করোনার জেরে এমনিতেই বিমান পরিবহণ শিল্পে শোচনীয় অবস্থা। তার মধ্যেই এয়ার এশিয়ার ভারতের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাওয়ার জল্পনায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। জল্পনা শুরু হয়েছে সম্প্রতি সংস্থার সিইও টনি ফার্নান্ডেজের একটি ইন্টারভিউকে কেন্দ্র করে। ওই ইন্টারভিউয়ে ফার্নান্ডেজ ভারত এবং জাপান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যবসা চালিয়ে ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন। ফার্নান্ডেজের দাবি করোনা হামলার পরবর্তী সময়ে যে ভাবে যাত্রী সংখ্যা কমেছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে লাভের মুখ দেখা কার্যত অসম্ভব। এই অবস্থায় ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।
ভারতে এয়ার এশিয়া গাঁটছড়া বেঁধেছিল টাটার সঙ্গে। এ ব্যাপারে টাটার কোনও বক্তব্য না মিললেও শিল্পমহলের একাংশ ইতিমধ্যেই এই জল্পনাকে সত্যি বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। এমনকী, এয়ার এশিয়ার মতো কম খরচের এয়ারলাইন্স ব্যবসা গুটিয়ে নিলে যে শিল্পের প্রভূত ক্ষতি হবে, তা-ও মানছেন ওই শিল্পপতিরা। এয়ার এশিয়া সূত্রে খবর, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের শেষ চার মাসে সংস্থা লাভ তো করেইনি, উল্টে ক্ষতি হয়েছে ১২৩ কোটি টাকা। এই অবস্থায় করোনায় উদ্ভুত পরিস্থিতি সংস্থাকে আরও কোণঠাসা করেছে। সংস্থার ৬০ শতাংশ পাইলট এবং কেবিন ক্রিউকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে সংস্থা।
ভারতে করোনা পরবর্তী সময়ে টিকিটের চাহিদা যে ভাবে কমেছে, তাতে এই শিল্প যে আগামী এক বছরের মধ্যে লাভের মুখ দেখবে, এমন আশাও করছেন না তাবড় শিল্পপতিরা। স্বভাবতই, এয়ার এশিয়ার এমন সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের।
ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পূর্ব ভারতীয় শাখার চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি বলেন, ‘এয়ার এশিয়া এমন সিদ্ধান্ত নিলে সার্বিক ভাবে তা শিল্পের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক হবে। এ ধরনের কম পয়সার বিমান পরিষেবা পর্যটন শিল্পের জন্য খুবই উপযোগী। আমাদের ইতিমধ্যেই অনেক টাকা ক্রেডিট সেলে আটকে রয়েছে। এই অবস্থায় ওই সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়ে নিলে আমরা অথৈ জলে পড়ব। তবে টিকিটের চাহিদা না থাকলে এয়ার এশিয়া কেন, অনেক এয়ারলাইন্সই ব্যবসা চালিয়ে যেতে চাইবে না।’
ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, ‘আমরাও এমন জল্পনার কথা শুনেছি। এয়ার এশিয়া শেষমেশ এমন সিদ্ধান্ত নিলে শিল্পে বড়সড় ধস নামবে।’ চাঁদনী ট্রাভেলসের কর্ণধার আলাউদ্দিন বলেন, ‘এই সঙ্কটের সময়ে সব সংস্থাই খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এয়ার এশিয়া যদি এমন অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত নেয়, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে। তবে ব্যবসায় লাভ না থাকলে বন্ধ তো হবেই।’