
কৃতান্ত সে কুলীনের রাখে না তো মান,
তার কাছে দ্বিজ শূদ্র পারীয়া সমান।
তার স্পর্শে যেইদিন পঞ্চভূতে দেহ লীন
ব্রাহ্মণে চণ্ডালে রবে কত ব্যবধান?”
কবি নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন তার ‘লক্ষ্যতারা’ কবিতায়,
“বিশাল গগন মাঝে এক জ্যোতির্ম্ময়ী তারা
তাহারেই লক্ষ্য করি চলিয়াছি অবিরাম।
ঘনঘোর তমোজালে জগৎ হয়েছে হারা,
পরবাসী আত্মা মম চাহে সে আলোকধাম। …
কঠোর বসুধা-বুকে ভ্রমিতেছি শুষ্ক মুখে,
থামিব কি এইখানে? কোন স্থানে কোন দিন
ধরারে ধরিয়া হাতে স্বরগ লইবে সাথে,
আলোক নীরধি মাঝে আঁধার হইবে ক্ষীণ।”
কবিতাটির ইতিহাস কবি ব্যক্ত করেছিলেন যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত’কে এইভাবে,
“যেদিন বেথুন স্কুলে শিক্ষয়িত্রীরূপে প্রবেশ করিলাম, সেই দিন সন্ধ্যাকালে Lady Superintendent- এর বাড়ীতে নির্জ্জন প্রকোষ্ঠে বসিয়া এই কবিতাটি লিখি। পুরাতন স্থানে নূতন জীবন আরম্ভ করিয়াছিলাম, অনেকদিন পরে আবার পরিবার হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া আসিলাম, বড়ই একলা মনে হইতেছিল। কিছু কাজ করিব – জীবনটা নষ্ট হইতে দিব না, এই একটা আকাঙ্ক্ষা চিরদিনই ছিল। জীবনে আদর্শ ছিল কাজে লাগা। সেই আদর্শ অনুসরণ করিয়া বেথুন কলেজে চাকরী লই। বাড়িতে স্বজন পরিবেষ্টিত হইয়া কি কাজে আসিতাম না? রুল করা Exercise book এর পাতা ছিঁড়িয়া তাহার উপর কবিতাটি লিখিয়াছিলাম পেন্সিল দিয়া, এখনও বেশ মনে পড়ে।”
আমরা অনেক সময় লোকলজ্জার ভয়ে কর্তব্যটুকু করতেও সঙ্কোচ বোধ করি, সম্মান হানির আশঙ্কায় দ্বিধাগ্রস্ত হই। এই মানসিকতাকে আঘাত করে কবির বিখ্যাত কবিতা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ –
“করিতে পারি না কাজ, সদা ভয় সদা লাজ,
সংশয়ে সঙ্কল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে। …
মহৎ উদ্দেশ্য যবে একসাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।”
জাগ্রত দেশাত্মবোধ কবির একাধিক কবিতার উপজীব্য বিষয়। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও সুভাষচন্দ্র বোস কারাগারে বন্দী হলে, কবি ‘মুক্তবন্দী’ কবিতা রচনা করেন,
“লৌহদ্বার কারাগারে আজি অকস্মাৎ
মনে হয় ভবিষ্যের পেয়েছি সাক্ষাৎ,
মনে হয় ভারতের ভাগ্য-লিপি খানি
বিধাতার হস্ত হ’তে ক্ষণতরে আনি
কে মোরে দেখায়ে গেল
এ কি দৃশ্য নব!
কল্পনা স্বপন সব মানে পরাভব।”
কবি কামিনী রায় রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমসাময়িক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৬১ সালে আর কামিনী রায়ের জন্ম ১৮৬৪-তে। রবীন্দ্রনাথকে অগ্রজ মনে করেই তিনি লিখেছিলেন,
“তাঁহার (রবীন্দ্রনাথের) সর্বতোমুখী প্রতিভা, গীত রচনায় অদ্ভুত অনন্যসাধারণ ক্ষমতা কেহই অস্বীকার করিতে পারে না। … তিনি যে রুচির সৃষ্টি করিয়াছেন, ইংরাজিতে বলিতে গেলে তিনি যে ‘স্কুলের’ প্রবর্তক, তাহা সজীবতার মতো সন্ধান মেলে না, মিষ্টতা চাহে, স্পষ্টতা চাহে না। ছন্দ, সুর, নিখুঁত মিল, উপলাহত গিরিস্রোতের মত কলকল ধ্বণি, ইন্দ্রধনুর মতো নানা বর্ণের ক্ষণিক খেলা আবছায়া স্বপ্নের আবেশ এইসব তাঁহাদের মতে কবিতার একান্ত আবশ্যক উপাদান। এগুলি উপাদান বটে এবং অতিশয় উপভোগ্য তাহাতেও ভুল নাই কিন্তু কেবল এগুলি দিয়াই হৃদয় পরিতৃপ্ত হয় না। আরো কিছু চাই। সুখ-দুঃখ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, গভীর আনন্দ ও তীব্র বেদনা এই সকল দিয়া যে মানবজীবন তাহার একটা জাগ্রত অস্তিত্বও আছে – এবং তাহার একটা সরল বল প্রকাশের উপযোগী কবিতাও আছে, আছে ও থাকবে।”
কামিনী রায় তাঁর প্রতিভা ও অবদানের একাধিক স্বীকৃতি পেলেও অনেকে মনে করেন তিনি তাঁর যোগ্য ও প্রাপ্য সম্মান পান নি। বৈদ্যবাটি যুবক সমিতির সভ্যবৃন্দ ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ৭ই চৈত্র এবং সাহিত্য পরিষদের বরিশাল শাখা ১৩৩০-এর ৭ই পৌষ কবিকে অভিনন্দন পত্র প্রদান করে। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্ররাও ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে কবিকে অভিনন্দন জানান। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি ১৯৩২-৩৩) এবং নারীশ্রমিক তদন্ত কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন (১৯২২-২৩)। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২৯ সালে তাঁকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ দান করে সম্মানিত করে।
কামিনী রায়ের কবিতা আশ্বাস ও বিশ্বাসকে জীবনে সজীব রাখতে প্রত্যয়ী। অনাবিল দেশপ্রেম, অবিচল আদর্শবোধ, নীতিজ্ঞান, শোক ও দুঃখকে জয় করার মানসিক দৃঢ়তা, মানবতাবোধ ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, ভাষা ও বিষয়বস্তুর স্পষ্টতা তাঁর কবিতার মূলমন্ত্র। মহিলা কবিদের মধ্যে তিনি একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর জীবনের শেষ ভাগে তিনি হাজারিবাগে ছিলেন। সেখানেও তিনি নিয়মিত সম মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে সাহিত্যালোচনা করতেন। ১৯৩৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
(তথ্যসূত্র:
১- কামিনী রায়, তপংকর চক্রবর্তী, গতিধারা।
২- কামিনী রায় : জীবন ও সাহিত্য, ড. মিজান রহমান, কথাপ্রকাশ (২০১৩)।
৩- অগ্রন্থিত গদ্য রচনা, কামিনী রায়, দে’জ পাবলিশিং।
৪- কামিনী রায় রচনাসংগ্রহ, ড. মিজান রহমান, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ।
৫- বঙ্গের মহিলা কবি, যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, দে’জ পাবলিশিং (২০১৩)।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত