লকডাউনের জেরে স্তব্ধ গোটা দেশ। সেই মতো স্টুডিয়োপাড়ায় বহু দিন শোনা যায়নি, ‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন’। কিন্তু এই দুঃসময়ে ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা কেমন আছেন! প্রযোজক, পরিচালক, টেকনিশিয়ান— কার্যত ‘বেকার’ এখন। লকডাউনে নতুন চিত্রনাট্য লিখে ফেলেছেন অনেকেই। কিন্তু পরিচালনা করবেন কিভাবে।
উইন্ডোজ-এর প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বললেন, “সব চেয়ে ভয় করছে সিঙ্গল স্ক্রিনের মালিকদের নিয়ে, যাঁদের কোনও গিল্ড নেই। সিনেমা হলে আলো দেখাত যে ছেলেটি, এই সময় তাঁর কী ভাবে চলছে, আমরা কেউ খোঁজ নিয়েছি কি? সিঙ্গল স্ক্রিনগুলো তো এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই লকডাউনের পরে মনে হয় তালা পড়বে আরও বেশ কয়েকটায়। সিনেমা দেখার পরিসর আরও বেশ খানিকটা কমে যাবে এ বার।”
লেখক প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “টেলিভিশনই পারবে দুর্দিনে ইন্ডাস্ট্রির গতি ফেরাতে। প্রযোজক, শিল্পী, টেকনিশিয়ান, সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। দরকার পড়লে সিনিয়র আর্টিস্টদের পারিশ্রমিক কমে যাবে। সেটা মেনে নিতে হবে। প্রযোজক মানেই তাঁর অনেক টাকা এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে একে অন্যকে সাহায্য করতে হবে। মনে রাখতে হবে বিনোদন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না”৷
অনিশ্চয়তা চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে ফেলে দেবে ইন্ডাস্ট্রিকে, মনে করেন পরিচালক অরিন্দম শীল। “বাংলা চলচ্চিত্রে অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি। ন্যাশনাল মাল্টিপ্লেক্সের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি দীপাবলির আগে কিছু স্বাভাবিক হবে বলে তাঁরা মনে করছে না।”
ছবি মুক্তি তো পিছিয়েছেই। ১০ এপ্রিল মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল তাঁর ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’। রাজ বলছিলেন, “এমন একটা পরিস্থতির মধ্যে রয়েছে, যা আগে কখনও দেখিনি। লকডাউন উঠলে ইন্ডাস্ট্রির কী হাল হবে, সত্যিই তা জানি না। লকডাউন যে আদৌ কবে শেষ হবে তা বুঝতে টেলি ইন্ডাস্ট্রি হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, কিন্তু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কী হবে, জানি না। আমার দু’টো ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’ এবং ‘হাবজি-গাবজি’-র টাকা আটকে রয়েছে, প্রচুর টাকা ইনভেস্ট করেছি সেখানে। জানি না কী হবে!”
প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “১৮ মার্চ থেকে কাজ বন্ধ। দেখতে দেখতে ১৭ এপ্রিল হয়ে গেল। প্রায় এক মাস সবাই বসে। ১৮ মার্চ অবধি যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরা সবাই পারিশ্রমিক পেয়ে গিয়েছেন, বা এ বার পেয়ে যাবেন। কম পারিশ্রমিক পান এমন টেকনিশিয়ানরাও টাকা পেয়েছেন। ঠিক হয়েছে জুনিয়র টেকনিশিয়ান যাঁরা রয়েছেন তাঁদের টাকাটা চ্যানেল দেবে। কিন্তু যাঁরা সিনিয়র টেকনিশিয়ান, তাঁদের রোজগার কিন্তু অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।”