কোভিড ১৯-এর কারণে এ বছর রঙালি বিহুর বড় ধরনের আয়োজন হয়নি আসামে। তাই এবার দুর্গাপুজোও করার অনুমতি দিতে পারবে না রাজ্য সরকার। এবার এমনই হুমকি দিল পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফার স্বাধীন গোষ্ঠীর। আর এরই মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানালেন, এনআরসি তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে আরও নাম। তাই এনআরসি তালিকা ফের যাচাইয়ের দাবিতে বিজেপি শাসিত রাজ্যটির সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো নিষিদ্ধ করার দাবি আর রাজ্য সরকারের এনআরসি তালিকা বাতিলের আবেদনে আসামের বাঙালিরা নতুন করে আতঙ্কে। আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতি (সিআরপিসিসি)–র তরফে দুটি বক্তব্যেরই কড়া সমালোচনা করে বলা হয়েছে, বাঙালির সর্বনাশ করার ষড়যন্ত্র চলছে।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আলফা (স্বাধীন)–র তরফে দুর্গাপুজো বন্ধের ফতোয়া জারি করা করার পাশাপাশি বিবৃতিতে ‘ঔপনিবেশিক ভারতরাষ্ট্রের পুতুল সরকার’ বলে অভিহিত করা হয়েছে আসাম সরকারকে। আসামবাসীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় না রেখে ‘অতি হিন্দু’ হওয়ার তাগিদে দুর্গাপুজোর অনুমতি দেওয়ায় ধিক্কার জানানো হয়েছে। এই বিবৃতি প্রকাশ্যে আসতেই আসামে বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের ধর্মাচরণের অধিকারে হস্তক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন সিআরপিসিসির সভাপতি তপোধীর ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, আধিপত্যবাদীরা রাষ্ট্রদ্রোহী বিবৃতি দিয়েও ভোগ করছে ‘জামাই-আদর’। রাষ্ট্র কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ সরকারের অপকর্মের সমালোচনা করলেই রাষ্ট্র স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করছে।
কোটি কোটি টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে রাজ্য সরকারের কর্মী ও অফিসারদের দিয়ে তৈরি এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা নিয়েও সরকারি ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছে সিআরপিসিসি। তপোধীরবাবুর মতে, চূড়ান্ত খসড়া তালিকাভুক্ত ২৭ শতাংশ নামের তথ্য ফের যাচাই করা হয়েছে। মানুষকে প্রচুর দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়েছে এনআরসি তালিকায় নাম তুলতে গিয়ে। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এখন ফের রাজ্য সরকার এনআরসি তালিকা যাচাইয়ের চেষ্টা শুরু করায় চরম দুর্ভোগে পড়বেন বাঙালিরা। বাঙালিদের নিকেশ করতেই রাজ্য সরকার ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে। আসাম সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া। শুধু বাঙালি নয়, চা জনজাতি-সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীই বিজেপি সরকারের প্রতারণার শিকার বলে তিনি মনে করেন।