নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ আসলে বিজেপির আর পাঁচটা ‘ভাঁওতাবাজি’র মতোই একটি। তাই বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হিন্দুদের মন জয় করতে সংসদে আইনটি পাশ করিয়েও রুলস বা বিধি তৈরিতে চূড়ান্ত ঢিলেমি দিচ্ছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এমনই অভিযোগ আসামের বাঙালিদের একটা বড় অংশের। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে তাঁরা বলেন, বাঙালির সর্বনাশ করাই গেরুয়া শিবিরের একমাত্র লক্ষ্য।
তাঁদের অভিযোগ, হিন্দু বা মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বাঙালিকেই নিকেশ করার চেষ্টা চলছে গোটা আসাম জুড়ে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবাদে ফের বাঙালিদের একজোট হওয়ার ডাক দিচ্ছেন বাংলাভাষী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। এমনকী, বাংলার বাঙালিদেরও বিজেপির প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি, শিখ ও জৈন শরণার্থীদের শর্তস্বাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেওয়াই ছিল সিএএ-র উদ্দেশ্য। আসামে এনআরসি-ছুট হিন্দু নাগরিকদের মন জয়ে সিএএ-ই হচ্ছে বড় হাতিয়ার। তবে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে এনআরসি বা সিএএ নয়, ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও থাকবে ভোটাধিকার।
এর পরেই আসাম জুড়ে ফের শুরু হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন। বাঙালি বিদ্বেষী বিভিন্ন সংগঠন এই আন্দোলনে শামিল হতেই বিজেপি ঢিলেমি দিয়েছে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক ও সংবিধান–বিরোধী বলে অভিযুক্ত সিএএ বাস্তবায়নে। তাই সংসদের উভয় কক্ষের বিল পাশের পরও সিএএ-কে কার্যকর করার কোনও উদ্যোগ নেই কেন্দ্রের।
গত বছর ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গ্যাজেট নোটিফিকেশন হয়। নিয়ম মতে, এর ৬ মাসের মধ্যেই রুলস ফ্রেম করতে হয়। কিন্তু সেটা করা হয়নি। বিধি বা রুলস না তৈরি হওয়ায় সংসদের সাবঅরডিনেট লেজিসলেশন সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়ার পর অবশ্য তিন মাস সময় চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সেই সময়সীমাও পার হয়ে আসছে। পরে অবশ্য আরও তিন মাস সময় থাকছে। তবে আইনজ্ঞদের মতে চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর মধ্যরাতের মধ্যে রুলস ফ্রেম না হলে সিএএ বাতিল হয়ে যাবে।
সিএএ নিয়ে এই জটিলতার মধ্যেই আসাম জুড়ে লকডাউন উপেক্ষা করেই শুরু হয়েছে ফের আন্দোলন। বাঙালি বিদ্বেষী বিভিন্ন সংগঠন বন্যার মধ্যেই প্রতিবাদে শামিল। অভিযোগ, পিছন থেকে বিজেপি নেতারাই তাঁদের ইন্ধন দিচ্ছেন। আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতি (সিআরপিসিসি)-র নেতা সাধন পুরকায়স্থের মতে, বিজেপি মোটেই ক্যা কার্যকর করতে রাজি নয়। তাঁরা বাঙালির সর্বনাশ চায়।