গত বছর ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেয় মোদী সরকার। তারপর প্রায় সাড়ে ৬ মাস কেটে গেলেও এখনও ভূস্বর্গের পর্যটন শিল্পের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। এবার এর প্রমাণ দিল খোদ কেন্দ্রই। তারা জানাচ্ছে, কাশ্মীরের পর্যটক সংখ্যা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে আগস্ট মাসের পর থেকে। তার আগের বছরগুলির সঙ্গে তুল্যমূল্য আলোচনায় পর্যটন মন্ত্রক দেখিয়েছে, সে রাজ্যের মূল শিল্পটির উপর কীভাবে খাঁড়া নেমে এসেছে ওই সিদ্ধান্তে।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীর নিয়ে বাঙালির উৎসাহের শেষ নেই। কিন্তু শুধু বাঙালিরাই নয়, সে রাজ্যে বেড়াতে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন যে কোনও ভ্রমণপিপাসু মানুষই। গত বছর পুলওয়ামায় জঙ্গী আক্রমণের পর থেকেই নতুন করে ফিরে এসেছিল আতঙ্ক।
কিন্তু সেই মেঘ কাটতে শুরু করার লগ্নেই ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পথে হাঁটে কেন্দ্র। নতুন করে কোনও সঙ্কট হতে পারে, সেই আশঙ্কায় পর্যটক শূন্য করে দেওয়া হয় কাশ্মীর। যদিও এই ব্যবস্থা ছিল সাময়িক। কিন্তু পরে আবার যখন ভূস্বর্গের জনজীবন স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন আর পর্যটনে সেভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি, তা জানাচ্ছে খোদ কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকই।
তারা হিসেব পেশ করে বলেছে, গত আগস্ট মাসে সে রাজ্যে পর্যটক গিয়েছিলেন মাত্র ১০ হাজার ১৩০ জন। অথচ ঠিক তার আগের বছরই সেই মাসে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৮৬,১৩৪ জন। একই ভাবে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৪ হাজার ৫৬২ জন, অক্টোবরে ৯ হাজার ৩২৭ জন এবং নভেম্বরে ১২ হাজার ৮৬ জন পর্যটক যান । অথচ তার আগের পাঁচ বছরে সেখানে প্রতি মাসে লক্ষাধিক পর্যটক গিয়েছেন, বলছে কেন্দ্রের তথ্যই।
এতে কতটা ক্ষতি হয়েছে কাশ্মীরের পর্যটনে? মন্ত্রক বলছে, এই হিসেব তাদের কাছে নেই। কিন্তু সেরাজ্যর মূল শিল্পই যেখানে পর্যটন, সেখানে পর্যটক সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকলে অর্থনীতি যে গোল্লায় যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কাশ্মীর চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি শেখ আশিক আহমেদ তো বলেই দিলেন, ‘উপত্যকা থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার আগে প্রশাসনই পর্যটকদের এখানে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। অক্টোবর মাসে তা তুলে নেওয়া হলেও, পর্যটক কিন্তু কাশ্মীরমুখো হননি। শীতকালেই মূলত বিদেশিরা আসতেন এখানে। ভাটা পড়েছে তাতেও।’
কী বলছে পর্যটক সংস্থা? কুণ্ডু স্পেশালের কর্ণধার সৌমিত্র কুণ্ডুর কথায়, কাশ্মীর নিয়ে অশান্তির সূচনা থেকেই আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতাম, এবং সবদিক খতিয়ে দেখে, তবেই পর্যটকদের নিয়ে যেতাম। কিন্তু প্রতিবারই যে আমরা নিরাপদে ফিরে এসেছি, এমন নয়। এখন হয়ত কাশ্মীরে সরাসরি কোনও সঙ্কট নেই। কিন্তু পর্যটক ও প্রশাসক— উভয়ের মধ্যেই আতঙ্ক কাজ করছে। আমার মনে হয় না এত তাড়াতাড়ি পযর্টকরা কাশ্মীরে বেড়ানো নিয়ে আস্থা ফিরে পাবেন।