ঠিকই তো। উনি কয়েকদিনে যা যা করছেন তা কাউন্সিলরদেরই তো কাজ। প্রশাসনিক প্রধানের এসব সাজে? প্রশাসনিক প্রধান তো টেলিপ্রম্পটারের দিকে তাকিয়ে প্রাইম টাইমে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন বা পৃথিবীর সব কিছু নিয়ে বললেও ক্যাডারদের দাঙ্গা করতে বারণ করেন না, প্রশাসনিক প্রধান তো সংস্কৃতি- চত্বরে বসে অসময়ের কবিতা বা চিকিৎসা শাস্ত্রে কিউবার ভূমিকা নিয়ে নিবন্ধ লেখেন।
আলবাত রাজনীতি করছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রতিদিন, প্রতিটা বাজারে গিয়ে রাজনীতি করছেন। যেভাবে কেউ কেউ রজনীতি করে বাজারে- হোয়াটসঅ্যাপে টানা বিষ ছড়িয়ে, টানা ভয় পাইয়ে দিয়ে, তুম খতরে মে হো! যেভাবে কেউ কেউ বিরোধিতা করবো বলেই বিরোধী রাজনীতি করেন, দাঙ্গার পরেই অন্যান্য জায়গার মানুষ ক্ষেপিয়ে দিতে মসজিদ ধ্বংসের ভিডিও ফরোয়ার্ড করেন। ওটাও রাজনীতিই তাই না?
রাজনীতি তো এটাও যে “দেখো বাংলায়, ভারতে কিচ্ছু নেই কিন্তু চীন, কিউবা কি ভালোটাই না করছে সবেতে।” রাজনীতি তো এটাও, যখন সত্যি দুবার সুযোগ আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজের রাজনীতির কথা ছড়িয়ে দিতে, তখন মতাদর্শের ছেঁদো যুক্তি সাজিয়ে আদপে লবিবাজি করে পালিয়ে আসতে। রাজনীতি ঠিক কোনটা আমরা চাই পালস চেনেন এখনো?
এই যে এক ষাটোর্ধ মহিলা পাগলের মতো এপ্রান্ত ওপ্রান্ত করে যাচ্ছে, বোকার মতো প্রকাশ্যে বলে বেরাচ্ছে “মানুষ বাঁচুক। যতো মানুষ বাঁচবে আমার লাভ”৷ হ্যাঁ এটা রাজনীতিই। এটা রাজনীতিই যখন সে নিজে ইটকে চকের মতো করে ব্যবহার করে গোল আঁকেন social distancing বোঝাতে। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের একটা গোল আঁকা এক লাখ লোককে বুঝিয়ে দেওয়ার সামিল। সব্জি বিক্রেতার আঁকা গোল দিদিমনির মতো কেটে দেন, ঠিকটা বুঝিয়ে দেন। ওটা গ্রাসরুটের রাজনীতি। ঘামের গন্ধ আছে ওতে। মোটা মোটা বই এর ভাঁজে আর সেই আদ্যিকালের গুরুগম্ভীর লেকচার ঝাড়াতে নেই এই আটপৌরে গল্প।
আলবাত এটা রাজনীতি। দু হাত তুলে আশীর্বাদ করে মানুষ এই রাজনীতি দেখলে। যেরকম ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলো যখন চাল-ডাল তোলে গরিব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেবে বলে, যখন নিজের ফোন নম্বর বিতরণ করে সাহায্যে এগিয়ে এসে, সেটাও রাজনীতি। সেটা ও আপনার গাঁথনি দিয়ে রাখা আগামীর সমর্থন পেতে৷
ওই যে প্রথম ধাপে ঢলঢলে পাজামা, সুতির পাঞ্জাবি আর ঝোলাটা নেন আর মোটা কালো ফ্রেমের চশমাটা পরেন আর তারপর মাতব্বর হয়ে গেলে ফিনফিনে ধুতি আর ধবধবে পাঞ্জাবি – ওটাকে বলে Optics! বৈশিষ্ট্য – নির্মাণ! মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ও এগুলো Optics building! মানুষ বাঁচলে ভোট আসবে। আগে মানুষদের বাঁচাতে হবে।
মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে যদি রোটি কপড়া মাকান দেন, যদি মানুষের ভালো করেন অযাচিত, যদি কি কি করছেন তার রিপোর্ট প্রতি মাসে দেন আর তার বদলে ভোট চাইতে আসেন, সেই রাজনীতি ভালো। তার জন্যই আমরা মমতা বন্দোপাধ্যায় ও তার গোটা মন্ত্রীসভাকে ট্যাক্স এর টাকাতে বেতন দিই। বেতন হিন্দু মুসলমান করতে দিই না, বেতন মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করবে বলে দিই না, বেতন “গরুর দুধে সোনা আছে, গোমূত্র খেলে করোনা সেরে যায়, শনির গ্রাসে করোন হচ্ছে” বলার জন্য দেওয়া হয় না।
কাল যদি এই ষাটোর্ধ মহিলা অক্লান্ত পরিশ্রম, খাটাখাটনির পরে আমাদের কাছে ভোট চাইতে আসেন, তাকে ভোট দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের রাজনীতি হবে। ঘরে বসে বসে খালি চাঁদসদাগরের ইগো নিয়ে চ্যাং মুরি কানিকে সমালোচনা করা মানুষ আর ভালো চোখে নেয় না। মানুষ সুভাষ চক্কোত্তি বা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে ও এই কারণেই পছন্দ করতো। কাল গোটা বাংলার সমস্ত সেপটিক ট্যাংক ফেটে গুয়ের বন্যা হলে ও দেখবেন সবার আগে এরা পাঁচটা লোকাল ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে গু পরিস্কার করছেন, ঝাঁটা দিয়ে লোকের বাড়ির দালান পরিস্কার করছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায় বেঁচে গেছেন নিজের দল করেছেন বলে। কান্তি বাবু এখনো জেলার নেতা পরিচয়েই বাঁচেন৷ নিকারাগুয়া বা রাশিয়ার চেয়ে কাউন্সিলরের মতো রাজনীতি করেন যে এখনো৷
দিদি আপনি যেটা করছেন, করে যান। বিপদে মানুষ লোক চেনে। ভরা পেটে পা নাচাতে নাচাতে ধর্ম চেনে। ধম্ম কম্ম হবে খানে৷ আগে মানুষদের বাঁচান প্লিজ। আটপৌরে থেকে, হাজার ‘পবলেম’ নিয়েই আপনি সুস্থ থাকুন। এই রাজনীতিটাই সব্বাই করুক৷ রিলিফ পাক আম আদমি!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত