তারুণ্যের উচ্ছ্বাস কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে। শুভমান গিল, শিবম মাভি, কমলেশ নাগারকোটিরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে জেতাচ্ছেন দলকে। বয়স খুবই কম। কারও কুড়ি। কেউ আবার সদ্য একুশ টপকেছেন। গত ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে কেকেআরের এই তিন তরুণ তুর্কীর পারফরম্যান্স মন জয় করে নিয়েছে ক্রিকেট দুনিয়ার। কঠিন পিচে গিল অনবদ্য ৪৭ রান করেন। বল হাতে নাগারকোটি ও মাভি তুলে নেন দু’টি করে উইকেট। তাঁদের ফিল্ডিংও ছিল চোখ ধাঁধানো। যা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, আইপিএল শুধু তারকাদের খেলা নয়, তারকা তৈরির উত্তম মঞ্চও।
রাজস্থানকে হারানোর পর নাগারকোটি বলেন, ‘আমি যে ফের এভাবে বল করতে পারব কখনও ভাবিনি। চোটের কারণে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকতে হওয়ায় মনে হয়েছিল আর হয়তো ফিরতেই পারব না। কামব্যাকের পিছনে অনেকের অবদান রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সব সময় কাছে পেয়েছি। এছাড়া দ্রাবিড় স্যারের কাছেও কৃতজ্ঞ। অভিষেক নায়ার (কেকেআরের সহকারি কোচ) অনবরত মনোবল জুগিয়েছেন।’
মাভি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ‘জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাবের দিনগুলি আমি আজও ভুলিনি। আমাকে দ্রুত ফিট করে তোলার জন্য ট্রেনার আনন্দ দাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাম ঝরিয়েছেন। ছন্দে ফিরতে চার মাসের বেশি সময় লেগেছে। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাডামির কাছে আমি ঋণী।’
এই আইপিএলে নাইট রাইডার্সের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান শুভমান গিল। দারুণ বোলিং করছেন শিবম মাভি ও কমলেশ নাগারকোটিও। তবে শুরুতে চোট সমস্যায় দুই পেসার যেভাবে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন, সেখান থেকে এভাবে সাড়া জাগিয়ে ফিরে আসা মোটেও সহজ ছিল না। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পর আচমকাই পিঠের ব্যথা ও গোড়ালির চোট ক্রিকেট থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল নাগারকোটিকে। বিদেশে তাঁকে চিকিৎসা করাতে হয়। গত দেড় বছর ধরে তিনি বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব করে ফিট হয়ে ওঠেন। আট মাস এনসিএ’তে সময় কাটাতে হয়েছে মাভিকেও। লিগামেন্টের সমস্যা তাঁকে অনেকদিন ভুগিয়েছে। প্রবল সম্ভাবনাময় মাভি ও নাগারকোটির রিহ্যাবে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করেছে বোর্ড। সেই সঙ্গে ছিল রাহুল দ্রাবিড়ের মূল্যবান গাইডেন্স এবং এনসিএ’র ফিজিও আশিস কৌশিকের অক্লান্ত পরিশ্রম।
২০১৮ সালে সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারত খেতাব জিতেছিল। সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন গিল, মাভি ও নাগারকোটি। ভবিষ্যতের কথা ভেবে আইপিএলের নিলামে নাগারকোটিকে ৩.৫, মাভিকে ৩ এবং গিলকে ১.৮ কোটি টাকা দিয়ে দলে নিয়েছিল কেকেআর। অনেকেই তখন বলেছিলেন, এ তো ভষ্মে ঘি ঢালার মতোই অবস্থা! ক্রোড়পতি লিগের আবির্ভাব মঞ্চে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেননি মাভি ও নাগারকোটি। এত বড় মাপের টুর্নামেন্টে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছিল গিলেরও। ফলে সমালোচনা আরও তীব্র হয়। সেই সঙ্গে চোট সমস্যা কেকেআরের দুই তরুণ পেসারের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট আস্থা হারায়নি এই তরুণ ব্রিগেডর উপর। হাল ছাড়েননি গিল, মাভি, নাগারকোটিও। সেটাই কেকেআরকে এনে দিচ্ছে সাফল্য।