ভগবানকে কিরকম দেখতে? আল্লাহ কে? God কে কখনো দেখেছেন? বিপর্যয়ে প্রার্থনা করে, Holy water খেয়ে, বিশাল পাথরের চারদিকে চক্কর কেটে, প্রসাদ খেয়ে দেখা পেয়েছেন? আমি পেয়েছি। আমি দেখেছি ওদের।
তিন মাসের যুদ্ধ শেষ হবার পরে, চায়নার উহান প্রদেশের শেষ অস্থায়ী হাসপাতালের শেষ রোগিটি যখন বাড়ি ফিরে গেল, বেডগুলো খাঁ খাঁ করছিল। ডাক্তারবাবু, যে বাকিদের মতোই এই তিনমাস ছুটি তো ছেড়ে দিন, ব্রেক ও নেয়নি ২০ঘন্টা করে কাজের মাঝে, সে ধুপ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বিশ্রামের সময় এসেছে! সাফল্য এসেছে। এবার সত্যি ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন।
ওদিকে আরো এক ডজন ডাক্তার যারা দিন রাত এক করে চিকিৎসা করে গেছিল এই তিন মাস, বাড়ি ঘর ছেড়ে টানা হাসপাতালে থেকে গেছিল, ২৪ ঘন্টা জীবানুর মাঝে থেকে কোরোনাকে আটকাতে লড়ে গেছিল, তারা এ যাবত একবার ও মাস্ক খোলেনি। কেউ ওদের দেখতে পায়নি। যারা রোগিদের জীবন বাঁচালো তাদের মুখ দেখা যায় নি। এবার ছেলেমেয়েরা যেভাবে টিকটকে ভিডিও বানায়, ওরা ও সেভাবে ভিডিও বানালো। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে মুখোশ খুলে ফেলতে থাকলো। ভগবান কীরকম দেখতে সেটা দেখা দরকারী। অভি তো পার্টি শুরু হই হে!
ভারতে ও ডাক্তারেরা এই দেশ ওই দেশ করে বেরাচ্ছে। মেডিক্যাল কিট নিয়ে প্লেনে করে চলে যাচ্ছে ইরানে, ইটালিতে, চায়নায়। ওখানেই পরিক্ষা করছে, ঘরে ফিরিয়ে আনছে মানুষদের। শুধু ভারত না বিভিন্ন দেশের মানুষকে। তাদের না না ভাষা, না না সমস্যা। ঠান্ডা মাথায় সব শুনে, চিকিৎসা করছেন, হাজার আবদার, অনুযোগ শুনে পরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু কী ডাক্তার? শুধু কী একটা দেশের চিকিৎসক? গোটা পৃথিবী জুড়ে যারা সেনাবাহিনীর মতো এই যুদ্ধ লড়ছে তারা স্বাস্থ্যকর্মী। চিকিৎসা শাস্ত্রের সাথে যুক্ত মানুষ। ডাক্তার, প্যারামেডিক, জুনিয়র ডাক্তার, নার্সিং স্টাফ, আয়া। এরা সবাই জেনারেল, মেজর, লেফটেন্যান্ট, গ্রুপ ক্যাপ্টেনের মতো লড়ে যাচ্ছে। কালাশনিকভ না, স্টেথোস্কোপ আর মেডিক্যাল কিট হাতে।
করোনা ভাইরাস মারণ আকার নিতেই দেখা গেল এক এক করে ধর্মীয় স্থানগুলো বন্ধ হতে থাকলো। আর কেউ শান্তির জল খেতে বলছে না, ভীড় ঠেলে এক ঝলক দেবতা দেখতে চাইছে না, দেবতা, দেবদূত বা পুরোহিত ও সাধারণ মানুষ, সবাই মাস্ক পরে। অসহায় লাগতো এদের সবার, যদি না চিকিৎসাবিজ্ঞানী আর স্বাস্থ্যকর্মীরা এগিয়ে আসতো।
পরের বার সামান্য কোন কারণে ডাক্তারকে চড় মারার আগে, রোগী মৃত্যু হলে হাসপাতালে আগুন জ্বালানোর আগে মাথায় রাখবেন এই পৃথিবী থেকে ডাক্তাররা ভ্যানিশ হয়ে গেলে কী কান্ডটাই না হবে! তখন আল্লাহ, গড, ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে ও চিকিৎসা পাবেন না। প্রাচীন পন্থায় ফিরে যেতে হবে। বাঁচলে তাক, মরলে তুক।
গোটা পৃথিবীতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে যে ডাক্তার, প্যারামেডিক, জুনিয়র ডাক্তার, নার্সিং স্টাফেরা, তাদের একবার মাথা নিচু করে দু হাত জোড় করে নমস্কার জানান। নমস্কারই। পৃথিবী হ্যান্ডশেক করা ভুলতে শিখছে। মানতে শিখছে, ডাক্তাররাই মনুষ্য রুপি দেব-দেবী। ১৮-২০ঘন্টা করে কাজ করে, মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন, খালি পেটে সারাদিন রোগী দেখার পরে ফেসবুক খুললে ওদের একটা থ্যাংক ইউ অন্তত প্রাপ্য।
Thank You!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত