করোনা সংক্রমণ রোধ করতে চলছে একটানা লকডাউন। তাই বন্ধ স্কুল। আর এর ফলে বন্ধ মিডডে মিলও। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। ফলে বিহারের বিভিন্ন জেলার গরিব পরিবারের শিশুরা আবারও খাতা-বই তুলে রেখে কাজে নেমে পড়েছে। কেউ লোহার ছাঁট কারখানা, কেউ ইটভাটা, কেউ কাচ ভাঙার কারখানায় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।
এগুলির মধ্যে অন্যতম ভাগলপুর জেলা। জেলার অনেক অঞ্চলেই গরিব, তফসিলি সম্প্রদায়ের বাস। এই সব শিশুরা প্রধানত দুপুরের ভাতের টানেই স্কুলে যেত। ভাত, ডাল, রুটি, সব্জি, এবং শুক্রবার করে ডিম মিলত মিডডে মিলে। কিন্তু শিশুরা সাফ জানাল, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তারা একদিনও মিডডে মিল পায়নি।
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য দফতরের ২০১৫-১৬-র সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, বিহারের পাঁচ বছরের নিচে থাকা ৪৮.৩ শতাংশ শিশু শারীরিকভাবে দুর্বল এবং ৪৩.৯ শতাংশ শিশুর ওজন তাদের স্বাভাবিক ওজনের অনেক কম। তারা সবাই অপুষ্টিতে ভুগছে। অথচ এক্ষেত্রে জাতীয় গড় ৩৮.৪ শতাংশ এবং ৩৫.৭ শতাংশ। গত তিন মাসে মিডডে মিল না পাওয়ায় সেই হার আরও বেড়েছে।
ভাগলপুরের মুসাহারি টোলার এক বাসিন্দা বললেন, তাঁদের পেশা মূলত ভিক্ষা ও আবর্জনা কুড়নো। যাতে এখন অর্থোপার্জন হচ্ছে না সেভাবে। গত এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী গরিবকল্যাণ অন্ন যোজনায় কেউ নামমাত্র চাল, গম, ডাল পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে আর কিছুই জোটেনি কারও, অভিযোগ মুসাহারি টোলার বাসিন্দাদের। অথচ, গত মার্চে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ডঙ্কা বাজিয়ে ঘোষণা করেছিলেন আগামী তিন মাস ওই রেশন পাবেন গরিব মানুষরা।
যদিও জেলাশাসক প্রণব কুমারের দাবি, স্কুল বন্ধ হওয়ার একদিন পর, অর্থাৎ গত ১৪ মার্চ থেকেই সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, মিডডে মিলের বদলে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেছেন, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের জন্য ১৪ মার্চ থেকে ১৫ দিন ধরে ১১৪.২১ টাকা করে পাঠানো হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১৭১.১৭ টাকা করে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু জেলা প্রশাসনের সব দাবি উড়িয়ে দিয়ে বাড়বিলা গ্রামের বাসিন্দারা এ ধরনের কোনও টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। আমজনতার সুরেই সুর মিলিয়ে সুলতানগঞ্জের শান্তি দেবী কন্যা বিদ্যালয় প্রধানশিক্ষক সুনীল গুপ্তা জানান, গত এপ্রিলে কিছু টাকা তাঁরা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। যেই টাকা তাঁরা অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিলেন। তারপর আর কোনও টাকা পাননি। বরং এই ঘটনায় দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন বাসিন্দারা।