দিল্লির এক হাসপাতাল। ভাইরাল ছবি। অনেকে রেগে। আমি বলবো এদের কোন দোষ নেই। এদের বেকার দোষ দিয়ে লাভ আছে? যারা দিনের পর দিন এটা হতে দিচ্ছে তাদের ধরুন, যারা এটা চালাতে পারছে তাদের ধরুন। সেটা করার মুরোদ নেই। সব রাগ সেই দেখাবেন ডাক্তার, নার্স এর উপরে। ভাবেন এরা ও পারসেন্টেজ পায়, এরাই সব চালায়। বিষয়টি ভুল, বেশিরভাগেরই ফিক্সড স্যালারি।
এই হাসপাতালের পোস্টার থেকে চরিত্র আন্দাজ করতে বললে, সৎ প্রতিষ্ঠানই বলবো। ভর্তির আগেই সমস্তটা খোলাখুলি বলে দিয়েছেন। No Hidden Cost. পোষালে আসবে নয়তো দূর হবে৷ ঠিকই তো। বেসরকারি হোটেল যদি একটা কলার দাম নিতে পারে ২৫০টাকা, হাসপাতাল ও নিজের ইচ্ছে মতো বিল করতে পারে। না পোষালে আসবে না। বরং এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার হওয়া উচিৎ। সব হাসপাতালের বাইরে সব দাম এভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া উচিৎ।
আপনাকে বলছি ধর্মাবতার। আপনি যে রোজ খবরের কাগজ কেনেন, বাড়ির জন্য তেলওলা মাছ, ঠাকুরের আসনের জন্য ফুল, ব্রেকফাস্ট এ কচুরি আর রাজনীতি নিয়ে কে কী বললো তার ফিরিস্তি নিয়ে ফেরেন। আপনাকে বলছি যে সন্ধে নামলে টিভিতে বিরাট বিপ্লব দেখেন আর রাগে ফেটে পড়লে মোমবাতি জ্বালান পার্ক স্ট্রিটে।
পরের বার কোলেস্টেরল নিয়ে সচেতন হওয়ার সাথে সাথে নিজের ভোটটা নিয়ে ও সচেতন হন। যেই কেউ ভোট চাইতে আসবে তাকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে তাদের কী পরিকল্পনা, তাদের প্ল্যান কী, পলিসি কী জানুন। পারলে মুচলেকা সই করিয়ে নিন যাতে হাতে নাতে ধরতে পারেন। প্রতিযোগিতামূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আপনিই কিন্তু সমস্যায় পরবেন ধর্মাবতার।
আজ এই হাসপাতালের দেখাদেখি কাল আপনার পাশে হাসপাতালটি ও দাম এভাবেই নেবে এবং আপনাকে বলবে, “দেখে আসুন বড় বড় হাসপাতালে দাম। আমরা মোটেও বেশী নিচ্ছি না”। আপনাকে হয় সরকারি হাসপাতালের মেঝেতে শুতে হবে বা ঘটি বাটি বেচে এখানেই। কারণ আপনার চোখে সবচেয়ে বড় ডাক্তারবাবু এরকমই কোন এক হাসপাতালের সাথে জড়িত।
মন্দির, মসজিদ, রাস্তার সৌখিন আলো, অনুপ্রবেশকারী খেদানো দরকার কিন্তু কোরোনাকে নিয়েই যদি জীবন নির্বাহ করতে হয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আপৎকালীন প্রয়োজন। হিন্দু, মুসলিম, দলিত, বামন, বিহারি, বাঙালি ভাই বোনেরা মিলে দলগুলোকে বাধ্য করুন নিজেদের ইস্তেহারের প্রথম পাতায় এই নিয়ে লিখতে।
কোন দল বলছে সরকারে এলে সবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা করবে, কে বলছে স্বাস্থ্যকে জাতীয়করণ করবে, কারা বলছে রেশন ডিলারদের উপর যেভাবে নজরদারি চলে সেভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দামের ক্ষেত্রে ও নজরদারি চালাবে আর সবচেয়ে বড় কথা – ব্যবস্থা নেবে।
আমাদের দেশে আই.এম.এ এবং কনজিউমার প্রোটেকশন বলে কিউট দুটি সংস্থা আছে। রাষ্ট্রসংঘ যেভাবে আমেরিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ফোকলা বাঘের মতো এরা ও অনেকটা সেরকম। একদিনে মিনমিন করে বলে “এটা ও তো পরিষেবা” কিন্তু যেই price capping নিয়ে চেপে ধরা হয় বলে “মহত পেশা। নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় বলেই এতো দাম রেখেছে। সব কী layman রা বোঝে?”
ঠিকই। তাই TPA এর জন্য ৫০০টাকা নেওয়া হবে। পিপিই র জন্য আলাদা আলাদা দাম। গুনমান কী আলাদা? কোন প্রশ্ন নয়। হাসপাতাল ভয় পেয়ে ফোন করে দিতে পারে পুলিশকে। “হ্যালো স্যার! ঝামেলা পাকাচ্ছে।”
এরপর একদিন ডিজাইনার মাস্ক, পিপিই পরে আপনি হাসপাতাল কর্মীদের দেখতে চান কিনা সেটা বলা হতে পারে। দৃষ্টি সুখ ও পরিষেবা যে। না পোষালে আসবেন না। মাথার দিব্বি দিয়েছে কেউ পাঁচ তারা হাসপাতালে আসতে? স্রেফ ভোটটা মাস্ক পরে, স্যানিটাইজার মেখে দিতে যাবেন কিন্তু, ওটা দিলেই দলগুলো উৎসাহ পাবে জনস্বাস্থ্য বাদে সবকিছুতে মননিবেশ করার।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত