গালওয়ান উপত্যকার পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-র সংঘর্ষস্থল, হট স্প্রিং ও গোগরা এই তিনটি এলাকা থেকেই ইতিমধ্যে চীনের সেনা দেড় থেকে দু’কিলোমিটার পিছু হটেছে। দু’দেশের সমাধান সূত্র অনুযায়ী, যতটা চীন সেনা পিছিয়েছে ততটাই পিছিয়ে যাবে ভারত। দু’দেশের মাঝের ওই তিন থেকে চার কিলোমিটার বাফার জোন বলে গণ্য হবে। সেখানে কোনও পক্ষই আপাতত যাবে না। গালওয়ানে এই বাফার জোন পড়ছে এলএসি-র ভারতের দিকে। এর অর্থ, আগামী এক মাস ভারতের সেনা পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-তেও যাবে না। তাহলে গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া বাফার জোন গড়ে কি নিজের ভূখণ্ড থেকেই পিছু হটছে ভারতীয় সেনা? এবার এমনই প্রশ্ন ওঠায় চুপ মোদী সরকার। ওই বাফার জোনের জন্য নিজেদেরই এলাকায় ভারতীয় সেনার টহল দেওয়ার অধিকার খর্ব হওয়া নিয়ে ওঠা প্রশ্নে নীরব বিদেশ মন্ত্রক।
কংগ্রেসের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, মোদী সরকার কি নিজেদের ভূখণ্ডের মধ্যেই বাফার জোন তৈরি করল? আর সেই কারণে কি আমাদের সেনাকে নিজেদের ভূখণ্ড থেকেই ২.৪ কিলোমিটার পিছিয়ে যেতে হল? কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কথায় ‘গালওয়ান উপত্যকার উপর নিজেদের দাবি কি লঘু করা হচ্ছে? ভারতীয় ভূখণ্ডের পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-র দাবি কি ভারত ছেড়ে দিল?’ শুধু কংগ্রেস নয়, দু’দেশের বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকের পরে সেনার পিছু হঠা এবং বাফার জোন তৈরি হওয়ার পর থেকেই এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে দেশের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক শিবিরে। ভারতের বিবৃতিতে থাকলেও চীনা বিবৃতিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে লাল ফৌজের বিপুল সমাবেশ কমানোর কোনও উল্লেখই না থাকায় বিতর্ক আরও গভীর হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, চীন তাদের প্রিয় কৌশল, অর্থাৎ দু’পা এগিয়ে এক পা পিছোনোর নীতি গালওয়ানেও নিয়েছে কিনা। নিজের ভূখণ্ডেই নিজেদের টহলের অধিকার হারিয়ে কেন বাফার জোন গড়ে ভারতীয় সেনাকে পিছু হঠতে হবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘দু’পক্ষই আলোচনায় একমত হয়েছেন যে, সীমান্তে শান্তি এবং সুস্থিতি বজায় রাখতে যত দ্রুত সম্ভব প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা কমানো প্রয়োজন।’ সেনা পিছোনো নিয়ে কিছু ভুল তথ্য সংবাদমাধ্যমে পরিবেশন করা হচ্ছে দাবি করে অনুরাগ বলেছেন, ‘ভারত-চীন সীমান্ত নিয়ে সরকারের অবস্থান খুব স্পষ্ট করে বারবার জানিয়েছি আমরা। বলা হয়েছে যে, গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে চিন সম্প্রতি যে দাবি করেছে, তা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি এবং টেকসই নয়। আমাদের ভূখণ্ডকেও তারা নিজেদের বলে দাবি করেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে অবশ্যই মানতে হবে, কেউ একতরফা ভাবে তার পরিবর্তন করতে পারে না।’
এই কূটনৈতিক চাপান-উতোরের মধ্যে গোগরা (পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৭) থেকে পিছিয়ে গিয়েছে দু’দেশের সেনা। সেনা সূত্রের মতে, তিনটি জায়গা থেকে সেনা সরে যাওয়ায় আপাতত সেনা পশ্চাৎপসারণের প্রথম পর্ব শেষ হল। দু’তরফে সেনা সরে গিয়ে মাঝে তিন কিলোমিটারের বাফার জোন তৈরি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে দু’দেশের সেনা নিয়ে গঠিত জয়েন্ট ভেরিফিকেশন টিম বা যৌথ নজরদারি দল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সেই খতিয়ে দেখার কাজ সেরে ফেলা হবে। যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকটি হবে। সূত্রের মতে, বাফার জোনে কোন প্রোটোকল মেনে দু’দেশের সেনা নজরদারি চালাবে, তা ঠিক হবে ওই সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে। তবে সেনা সূত্রের মতে, প্রথম ধাপ উতরে গেলেও ভবিষ্যতে স্নায়ুর যুদ্ধ শুরু হবে ফিঙ্গার চার থেকে ফিঙ্গার আটের দখল নিয়ে।