গতকাল তাঁর একসময়ের কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন পিকে’র অন্যতম প্রিয় ছাত্র শ্যাম থাপা। তিনি বলছিলেন, কোচ হিসেবে প্রদীপদাকে প্রথম পাই সত্তর সালে ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসে। ১৯৭৪ সালে আমি মুম্বইয়ের মফতলালে খেলতাম। মরসুম শেষ হওয়ার পরে প্রদীপদার ফোন পেলাম। ইস্টবেঙ্গল তখন টানা পাঁচ বছর লিগ জিতে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের রেকর্ড স্পর্শ করেছে।
সতেজ স্মৃতিতে ভর করে শ্যাম ফিরে গেলেন তাঁর সোনালী সময়ে। বলছিলেন, ‘সেবার লিগ জিতলেই প্রদীপদার কোচিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়বে ইস্টবেঙ্গল। আর সে বারই হাবিব-আকবর ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে গেল মহমেডানে। প্রদীপদা সে দিন ফোনে বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গল নতুন রেকর্ড করতে চাইছে টানা ষষ্ঠ বার লিগ জিতে। সেটা তোমাকে না পেলে করতে পারব না। এ বার ইস্টবেঙ্গলে চলে এসো। তোমাকে আমি তারকা বানাব। প্রদীপদার সেই আন্তরিকতাই আমাকে টেনে এনেছিল ইস্টবেঙ্গলে।’
নিজের জবানিতে শ্যাম বললেন, ‘সে বার কলকাতায় খেলতে এসে দেখলাম, ফুটবলাররা অনেকেই চাকরি করে। অনুশীলন হলেই সতীর্থরা অফিস ছোটে। একদিন প্রদীপদা আমাকে বললেন, তোর তো চাকরি নেই, চল শ্যাম, ওরা চাকরি করুক। আমি তোকে বড় ফুটবলার বানাই। এই বলে আমাকে নিয়ে বিশেষ অনুশীলন করাতেন। তার মধ্যে ছিল বল নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ড্রিবল। স্পট জাম্প। এমনকি সেই ব্যাককভলিও। রোজ বলতেন, শ্যাম মাঠে নেমে প্রমাণ করো, তুমি গোর্খা যুবকদের কাছে এক আদর্শ। রোজ কথাটা বলতেন তিনি। আর আমার মধ্যে ভাল খেলার জেদ বাড়ত।’
সেইসময় পঁচাত্তরের লিগে ইডেনে মোহনবাগানের চার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোল করেছিলেন শ্যাম থাপা। পরে তিনি বলেছিলেন, সেটা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম স্মরণীয় গোল। আর তার পরে সেই ঐতিহাসিক পাঁচ গোলের ম্যাচ। সেই ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন শ্যাম। এমনকি পেনাল্টি নষ্ট না করলে সেদিন হ্যাটট্রিকও করতে পারতেন শ্যাম থাপা। তিনি বলেছিলেন, ‘ঐতিহাসিক সেই ম্যাচ ৫-০ জেতার পরে প্রদীপদাই গালে চুমু দিয়ে বলেছিলেন, কী করলে তুমি শ্যাম? পেনাল্টি থেকে গোলটা পেলে বড় ম্যাচে প্রথম হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটা তুমিই করতে।’