অকাল মৃত্যুর পরেই বোধহয় অমরত্ব মেলে। আজ স্রেফ যার গান দিয়ে একটা গোটা রেডিও স্টেশনের প্রোগ্রামিং হতে পারে একসময় ১৫সেকেন্ডের একটা বিজ্ঞাপনী সুরের জন্য ও কেউ ডাকেনি। ১৯৯৪এ পঞ্চম হতাশ হয়ে বলেছিল, “ঠিক হে, চলো আই আন্ডারস্ট্যান্ড This is show business “. এতো তাড়াতাড়ি ছুটি নিলে চলবে পরের প্রজন্মকে? হতাশা, কাজ না পাওয়ার ডিপ্রেশন, কাজ ছিনিয়ে নেওয়া, নেপোটিজম, লবি- এসবের পরেও তো যে জেতে সেই সিকান্দার!
চারিদিকে এতো ডিপ্রেশন, ব্যর্থতা, হতাশা নিয়ে কথা হচ্ছে, বছরের পর বছর আরডি বর্মনের জন্মদিনে তার কালজয়ী গান শোনা হচ্ছে, কয়েকটি আলোচনা, কিছু গবেষণা কোন গানের সাথে কোন বিদেশি গানের মিল ছিল, ব্যাস! তারপর ফের একটা মৃত্যুর অপেক্ষা প্রতিভা চিনতে হলে৷ জীবদ্দশায় কতোজনই বা ঠাকুরের আসন পায়৷ পঞ্চম পায়নি।
আজ ও যার গান পাবে, প্লেস্টোরে, ডিজিটাল হোক বা পাড়ার ফাংশনে সুপারহিট সেই মানুষটা জানেন শেষ কয়েক বছর কোন কাজ পায়নি। ৮০’র দশকে ওর একের পর এক গান এসেছে কিন্তু পিছনের সারিতে চলে গেছে কয়েকদিনে। এরপর প্রাণের বন্ধু কিশোর ১৯৮৭এ মারা গেল। তারপর একটা সময় এলো যখন শচীন পুত্রের হাতে কোন কাজ নেই। পরিচালক, প্রযোজক ফোন ধরে, পুরনো দিনের কথা বলে, একথা ওকথার পরে ফোন রেখে দেয়। কাজ নেই৷ কাজ চাইলে ও লোকে সেই এক কথা টেপ রেকর্ডারে লুপের মতো যেন বাজিয়েই যায়, বাজিয়েই যায়ঃ “ওকে দাদা, দেখতা হু কুছ আচ্ছা সা কাম!”
গানের মতোই “আজ সবাই এসেছে, শুধু তুমি এলে না”র এক পরিস্থিতি। বাকি অপ্রাসঙ্গিক সব আসে কিন্তু কাজ আর আসে না৷ আশা ও তো আসে না। আশা ভোঁসলের সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে। আশার নিজের কথাতেই পঞ্চমের সাথে শেষ রেকর্ডিং গুলজালের ছবির জন্য সেই গান, “মেরা কুছ সামান, তুমহারে পাস পরহা হে”। পঞ্চমের ও কতো সামান আশার কাছে রয়ে গেছে৷ কিন্তু একলা ঘরে কেউ তো আর আসেনা। মাঝে মাঝে কাজের ছেলেটি হুইস্কির বোতল, বরফ আর গ্লাস এসে দিয়ে যায়। তারপর একের পর এক পুরনো গান পাশে এসে বসে, মনে করিয়ে দেয় আরডি বর্মনের হাতে আর কোন কাজ নেই৷
অনেকদিন বাদে একটা কাজ আসলো বটে প্রথম বৃষ্টি ফোঁটার মতো৷ বিনোদ চোপড়া একটা সিনেমা বানাবে “১৯৪২- আ লাভ স্টোরি”। পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো পঞ্চম জাপ্টে ধরলো ছবিটা। প্রমাণ করার একটা সুযোগ যেন এসেছে, ” বস কৌন হে মালুম হে ক্যা?”
নবাগত সংগীতশিল্পীর মতো তাগিদ সুর বানাবার। সঞ্জয় লীলা বনশালী বলেছিলেন, “আমি নিজে চোখে দেখেছি, ‘এক লড়কি কো দেখা তো আইস্যা লাগা’ বানাতে ঠিক ১৫মিনিট লাগলো। দায়সারা কাজ নয় কিন্তু। ক্লাসের টাস্ক সবচেয়ে ভালো করে সবচেয়ে আগে জমা দেওয়ার জেদ!” এই সিনেমায় সুর করার কয়েকদিনের মধ্যেই বস মারা যায়। “আশা” এসেছিল সে রাতে। যদিও আশা ছিল না আর বসের ফিরে আসার।
পঞ্চম জানুয়ারিতে মারা যায়। সিনেমাটা জুলাইয়ে রিলিজ করে। কী সব গান ছবিতে! ইতিহাসের পাতায় স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেওয়া একটা রেকর্ড! গল্ড ডিস্ক, ফিল্মফেয়ারের ছড়াছড়ি। আরডি কিচ্ছু দেখে যেতে পারলো না। সুশান্ত ও তো ওর ফ্যানডমের এক শতাংশ ও দেখে যেতে পারেনি।
মৃত্যুর পরেই বোধহয় অমরত্ব লাভ হয়। আমরা জীবদ্দশায় অনেক কিছু অনেকদিন ভুলে থাকি। Class কে ভুলে score এর দিকে ঝুঁকে পড়ি। এরমাঝে কতো বটগাছ মারা যায়। আমরা হুজুগে ভুলেই যাই ওরা ও এক একটা বস ছিল। মরলে পরে মনে হয় কী হারালাম। আমাদের আশেপাশেই এরকম প্রতিভা, পুরনো সব নাম ঘুরে বেরাচ্ছে, অনাদরে, কাজবিহীন। একটা সুযোগ দিলে আজ ও স্যাক্সোফোন, মাউথ অর্গান, স্প্যানিশ গিটার, টাম্বাডুরা নিয়ে দাঁড়িয়ে পরবে এই ডিজিটাল যুগে ও “শোলে” র সেই গায়ে কাঁটা দেওয়া টিউন বাজাতে বা “প্যায়র হুয়া চুপকে সে” গানে সেতার ও গিটার মিশিয়ে দিতে!
শুভ পঞ্চমী!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত