বছর সাতেক আগে জীবনের উৎসবে ‘কাট’ বলে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন পরিচালক। আজ তাঁর মৃত্যুদিনে দাঁড়িয়ে বাঙালির ‘চাই’-এর পাল্লা এভাবেই ক্রমাগত ভারি হয়ে চলেছে। মৃত্যু নিছকই এক সমাপ্তিসূচক যতিচিহ্ন। সৃষ্টি ও স্রষ্টার অভিযাত্রা তাতে থামে না। আসলে একজন আদ্যন্ত সৃষ্টিশীল মানুষের উদ্ভাস যখন নতুন সৃষ্টিতে, তখন তিনিই আমাদের হাত ধরে নিয়ে যান তাঁর গন্তব্যে। কিন্তু তারপরের যাত্রা আমাদের নিজস্ব। স্রষ্টা সেখানে স্থির। হয়তো চেনা কোনও অলৌকিক সোফায় বসে আছেন। আর আমাদের বিস্তার তখন তাঁর সৃষ্টির পরিধি থেকে কেন্দ্রাভিমুখে। তাঁকে চেনা তাঁর সৃষ্টির সংসারে ঢুকে পড়েই। আমরা দেখি সে সবের ভিতরেই স্রষ্টার হাত বাড়ানো আছে। এবার সে হাত খুঁজে ধরার পালা আমাদেরই।
আনওয়ার শাহ রোডের শ্যাওলাপড়া হলুদ বাড়িটার মাথায় সেদিন ছিল ঘন মেঘের কালো ছায়া; সারা গায়ে জলের দাগ। আপাতদৃষ্টিতে সৌজন্যে ছিল বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ। কিন্তু বাড়িটা কি একলা একলা কেঁদেছিল? ঘুমভাঙা সকালে ফোনের আর্তনাদ সেটাই জানিয়েছিল। রাস্তায় ভিড় করেছিল কালো মাথার সারি। কেননা, দোতলার গোল-বারান্দা সেদিন থেকে বড্ড একলা হয়ে গিয়েছিল। সর্বক্ষণের সঙ্গী বিশুর ‘দাদা’ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন চিরকালের জন্য। ৪৯ বছরে শেষ হয়ে গিয়েছিল তাসের ঘরের বর্তমান বাসিন্দার দিনলিপি। থেমে গিয়েছিল চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের দৈনন্দিন রোজনামচা। স্রষ্টার জীবনেই হঠাৎ যবনিকাপাত। শেষ হয়েছিল এক বিশেষ ঘরানার শিল্পকর্মের পথচলা। আকস্মিক সেই অঘটন ঘটে গিয়েছিল ৩০শে মে ২০১৩ সালের ভোরে। চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের আকস্মিক প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গিয়েছিল চলচ্চিত্রের এক বিশেষ ধারা। সিনেমা জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে যা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছিলেন চলচ্চিত্র, রাজনীতি জগৎ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ। মৃত্যু এসে কেড়ে নিয়েছিল তাঁর ৪৯ বছরের জীবন। ঘটেছিল এক ছন্দপতন।
এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রথম তিন মিনিট কল্পনাতীত। বিজ্ঞান চেষ্টা করেছে সে রহস্য উন্মোচনের। কিন্তু এই প্রথম তিন মিনিটের রহস্যের কিনারা পাওয়া বেশ মুশকিল। এই যে ঋতুপর্ণমণ্ডল, যার মধ্যে একদা নিয়ত আবর্তিত হয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির ছোট ছোট গ্রহ ও উপগ্রহগুলি, তারও সূচনালগ্ন রহস্যাবৃত বলেই আমার ধারণা। তাঁকে আমরা প্রথমত ও প্রধানত একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেই ভেবে নিই। তার থেকে বড় ভ্রান্তি বোধহয় আর কিছু নেই। তবু সেই ফাঁদে পা দিলেই ঋতুপর্ণ প্রকল্পের একটা দিশা পাওয়া যাবে। এই চলচ্চিত্রের আকর্ষণেই তিনি তাঁর দিকে টেনে নেন যে কাউকে। তাপর বিরাট এক মেধা গহ্বরের অনতিক্রম্য আকর্ষণে ক্রমাগত নিমজ্জন। মেধা-মননের ধারে, যুক্তির তীব্রতায় তিনি ভেঙে তছনছ করে দেন চেনা চিন্তার ছক। অথচ বিরোধাভাষ এমনই যে, তাঁর সাজানো সেটে ফুলদানির গায়ে একবিন্দু ধুলো পর্যন্ত লাগে না। সবকিছু এত সাজানো, গুছানো, এত প্রমিত যে একটু খটকা লাগে, এই সব সত্যি তো! সত্যি না হয়ে কোনও উপায় নেই। কিন্তু আজ খানিকটা হলেও বোঝা যায় নান্দনিকতার এই সুতীব্র উদযাপন আসলে একধরনের মায়াবিভ্রম। বাঙালি তাতে পা দিয়েছে। এবং ঋতুপর্ণপ্রকল্পের একটি উদ্দেশ্য তখনই সাধিত হয়েছে। কোন বঞ্চনা, কোন অভিমান থেকে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল আমার জানা নেই। মহাবিশ্বের গোড়ার মতো হয়তো ওই প্রথম তিন মিনিট সমাজবিজ্ঞানের ব্যাখ্যারহিত। অথবা ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু এই প্রকল্পের মধ্যে একবার ঢুকে পড়লে আমরা দেখব, ক্রমাগত রাজার মতো টানছেন তিনি। কখনও তাঁর গদ্য। কখনও তাঁর ব্রজবুলি ভাষায় লেখা গান। কখনও তাঁর বিজ্ঞাপন। কখনও টেলিভিশন প্রোগ্রামের ছকভাঙা ভাবনা। আসলে মেধার এই সেলিব্রেশনে তিনি শেষমেশ বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হন, ঋতুপর্ণ ঘোষ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর অনুকৃতিও অসম্ভব প্রায়। এইটাই বোধহয় দেখিয়ে দেওয়া তাঁর অভিপ্রায় ছিল। তাই নিজেকে কখনও গোপন করেননি। সৃষ্টিশীলতার প্রকাশের মতো নিজের যৌনতা, সে সংক্রান্ত চিন্তাভাবনাও। আসলে এই প্রকাশ একধরনের অতিক্রমণের পথও করে দেয়। আমবাঙালির অহেতুক কৌতূহলের, অনর্থক চর্চাকে পিছু ফেলে তিনি এতটা এগিয়ে যান, তাঁর স্বাতন্ত্র, বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে, একটা সময় বিস্মিত হতে হয়। এই বিস্ময়বোধক যতিচিহ্নটিই তিনি বোধহয মুচকি হেসে তুলে রেখেছেন তাঁর একান্ত সিন্দুকে।
তাঁর সিনেমা নিয়ে চলচ্চিত্র বিশারদরা বিশেষ আলোচনা করেছেন। হ্যাঁ, তিনি নিজের মতো করে গল্পই বলে চলেছেল। সাধারণভাবে অবশ্য বলা হয় যে, তিনি নতুন ধারার সিনেমার ভগীরথ। কিন্তু আমার মনে হয় বাংলা ছবির ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা অনেকটাই আরণির মতোই। ছবিতে গল্প বলার যে চিরন্তন ধারা, তাতে ঢুকে পড়ছিল বেনোজল। ঋতুপর্ণ আলের ধারে পেতে দিয়েছিলেন তার মেধা। ফলত অতীতে-বর্তমানে দেখা হয়ে এক নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল বইকি। সিনেমা শিল্প যে ভাঙচুর প্রত্যাশা করে ফর্মে, তা হয়তো তাঁর কাজে কমই মিলবে। তবু অস্বস্তির চপেটাঘাত না থাকুক, একটা তেহাই তিনি ছবিতে রাখতেন, যেটুকু না হলে এই অস্বস্তির নকশাটুকুও অসম্পূর্ণ থাকে। কিছু ব্যতিক্রম মাথায় রেখেই স্বীকার করে নেওয়া ভাল, বাংলা ছবির সংসারে আবার দশচক্রে ভগবান ভূত। এই পরিস্থিতে আমাদের মন দেওয়া উচিত ওই ঋতুপর্ণ-প্রকল্পে। কী করে এই এলোমেলো জল ঢোকা বন্ধ হয়, তা তো তিনি দেখিয়েছেন। আমরা আজ তা দেখতেই বা পাই না কেন!
দ্বিতীয়ত, বাংলা ভাষা যখন এখন ভালবাসাহীন এক পৃথিবীর বাসিন্দা, সেখানে ঋতুপর্ণর গদ্যচর্চার দিকেও আমাদের নজর ঘোরানো উচিত। ছবির সংলাপে বাঙালির মুখের প্রমিত ভাষাটাই বদলে দিয়েছিলেন তিনি। যে গদ্য তিনি লিখতেন, তা খুঁটিয়ে পড়লেই বোঝা যায়, সাহিত্যকে তিনি আলাদা করে কখনও ভাবেননি। বরং অখণ্ড সংস্কৃতির একটা অংশ হিসেবেই আত্মীকরণ করেছিলেন। এই বোধ আজ ভীষণ জরুরি। এই সেদিনও এমন বাঙালি ছিলেন যাঁরা বহুমুখী কাজে নিজেদের ব্যক্ত করতে পারেন। যিনি নাটক করেন, তাঁর লেখনিতে কবিতাও ধরা দেয়। যিনি সিনেমা পরিচালনা করেন, তিনি ভৈরবীতে গানও বাঁধতে পারতেন। অভিনয় যাঁর পেশা, তিনিও হারমোনিয়ামের বেলো টানতেও পারতেন। আসলে এগুলো তো কোনও আলাদা বিভাগ নয়। প্রতিভা প্রদর্শনের রিয়ালিটি শো নয়। সংস্কৃতির অবিছিন্ন ধারার সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেখতে পারলে, এই অভিজ্ঞান মুদ্রা আমাদের হাতে আসে। বলা বাহুল্য তা হারিয়েই একরৈখিক ও এককেন্দ্রিক যাত্রা এখন আমাদের। এই বিক্ষিপ্ত সময়ে তাই ঋতুপর্ণ চর্চা তাই একান্ত জরুরি। বহিমুখিনতার ধারা ক্ষীণ হলেই সংস্কৃতিতে পলি পড়ে। বাঙালির অন্তত তা কাঙ্খিত নয়। অতিক্রমের পথ মেলে অতীতে তাকালেই।
১৯টি চলচ্চিত্রের পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ ১২টি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। আজও বাংলার অন্যতম সফল পরিচালক বলতে তাঁর নামই সবার আগে উঠে আসবে। নতুন প্রজন্মের চিত্রপরিচালকদের মধ্যে মেধা, বৈদগ্ধের পরিচয় দিয়েছিলেন। সৃষ্টিকর্ম ও জীবনকে একইসঙ্গে বাঁধাধরা গতানুগতিকতার গন্ডি পার করে দাঁড় করেছিলেন এক চ্যালেঞ্জের মুখে। প্রচলিত বা চালু ধারণাগুলোকে ভেঙেচুরে অন্য এক মাত্রা দিতে চেয়েছিলেন তাঁর নিজের মতো করে।
১৯৬৩ সালের ৩১শে আগস্ট কলকাতায় জন্মেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। প্রথমে সাউথ পয়েন্ট স্কুল এবং পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে শিক্ষালাভ করেন তিনি। কর্মজীবনের শুরু বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজের মধ্যে দিয়ে। ইংরেজির সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় তাঁর সমান দক্ষতা ছিল। চিত্রনাট্যের ওপরে খুবই জোর দিতেন। চিত্রনাট্যনির্ভর ন্যারেটিভ চলচ্চিত্র নির্মাণে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। সহপাঠী বন্ধুদের কথায়, ছাত্রজীবনে ফিল্ম সোসাইটির আন্দোলনেও তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন। ‘সিনে মাস’ নামে একটি ফিল্ম ক্লাব চালনায় তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। কিংবদন্তি পরিচালক ইংমার বার্গম্যান ও সত্যজিৎ রায়কে আদর্শ হিসেবে নিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। মূলত বাংলা চলচ্চিত্রই বানাতেন। ১৯টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ইংরেজি ও হিন্দি মাত্র দুটি। তাঁর ‘আবহমান’ ২০১০ সালে ভারতের জাতীয় পুরস্কার পায়। ২০০৪ সালে ‘রেইনকোট’ সেরা হিন্দি চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। ২০০৭ সালে সেরা ইংরেজি চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায় অমিতাভ বচ্চন-অভিনীত ‘লাস্ট লিয়ার’। ২০১০ সালে এক জনমত জরিপে ‘দশকের সেরা বাংলা চলচ্চিত্রকার’ নির্বাচিত হন ঋতুপর্ণ ঘোষ।
পড়েছিলেন কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে। কিন্তু মনে করতেন, তুলনামূলক সাহিত্য বা ইতিহাস পড়লেই ভালো করতেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জানাশোনা পারিবারিক আবহে। বাবা, শ্রী সুনীল ঘোষ ছিলেন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা, মা ছিলেন চিত্রকর। ঋতুপর্ণ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কিশোর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে শুটিংয়ে যেতেন। ওই বয়সেই ক্যামেরা চালানো শিখে যান। সম্পাদনা, চিত্রনাট্য লেখার হাতেখড়িও হয় তখন। সব চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য নিজেই লিখেছেন। নিজেকে মনে করতেন ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক ধারার ‘অন্যমত’। বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণে বেশি মনোযোগী থাকার বিষয়ে তাঁর উক্তি ছিল –
‘‘আমি বাংলায় খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমার মূলও এতেই শক্ত।’’
নব্বইয়ের দশকের পর সত্যজিৎ-পরবর্তী বাঙালিকে হলমুখী করে তুলেছিল ঋতুপর্ণের চলচ্চিত্র। মধ্যবিত্ত বাঙালি সেখানে খুঁজে পেয়েছিল তাদের চেনা ছবির গল্প এক অচেনা আঙ্গিকে। কিন্তু এই চেনা গল্পের পরিসরে তিনি তাঁর জ্ঞানচর্চার ওজস্বিতায় লুকিয়ে রাখা, এড়িয়ে চলার ভাষাকে, অবহেলার ছবিকে দর্শকদের সামনে এনে হাজির করতেন, তখন তাঁর সেই সৃষ্টি তৈরি করত এক সামাজিক স্বর। যে-স্বরের স্পর্ধিত কণ্ঠে প্রান্তিক মানুষ আজ মেইনস্ট্রিম সিনেমার বিষয় হয়ে ঘুরে ফিরছে। বাংলা ছবির এই আনকোরা ‘আধুনিক’ দিকের দিকপাল নিঃসন্দেহে ঋতুপর্ণ ঘোষ।
নিজেই নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করেছিলেন ঋতুপর্ণ। লেখক, পরিচালক, অভিনেতা সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সফল বিতর্কিত নায়ক। বাঙালির মনোজগৎকে সেলুলয়েডে বন্দি করে তাঁর সৃষ্টি আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে বাংলা ছবিকে পৌঁছে দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের টেক্সট নিয়ে যখন কাজ করেছেন, সেখানে সহজেই মেলোড্রামা এসে যাওয়ার যে-প্রবণতা থাকে তা খুব চমৎকারভাবে এড়িয়ে গেছেন তিনি। মহাভারত যাতে কেবল ধর্মীয় গ্রন্থ হয়ে পড়ে না থাকে সে-কথা মাথায় রেখে আজকের জীবনের মধ্যে মিশিয়ে তৈরি করেছেন ‘চিত্রাঙ্গদা দ্য ক্রাউনিং উইশ’। যা ভাবতেন তা অন্যকে ভাবাতেও জানতেন। টালিউড থেকে বলিউড, যে-কোনো অভিনেতার কাছ থেকে নিজের দাবিগুলোকে টেনে বার করে আনার ক্ষমতা তাঁর ছিল। তাঁর নিজের ভেতরের মানুষ যেদিন নিজের শরীরের ভাষা বদলাতে চাইল, মন চাইল নিজের শরীর বদল করে কাজল চোখে, কেতাবি জোব্বায় আর পাগড়িতে রঙিন করতে, সেদিন ঝড় উঠেছিল। তিনি তার পরোয়া করেননি। তিনি ঝড়কে সাথি করেছিলেন। আর সেই সঙ্গিনী ঝড়ই মন টেনেছে বাংলা ছবির এই সর্দারকে, নিয়ে গেছে দিগন্তের পারাবারে। পথের নানান বাঁকে চেনা-অচেনা প্রশ্নের মাঝে আমাদের রেখে চলে গেছেন তিনি। ওটাই তাঁর সর্দারি। কিছু চাপিয়ে দিতে চাননি কোথাও, মেনে নয়, মনে নিতে বাধ্য করেছেন। ঝড়ের রাতে শরীর ঢেকেছেন তিনি। বলেছিলেন, কলকাতা তাঁকে কখনই বুঝে উঠতে পারবে না, আবার ভুলতেও পারবে না। কোথাও কোথাও নৈরাশ্য ঘিরে ছিল তাঁকে।
১৯৯২ সালে ‘হীরের আংটি’ দিয়ে সিনে মহলে আত্মপ্রকাশ। ওই একই বছর মুক্তি পেয়েছিল ঋতু-পরিচালিত ‘উনিশে এপ্রিল’। ১৯৯৫ সালে ‘বেস্ট ফিচার ফিল্ম’ হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জিতে নিল তরুণ পরিচালকের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। দৌড় শুরু। বৌদ্ধিক মনন, নান্দনিকতার সিগনেচার মার্ক হয়ে ওঠার লিফটে উঠে পড়লেন ঋতুপর্ণ। এরপর ১৯৯৮-তে ‘দহন’, ১৯৯৯ সালে ‘বাড়িওয়ালি’, ‘অসুখ’, ২০০১ সালে ‘উৎসব’, ২০০৩ সালে ‘শুভ মহরৎ’, ২০০৪ সালে ‘চোখের বালি’, ২০০৫ সালে ‘রেইনকোট’, ২০০৬ সালে ‘দোসর’, ২০০৮ সালে ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’, ২০০৯ সালে ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ২০১০-এ ‘আবহমান’, ২০১২ সালে ‘চিত্রাঙ্গদা’ তাঁর ঝুলিতে এনে দিয়েছে জাতীয় পুরস্কারের সম্মান। এছাড়াও কলাকার পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৯৭ সালে ‘উনিশে এপ্রিল’ ও ২০১১ সালে ‘আরেকটি প্রেমের গল্পের’ জন্য। বম্বে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ১৯৯৯ সালে ‘অসুখ’ ও ২০০২ সালে ‘তিতলির’ জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০০০ সালে বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড এনে দিয়েছে তাঁর পরিচালিত ‘বাড়িওয়ালি’। লোকার্নো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ২০০৩ সালে ‘চোখের বালি’, ২০০৫ সালে ‘অন্তরমহলের’ জন্য সম্মানিত হয়েছেন।পরিচালনার পাশাপাশি দক্ষ অভিনেতা ছিলেন তিনি। আরেকটি প্রেমের গল্প, মেমোরিজ ইন মার্চ ও চিত্রাঙ্গদায় অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষের অনন্য অভিনয়-প্রতিভার সাক্ষী থেকেছেন সিনেমাপ্রেমীরা। এছাড়া দুটি বহুল প্রচলিত বাংলা ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবেও দাপটে কাজ করেছিলেন তিনি।
এক গভীর মমত্ববোধ ও সহানুভূতির জায়গা থেকে নারীর জীবনকে চলচ্চিত্রে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা ছিল অকালেপ্রয়াত নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষের। তাঁর বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে সে-প্রভাব স্পষ্ট। দহন, উনিশে এপ্রিল, চোখের বালি, বাড়িওয়ালি ও মেমোরিজ ইন মার্চ চলচ্চিত্রে ঋতুপর্ণের নারীকেন্দ্রিক চরিত্রগুলো সমালোচকদের দৃষ্টি কেড়েছিল। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সমসাময়িক চলচ্চিত্রনির্মাতাদের মধ্যে তাঁকে ‘ফেমিনিস্ট’ বলা হয়। তাঁর সব চলচ্চিত্রেই সমাজবাস্তবতায় নারীর বিভিন্ন বিষয় ফুটে উঠেছে।
‘উনিশে এপ্রিল’ (১৯৯৪); শ্রীমতী অপর্ণা সেনের দুর্দান্ত অভিনয়ে ফুটে উঠেছে ক্যারিয়ার-সচেতন একজন নারীর কষ্টসহিষ্ণু জীবনের গল্প। স্বামী, ক্যারিয়ার, মেয়েকে নিয়ে পারিবারিক পরিমন্ডলের এক নারীর জীবনের কাহিনি।
‘দহন’ (১৯৯৮); ভারতের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল ‘দহন’। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁর চরিত্রটি মূলত একজন গৃহবধূর। স্বামীর সামনেই স্থানীয় গুন্ডাদের হাতে তাকে অপমান হতে হয়। যখন সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি, সে-সময় একজন স্কুলশিক্ষক এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁর প্রতি।
‘‘ওর ওপর তুমি রাগ কোরো না মা, সবাই তো তোমার মতো হয় না। হয়তো আমরা ওকে ঠিকমতো তৈরি করতে পারিনি।’’ – রোমিতা সম্পর্কে ঝিনুককে বলছিলেন রোমিতার বাবা, ঝিনুক তখন বিধ্বস্ত, আদালতে তার সাক্ষ্য বিফলে গিয়েছে, টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনে রোমিতার ওপর শারীরিক আক্রমণকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, এ ব্যাপারে রোমিতা একেবারেই মুখ খোলেনি। আদালত ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ঝিনুককে এই কথাগুলি বলবেন বলেই অপেক্ষা করছিলেন রোমিতার বাবা। তাঁর কথায় ক্রমাগতই উঠে আসছিল … রোমিতার এমন আচরণের কারণ হিসেবে তার শ্বশুরবাড়ির নিষেধাজ্ঞা বা বিয়ে বজায় রাখার প্রসঙ্গগুলি। মেয়ের ভবিষ্যতের নিরাপত্তাজনিত একটা ভয় সক্রিয় ছিল তাঁর গলার স্বরে।
‘দহন’-এর এই মেয়েটি, রোমিতা, যে প্রায় ট্রমা-য় আচ্ছন্ন ছিল সারা ছবিতে, শুধু তাঁর গোপন অনুভূতিগুলি প্রকাশ করত চিঠিতে, (তেমনই কয়েকটি চিঠিতে গাঁথা গোটা ছবিটা), শেষ চিঠিতে সে এই ভয়টার কথাই উল্লেখ করেছিল, লিখেছিল ‘কত ভয় আমাদের!’ প্রায় একই রকম কথা বলেছিল ঝিনুক, ‘আমার খুব ভয় করছে ঠাম্মি।’ ছবির শেষে এসে। অথচ সারা ছবিতে একা-একা কী লড়াইটা না সে করেছিল! তাঁর ভয় তাঁর প্রেমিকের অসঙ্গত আচরণ নিয়ে, তাঁর আসন্ন বিয়ে বা সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে।
ঠাম্মি, ঝিনুকের বিধবা ঠাম্মি, যিনি রীতিমতো সুস্থ এবং সক্ষম, কিন্তু একা থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে, কারওর সাহায্য না নিয়েই, যিনি ঝিনুকের লড়াইয়ে উচ্ছ্বসিত না হয়ে বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে কম কী আর করত, ওর যা করার ও তাই তো করেছে, এতে বাহাদুরির কী আছে? চোখের সামনে অন্যায় দেখে মেনে নেওয়াটাই স্বাভাবিক, মেরুদণ্ড না থাকাটাই স্বাভাবিক, না কি অন্যায় হওয়াটাই স্বাভাবিক?’ তিনিই বোঝাতে থাকেন তখন ঝিনুককে – তুই কাউকে দেখেছিস যে ঠিক তোর মনের মতন? তোর ঠাকুর্দা চাননি আমি বিএ পাশ করি, যদি আমি ওঁর সমান সমান হয়ে যাই! … জোর করে ক্ষমা করতে হয়নি তাঁকে, নাইতে খেতে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গেল, প্রথমটায় রাগ হয়েছিল, পরে আর রাগটা থাকেনি, তার জন্য জোর করতেও হয়নি। … অমনিবাসের মতো আমাদের জীবন, রাগ দুঃখ ভালবাসা সুখ হাসি কান্না আনন্দ প্রবঞ্চনা শঠতা – কোনও কিছুই আলাদা করা যায় না। আলাদা করে মুহূর্ত বলে কিছু নেই।
সেই একাকী প্রবীণার মুখ থেকে সধবা জীবনে একা-র অস্তিত্ব যে কতখানি অসম্ভব তা শুনতে-শুনতে বলেই ফেলে ঝিনুক, ‘একা চলাফেরার অভ্যেসটা একটু থাক না ঠাম্মি, মোটরবাইকও তো মাঝরাস্তায় খারাপ হয়ে যেতে পারে।’ অফিস-ফেরত মোটরবাইকে ঝিনুককে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার প্রেমিকের। অপেক্ষা না করে ঝিনুক একাই বেরিয়ে পড়ে।
রোমিতাও ছবির শেষে বিদেশে একা-একা পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়, চিঠিতে লেখে ‘আমরা সবাই বড় একা। একা চলার আনন্দটুকু পেতে চাই এবার, একা চলার ভয়টাই এতদিন শুধু পেয়েছি।’ সে সঙ্গী হিসেবে পেতে চেয়েছিল তার বড় জা-কে, রাজি হননি তিনি, নিজের একাকিত্বকে লুকিয়ে রেখে বলেছিলেন, ‘… দু’দিনের স্বাধীনতায় লাভ কী, আবার তো এসে এই হেঁশেলে, তার চেয়ে মানিয়ে যখন নিয়েছি …’
আসলে দু’দশক আগে, নব্বইয়ের দশকের মধ্যপর্বে নিজের এই তৃতীয় ছবিটিতে, একা হয়ে যাওয়ার বিপন্নতার সঙ্গে সঙ্গে তা পেরিয়ে একা বেঁচে থাকার কথাও বলেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। বরাবর ছবিটিকে মেয়েদের সামাজিক বিপর্যয়ের ছবি হিসেবেই দেখা হয়, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তার তলায় বাঁচার আরও কোনও অভিপ্রায় বা আকাঙ্ক্ষাও হয়তো কবুল করতে চেয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। আজ তাঁর জন্মদিনে সে কথাটাই বেশি করে মনে হচ্ছে।
সমাজ-সভ্যতা নিরপেক্ষ ভাবেই ব্যক্তির একটা দায় থাকে ব্যক্তি হয়ে-ওঠার, সে নিজেই নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে-দায় কাঁধে তুলে নেয়। বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আত্মপ্রতিরোধের ভিতর দিয়ে তার অভিপ্রায়ের দিকে সে এগিয়ে চলে। ভুল হোক, ঠিক হোক, যত তুচ্ছ বা সামান্যই হোক, ব্যক্তি তার লড়াইটা জারি রাখে। মুশকিল হল, আমাদের সত্তর-পেরনো স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকেই তো সমষ্টির অন্তর্ভুক্ত পরিচয়টাকে একমাত্র আত্মপরিচয় ঠাউরেছি আমরা। দীর্ঘ পরাধীনতা আমাদের আত্মপরিচয় অর্জনের প্রক্রিয়াটিকে জটিল করে ফেলেছে, স্বাধীনতার জন্য সমষ্টির জাগরণ এতটাই বড় হয়ে উঠেছিল যে, ব্যক্তি হয়ে-ওঠার চেষ্টা সে ভাবে করিনি আমরা। নাগরিক বলে দাবি করি বটে নিজেকে, ব্যক্তি হয়ে-ওঠার মতো, ব্যক্তি-কে বোঝার মতো নাগরিক-মনটাই নেই আমাদের।
তামাম মূলস্রোতের ভারতীয় ছবিতে তারই প্রতিফলন। ব্যক্তির ভিতর যে রহস্যময় মানুষটা বাস করে, তার মনের মধ্যে যে খাড়াই-উতরাই লড়াই, তা প্রায় কখনওই ধরা পড়ে না আমাদের ছবিতে। যে ব্যক্তিকে নিয়ত দেখি ফিল্মে, একটা গড় চেহারা ফুটে ওঠে তার মধ্যে। সিনেমার সেই গড় চেহারার মানুষটির জীবনে কোনও ব্যক্তিগত সংকটই তাকে ব্যক্তিগত ভাবে তত বিপন্ন করে না, যাতে বেদনায়-বিষাদে সে এক জন স্বতন্ত্র মানুষ হয়ে ওঠে।
নির্বোধ অসংবেদনশীল সমাজ নিশ্চয়ই, আমাদের ওপর সেই প্রথাগত সমাজ ভায়োলেন্স নামিয়ে আনছে তা-ও ঠিক, কিন্তু প্রান্তিক মানুষটিও যদি এটা ভেবে বসে থাকে যে, কেউ তাঁকে হাত ধরে পার করে দেবে, বা অপরের সহানুভূতির প্রত্যাশায় সে যদি বসে থাকে, তা হলে সেই জীবনের অধিকারীই সে নয়। কেউই আহা-বেচারি নয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলার কিছু নেই, নিজের পথ-চলার পথ নিজেকেই ঠিক করতে হবে। … এ সব কথা একাধিক টেলিভিশন-সাক্ষাৎকারে বলতেন তখন ঋতুপর্ণ, অকালে চলে যাওয়ার আগে, সালটা সম্ভবত ২০১২।
তিনি বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমসময়ে প্রান্তিক ছিলেন। তাঁর পেলবতা বা লালিত্য তাঁকে ব্রাত্য করে দিয়েছিল, লম্বা চুল আর মোলায়েম গলা বিচ্ছিন্ন করেছিল সমবয়সিদের থেকে, শুধু বদ্ধ ঘরই নয়, স্কুলের কিংবা কলেজের সহপাঠীদের কুরুচিকর অশোভন ব্যবহারেও আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরত যাননি তিনি। কিন্তু নিজের ‘মার্জিনালাইজেশন’টাকে তুচ্ছ করার শক্তি ছিল তাঁর অপরিসীম।
‘বাড়িওয়ালি’ (১৯৯৯); কিরণ খের দুর্দান্ত এক বাড়িওয়ালির চরিত্রে অভিনয় করে সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছিলেন। একজন বাড়িওয়ালির চলচ্চিত্রে অভিনয় আর তাঁর বাড়িওয়ালি হয়ে-ওঠার পেছনের কাহিনি দারুণভাবে চিত্রায়ণ করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ।
‘চোখের বালি’ (২০০৪); রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চোখের বালি উপন্যাস অবলম্বনে ঋতুপর্ণ নির্মাণ করেছিলেন চোখের বালি। ঐশ্বরিয়া রাই ও রাইমা সেনের অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে গ্রামের এক নারীর জীবন। অল্পবয়সে বিধবা নারীদের মর্মযন্ত্রণার কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেভাবে তাঁর উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, তার ঠিকঠাক চিত্রনাট্যরূপ দিতে চেষ্টা করেছেন ঋতুপর্ণ।
‘নৌকাডুবি’ (২০১০); রাইমা সেন ও রিয়া সেনকে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৌকাডুবি উপন্যাসের চিত্রায়ণ করেছিলেন ঋতুপর্ণ। নারী-হৃদয়ের কোমল-কঠোর রূপ তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন পাশাপাশি।
‘রেইনকোট’ (২০০৫); হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ও অজয় দেবগন। ভালোবাসা না পাওয়া যন্ত্রণাকাতর নারী আর সংসারের জাঁতাকলে হাঁসফাঁস করতে থাকা নারীর মর্মযন্ত্রণাকে ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন ঐশ্বরিয়া রাই।
বিভিন্ন সঙ্গে-অনুষঙ্গে নিঃসঙ্গ হতে-হতে, অপমান পেতে-পেতে, সর্বোপরি সামাজিক প্রবঞ্চনার পর প্রতিটি মানুষের কাছেই তাই রবীন্দ্রনাথ থেকে যান, মনে করতেন ঋতুপর্ণ, বলেছেন, এখান থেকেই হয়তো একটা লড়াই শুরু করা যায়, সেই লড়াইয়ের পর কোথাও একটা আলো আসে …
‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে
আমার ভয়ভাঙা এই নায়ে।’…
গানটা অত্যন্ত প্রিয় ছিল ঋতুপর্ণের।
ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুদিন তাই শুধু স্রেফ নস্ট্যালজিয়ায় গা সেঁকা নয়। বরং এই চর্চার দহন থেকে বহুমুখিনতার উৎসবে পৌঁছলেই হয়তো তাঁকে মৃত্যুদিনে একটা ফুল হাতে তুলে দেওয়া যাবে।
■ এক নজরে ঋতুপর্ণ ঘোষ ~
জন্ম: ৩১ আগস্ট, ১৯৬৩।
পড়াশোনা : সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্যারিয়ার: বিজ্ঞাপন জগতে প্রথম কর্মজীবন শুরু।
■ ফিল্মোগ্রাফি ~
১৯৯২: হীরের আংটি।
১৯৯৪: উনিশে এপ্রিল (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ পরিচালক এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী – দেবশ্রী রায়)।
১৯৯৭: দহন (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ স্ক্রিপ্ট, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী – ইন্দ্রাণী হালদার, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত)।
১৯৯৯: বাড়িওয়ালি (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী – কিরণ খের, শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী – সুদীপ্তা চক্রবর্তী)।
১৯৯৯: অসুখ (জাতীয় পুরস্কার – বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ সিনেমা)।
২০০০: উৎসব (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ পরিচালক)
২০০২: তিতলি।
২০০৩: শুভ মহরৎ (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী – রাখী গুলজার)।
২০০৩: চোখের বালি (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র)।
২০০৪: রেইনকোট (জাতীয় পুরস্কার – হিন্দি ভাষায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র)।
২০০৫: অন্তরমহল।
২০০৬: দোসর (বিশেষ জুরি পুরস্কার – প্রসেনজিৎ)।
২০০৭: দ্য লাস্ট লিয়ার (জাতীয় পুরস্কার – ইংরেজি ভাষায় শ্রেষ্ঠ ছবি)।
২০০৮: খেলা।
২০০৮: সব চরিত্র কাল্পনিক (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র)।
২০১০: আবহমান (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ ছবি, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী)।
২০১০: নৌকাডুবি।
২০১২: সানগ্লাস।
২০১২: চিত্রাঙ্গদা (বিশেষ জুরি পুরস্কার, অভিনেতা – ঋতুপর্ণ ঘোষ)।
২০১৩: সত্যান্বেষী (অসমাপ্ত)।
■ অন্যান্য পুরস্কার ~
১৯৯৯ : অসুখ ছবির জন্য বম্বে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ পুরস্কার।
২০০০: বাড়িওয়ালি ছবির জন্য বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে এনইটিপিএসি পুরস্কার।
২০০২: তিতলি ছবির জন্য বম্বে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ পুরস্কার।
■ অভিনেতা ঋতুপর্ণ ~
২০১১: আর একটি প্রেমের গল্প।
২০১১: মেমোরিস ইন মার্চ।
২০১২: চিত্রাঙ্গদা।
(তথ্যসূত্র:
১- আনন্দলোক পত্রিকা, ঋতুপর্ণ ঘোষ বিশেষ সংখ্যা, ১২ই জুন ২০১৩ সাল।
২- ঋতুপর্ণ ঘোষ বিশেষ সংখ্যা, সংবাদ প্রতিদিন, রবিবার, ৯ই জুন ২০১৩ সাল।
৩- ফার্স্ট পার্সন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, দে’জ পাবলিশিং।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত