একদিকে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ। যার জন্য ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছিল না। সঙ্গে দোসর করোনা। শ্বাস নিতে পারছিলেন না বছর ৭৮-এর অলোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩ জুলাই রাতে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে কলকাতার তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে যান মেয়ে এনাক্ষী। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছিল। প্রয়োজন ছিল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের আবেদন করলেও তা দেওয়া হয়নি বৃদ্ধকে। ফলে একাধিক হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যু হয় বৃদ্ধের। সেই ঘটনায় তিন হাসপাতালকে জরিমানার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন।
স্বাস্থ্য কমিশন তাঁদের অ্যাডভাইসরিতে আগেই বলেছিল কোনও অবস্থাতেই মুমূর্ষু রোগীকে ফেরানো যাবে না। কমিশন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ICU বেড না থাকলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া উচিৎ ছিল হাসপাতালের। ঠিক হয়েছে অবিলম্বে জরিমানার টাকা মৃতের পরিবারকে দিতে হবে। তাঁরা যদি টাকা না নেন তবে সেই টাকা স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন মুখ্যমন্ত্রীর কোভিড রিলিফ ফান্ডে দান করবে।
স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “তিন হাসপাতালের বক্তব্য আমরা শুনেছি। একটি হাসপাতাল ফোনে রোগীর পরিবারকে জানিয়েছিল আইসিইউ বেড আছে। কিন্তু যাওয়ার পর ফিরিয়ে দেয়। অন্য একটি হাসপাতাল আমাদের বলে তারা আইসিইউ বেডে রেখেছিল। যদিও মৃতের পরিবার সাফ জানিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। জেনারেল বেডে রোগীকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। প্রতিটি হাসপাতালের থেকে আমরা যে উত্তর পেয়েছি তা সন্তোষজনক নয়।”
বৃদ্ধের মেয়ের অভিযোগ, শত অনুরোধেও কেউ আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করেননি। কেউ জানায়, “বেড নেই। অন্য জায়গায় যান।” কেউ, আইসিইউতে রাখবেন বলেও জেনারেল বেডে শুইয়ে রাখেন। অবশেষে তিন হাসপাতাল ঘুরে ভোর চারটের সময় বৃদ্ধ অলোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভরতি করা হয় একবালপুরের এক নার্সিংহোমে। চারদিন পর ৭ জুলাই সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। বৃদ্ধের মেয়ে এনাক্ষি জানিয়েছেন, একটা আইসিইউ বেডে রাখা গেলে বাবাকে এভাবে চলে যেতে হতো না।
এরপর অভিযোগ যায় স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। শুনানির পর, গোটা ঘটনায় তিন হাসপাতালকে দোষী সাব্যস্ত করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। তিন হাসপাতালের মধ্যে আনন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালকে ১ লক্ষ টাকা এবং তপসিয়া ও গড়চার দুই বেসরকারি হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।