কথায় আছে, একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। ঠিক একই হাল এখন ভারতীয় অর্থনীতির। একে তো মন্দার কোপে ভুগছিল বাজার, এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার ছোবল। এবার করোনা ভাইরাসের জেরে বিশ্ব অর্থনীতির একটা বড় অংশে মন্দা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে বলে জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। তবে একই সঙ্গে শীর্ষ ব্যাঙ্কের দাবি, ভারতীয় অর্থনীতির ভিত শক্ত। এমনকী ২০০৮ সালের বিশ্ব জোড়া মন্দার পরবর্তী সময়ের চেয়েও এখন তা বেশি মজবুত।
প্রসঙ্গত, গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের যুক্তি, করোনা অর্থনীতিকে ধাক্কা দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কেটে যাবে। আর আরবিআই গভর্নরের আপাত স্বস্তির এই বাণীতে হাসি ফুটেছে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মুখে। শক্তিকান্তের বক্তব্যকে তিনি স্বাগতও জানিয়েছেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাই মনে করাচ্ছেন, অর্থনীতির ভিত মজুবত বলে জানালেও করোনার জেরে কোথায় কোথায় বিপদ ঘনাচ্ছে, তা-ও স্পষ্ট বলেছে আরবিআই। যা নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের অন্দরেও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।
কারণ, শীর্ষ ব্যাঙ্কের মতে, পরিসংখ্যান দফতর চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিলেও, করোনার ফলে অর্থনীতি ধাক্কা খাওয়ায় আরও কমবে তা। বাণিজ্য, পর্যটন, বিমান, হোটেল, নির্মাণ ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষি ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই সেই লক্ষণ স্পষ্ট। কোথায় তার প্রভাব কতটা, সেটা নির্ভর করছে করোনার জের কতদিন থাকবে এবং তা কতখানি ছড়াবে তার উপরে। তার ওপরে দেড় মাসের মধ্যে তৃতীয়বার পূর্বাভাস ছাঁটাই করে মুডিজ বলেছে, ২০২০ সালে ভারতের বৃদ্ধির হার ২.৫ শতাংশে নামবে।
শুধু তাই নয়। আর এক রেটিং সংস্থা ইক্রার হিসেব, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে বৃদ্ধি তলিয়ে যাবে ২ শতাংশে। এই পরিস্থিতিতে রাজকোষ ঘাটতির কথা মাথায় না-রেখে সঙ্কট মোকাবিলা করা উচিত বলে মত অর্থনীতিবিদ এম গোবিন্দ রাওয়ের। তাঁর যুক্তি, অর্থ মন্ত্রকের উচিত রাজ্যের ঘাটতি ০.৫ শতাংশ বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া। যাতে তারা আরও অর্থ ঢালতে পারে। এদিকে, শেয়ার বাজার মার্চেই পড়েছে প্রায় ১০,০০০ পয়েন্ট। ডলারের নিরিখে টাকা তলানিতে। আর তাই শক্তিকান্ত দেশের অর্থনীতি নিয়ে যে দাবি করছেন, তা আশ্বস্ত করতে পারছে না অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের।