দিল্লী হিংসায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০। জখম ২০০ জনেরও বেশি। গত পাঁচদিন ধরে পেট্রল-বোমা ছুঁড়ে, গাড়ি জ্বালিয়ে তাণ্ডব চলছিল রাজধানীর রাস্তায়। এবার অ্যাসিড নিয়েও পথে নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। মুস্তাফাবাদের অনেক জায়গায় অ্যাসিড হামলার খবর মিলেছে। অনেকের চোখ-মুখ, গোটা শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে অ্যাসিডে। দিল্লির তেগ বাহাদুর হাসপাতালে অ্যাসিড ক্ষত নিয়ে ভর্তি অনেকে। অ্যাসিড হামলায় চারজন হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। জ্বালাপোড়া ক্ষত নিয়ে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীর মতো একই পরিস্থিতি কারওয়াল নগরেও।
তাণ্ডবের ভয়াবহতা এখনও ভুলতে পারেননি কেউই। ‘দরজা জানলা ভাল করে বন্ধ করেছিলাম। দুই মেয়েকে নিয়ে আমি একা। তখনই হানা দেয় ওরা’, আতঙ্কের রাত যেন ফিরে ফিরে আসছে যুবতীর কাছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লীর বাসিন্দা ওই যুবতী জানিয়েছেন, কীভাবে উন্মত্ত বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন তিনি। বাঁচাতে পেরেছিলেন দুই মেয়েকেও।
“কারাওয়াল নগরের একটি এনজিও-তে কাজ করি। সন্ধের আগেই বাড়ি ফিরে আসি সেদিন। বাড়িতে ছোট দুই মেয়ে একা। দেরি করিনি,” বলেছেন যুবতী। তাঁর বাড়ি হিন্দু মহল্লায়। আশপাশে দু’একঘর মুসলিমও আছে। তাদের মধ্যে কোনও বিবাদ নেই। বরং সকলেই একে অপরকে সতর্ক করছে সবসময়।
যুবতী বলেছেন, রাত নামতেই বাড়ির বাইরে ফের দাঙ্গাবাজদের তাণ্ডব শুরু হয়। বাড়ি থেকে তাঁকে বেরিয়ে আসতে বলে বিক্ষোভকারীরা। এরপরে দরজা ভাঙতে শুরু করে তারা। যুবতী বলেন, “দোতলা বাড়ির বারান্দা দিয়ে কাপড় ঝুলিয়ে পালাবার চেষ্টা করি। বারান্দার গ্রিলে জড়িয়ে যায় আমার দোপাট্টা। দুই মেয়েই আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল। কিন্তু ওরা বেপরোয়া। ততক্ষণে উঠে এসে আমাদের জামাকাপড় ধরে টানাটানি শুরু করে।” টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়ার চেষ্টা হয়েছিল, বলেছেন যুবতী। ওদের উদ্দেশ্য তখন খুব স্পষ্ট। জামাকাপড় টেনে খুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, মারধরও করছে। কোনওরকমে তাদের হাত ছাড়িয়ে দুই মেয়ের হাত ধরে দৌড় শুরু করি।
“পাশের মহল্লায় কয়েকঘর মুসলিম প্রতিবেশীর বাস। একজনকে চিনতাম আয়ুব আহমেদ। মুদির দোকান আছে। তাঁর বাড়িতে গিয়েই আশ্রয় নিই,” যুবতী বলেছেন, মুসলিম মহল্লায় ঢুকতে দেখেই পিছু ধাওয়া করা ছেড়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এক মুসলিমই প্রাণ বাঁচায় সেদিন। যুবতী বলেছেন, খাবার দেন আয়ুব চাচা। রাতটুকু মাথা গোঁজার জায়গাও দেন। মাথায় হাত রেখে প্রাণ বাঁচানোর আশ্বাসও দেন।