ঘূর্ণিঝড় উম্পুনের ঘণ্টা কয়েকের তাণ্ডব প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে গিয়েছে বাংলার বিস্তীর্ণ অংশকে। এই পরিস্থিতিতেও রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে রাজ্যে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এ নিয়ে আগেই ভিডিও কনফারেন্সে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘রেল মর্জিমতো কাজ করছে। গায়ের জোর দেখাচ্ছে। রাজ্যের যে তাতে বিপদ হচ্ছে তা কী বুঝতে পারছে না! এতো বড় দুর্যোগ সামলাব, মানুষের দুর্ভোগ সামলাব নাকি ওদের রাজনীতি সামলাব?’ আর শুক্রবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে শ্রমিক এক্সপ্রেসকে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ আখ্যা দিয়ে ফের রেলের পদক্ষেপকেই দায়ী করেছেন তিনি। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে অভিন্ন নীতি স্থির করার দাবি করেছে রাজ্য।
প্রসঙ্গত, একসঙ্গে এত সংখ্যায় ভিনরাজ্য থেকে শ্রমিকদের বাংলায় পাঠানোর বিরোধী রাজ্য। গতকালও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাসে এবং গাড়িতে কয়েক লক্ষ মানুষ এসেছেন। এখনও পর্যন্ত ৭৫ হাজার মানুষ এসেছেন ট্রেনে। অনেকে করোনা আক্রান্ত। ওই জন্যই তো আক্রান্ত বাড়ছে। তাঁরা তো হটস্পট রাজ্য থেকে আসছেন। পরিকল্পনাহীন ভাবে যাতায়াত বাড়ায় এটা ছড়িয়েছে বেশি। এখন আর উপায় নেই। সবাইকে নিয়েই থাকতে হবে। করোনাকে নিয়ে ঘুমোন, করোনাকে পাশবালিশ করে নিন। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করেছি। কিন্তু সব আমার হাতে নেই। আকাশ যেমন আমার হাতে নেই, ট্রেনটাও আমার হাতে নেই।’ উল্লেখ্য, শুক্রবার হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, গত ২৮ তারিখ পর্যন্ত শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে শুধু মহারাষ্ট্র থেকে হাওড়ায় এসেছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক। যাঁদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ১১৭ জন।
মমতার অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্য থেকে শ্রমিক এবং আটকে পড়া মানুষদের ফেরাতে ২৩৫টি ট্রেনের পরিকল্পনা রাজ্য সরকারই করেছে, ভাড়াও দিচ্ছে। তার পরেও মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, চেন্নাই এবং দিল্লীর মতো ‘হটস্পট’ থেকে যে শ্রমিকেরা ফিরছেন, তাঁদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করেনি রেল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘একটা সিটে কেন তিন-চার জন করে আসবেন? শ্রমিক এক্সপ্রেসের নামে আপনারা কি করোনা এক্সপ্রেস চালাচ্ছেন? বার বার ট্রেন চালাতে কী অসুবিধা? ট্রেনে বগি বাড়ানোও সম্ভব। মানুষকে খড়ের গাদার মতো করে নিয়ে আসছেন। যাঁর ছিল না, তাঁকেও আপনি করোনা দিচ্ছেন।’ মমতার পরিকল্পনা, পরিযায়ী শ্রমিকরা এলাকায় ফিরে বিভিন্ন স্কুলে থাকবেন। ১০ দিনের মাথায় পরীক্ষা হবে। নেগেটিভ হলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পজিটিভ হলে কোয়ারেন্টাইন করা হবে।