দিল্লীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা করোনা আক্রান্ত রোগী প্লাজমা প্রয়োগে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেই দেশ জুড়ে প্লাজমা দিতে এগিয়ে আসেন করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা একাধিক রোগী। সেই মতো গতকাল প্লাজমা দেন করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা তবিলিঘি জামাতের একাধিক সদস্য। তবে আজ হঠাৎই তবলিঘিদের এই প্লাজমা দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেন মোদী সরকারের মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি। ঘটনাচক্রে তার পরেই প্লাজমা পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক বাড়িয়ে দিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক। গোটা বিষয়টিতে সরকারের সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাব দেখছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, এত দিন যে প্লাজমা পরীক্ষাকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) ছাড়পত্র দিচ্ছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখ খোলার পরেই কেন তারা সুর বদলাল? জবাবে মুখে কুলুপ স্বাস্থ্যকর্তাদের।
প্লাজমা থেরাপি পদ্ধতিতে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর রক্ত থেকে প্লাজমা (রক্তরস) নিয়ে তা কোনও আশঙ্কাজনক রোগীকে দেওয়া হয়। সম্প্রতি দিল্লীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল দাবি করে, করোনা সংক্রমণে ভেন্টিলেশনে চলে যাওয়া রোগী প্লাজমা প্রয়োগে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর পরে নড়ে বসে একাধিক হাসপাতাল। প্লাজমা দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয় সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীদের কাছে। গতকালই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা লখনউয়ের এক চিকিৎসক নিজে প্লাজমা দান করে অন্যদেরও এগিয়ে আসতে বলেন। প্লাজমা দেন দিল্লীর নিজামুদ্দিনের জমায়েতে এসে আক্রান্ত হওয়া ১০ তবলিগি সদস্য। এ নিয়েই আজ তবলিগিদের তীব্র সমালোচনা করেন নকভি। টুইট করে বলেন, ‘ওই তবলিঘিরা করোনা ছড়িয়ে পাপ করে এখন নিজেদের করোনা যোদ্ধা বলে দাবি করছেন। অদ্ভুত।’
নকভির বক্তব্য ঘিরে মুসলিম সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। সরব হন নেটিজেনদের একাংশও। তার মধ্যেই বিকেলে নিত্যদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল হঠাৎ প্লাজমা পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর কোনও প্রমাণিত চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। আইসিএমআর কেবল গবেষণা ও পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য প্লাজ়মা প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়ে থাকে।’ লবের দাবি, সঠিক ভাবে চিকিৎসা না হলে এতে প্রাণ যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বুঝিয়ে দেন, আইসিএমআরের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া এ ধরনের কোনও পরীক্ষা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চোখে বেআইনি বলে গণ্য হবে। কিন্তু এত দিন কেন সম্মতি দেওয়া হচ্ছিল? এই প্রশ্নে নীরব স্বাস্থ্যকর্তারা। তবলিঘিদের প্লাজমা দেওয়া ও প্লাজমা পরীক্ষা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া— দু’টির মধ্যে আপাত দৃষ্টিতে কোনও সম্পর্ক না থাকলেও একে বিজেপির মুসলিম বিরোধী মনোভাবের ফলই বলছেন বিরোধীরা।