আর বাড়ি ফেরা হয়নি ছোট্ট ঋষভের। ৮ দিন পর শ্রীরামপুরের বাড়িতে নিয়ে আসা হল তার নিথর দেহ। ১৪ ফেব্রুয়ারি পোলবা দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ঋষভকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। দীর্ঘ ৮ দিনের লড়াই-এ শেষে আজ ভোরেই মারা যায় হয় ঋষভ। স্বাভাবিকভাবেই শোকের ছায়া খুদের এলাকায়। তাকে শেষ দেখা দেখতে বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। ময়না তদন্তের পর সাড়ে বারোটা নাগাদ খুব কম সময়ের জন্য ঋষভের মরদেহ নিয়ে আসা হয় শ্রীরামপুরের বাড়িতে। তবে বেশীক্ষণ রাখা সম্ভব হয়নি তার দেহ। ভিড়ের মাঝেই ফের বের করে নিয়ে যাওয়া হয় ঋষভকে। সদ্য সন্তান হারানো বাবাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, তাঁর বাবার মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি হৃদয় বিদারক ঋষভের চলে যাওয়া।
মাত্র ৬ বছর বয়সি স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যু মানতে পারছেন না তৃণমূল সাংসদও। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, “ঋষভের চলে যাওয়ার খবর শুনে বাবার মৃত্যুর চেয়েও বেশি দুঃখ পেয়েছি।” পুলকার চালকদের উদাসীনতাতেই স্কুলপড়ুয়া ঋষভ জীবনযুদ্ধে হার মানল বলেই অভিযোগ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
প্রায় প্রতিদিনই ঋষভের শারীরিক অবস্থায় খোঁজখবর নিতেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ভোরে ঋষভের মৃত্যুসংবাদ শুনেই এসএসকেএমে পৌঁছন শ্রীরামপুরের সাংসদ। তাঁকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ঋষভের বাবা। সন্তান হারানোর শোকে আকূল তিনি। সাংসদকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন সন্তোষ সিং।
১৪ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ঋষভের পুলকার। পোস্টে ধাক্কা মেরে নয়ানজুলিতে উলটে যায় গাড়িটি। স্থানীয়রা উদ্ধার করে নিয়ে যায় চুঁচুড়ার ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, জখম ঋষভ এবং দিব্যাংশুর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক, তাই তাদের এসএসকেএমে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোই ভাল। কিন্তু হুগলি থেকে কলকাতার দূরত্ব কম নয়। তাই চাইলেই তড়িঘড়ি তাদের এসএসকেএমে নিয়ে আসা কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দুই খুদের পরিবার। ঋষভের বাবা সন্তোষ সিং শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর। সে সূত্রে ছেলেকে কলকাতার হাসপাতাল স্থানান্তরিত করার কথা জানান হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। তিনি কথা বলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। রাজ্য সরকারের তৎপরতায় গ্রিন করিডরের মাধ্যমে মাত্র ৪৮ মিনিটে ছোট্ট ঋষভ পৌঁছয় এসএসকেএমে। তারপরই শুরু হয় চিকিৎসা।
গতকাল থেকেই অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয় ঋষভের। মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর হতে শুরু করে। রাতে কার্যত যুদ্ধ চালিয়েছিলেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। দেওয়া হচ্ছিল বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধও। খবর দেওয়া হয় পরিবারকেও। কিন্তু আজ ভোরে সবার সমস্ত চেষ্টা বিফল করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ক্লাস ২-এর খুদে। আজ বাড়িও ফিরল। তবে নিথর হয়ে।