সদ্য পেশ হওয়া বাজেটে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং আদিবাসীদের জন্য দুটি পৃথক বার্ধক্য ভাতার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের বাজেট পেশের পর শুধু কালনাই নয়, পূর্ব বর্ধমানের মেমারি, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম–সহ আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার মানুষ খুশিতে আত্মহারা। সকলেরই এক সুর, আদিবাসীদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এতটা কেউ ভাবেননি।
বাজেটে আদিবাসীদের জন্য একগুচ্ছ পরিষেবা ঘোষণা করায় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘হার্দিক অভিনন্দন’ জানিয়ে রাজ্য তৃণমূল আদিবাসী সেলের সভাপতি তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘বাম জমানায় মুখে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হলেও, কাজের কাজ কিছুই হত না। আদিবাসীরা অন্ধকারেই পড়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে আদিবাসীদের নানা উন্নতি হয়েছে। এবারের বাজেট তো সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’
এমনিতে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য নানা পরিষেবা ও প্রকল্প চালু হয়েছে। সবুজসাথী, কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে আদিবাসীদের। এছাড়া আদিবাসীদের নানা উন্নয়নমূলক কাজও হয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে আদিবাসীদের পাট্টা বিলি, সরকারি আবাসন বিলি, হাঁস–মুরগি–ছাগল বিলি। আদিবাসী শিল্পীদের শিল্পী কার্ড দেওয়া হয়েছে। সেই কার্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আদিবাসীরা ভাতা পাচ্ছেন। জেলায় এমন ভাতা প্রাপকের সংখ্যা ৩,৯৬০ জন। পাচ্ছেন ধামসা, মাদল-সহ নানা সরঞ্জাম।
কী রয়েছে বাজেটে? তফসিলি জাতির বয়স্ক মানুষের কথা মাথায় রেখে সরকার ‘বন্ধু’ প্রকল্প নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ ঘোষণা করছে। এই প্রকল্পে ৬০ বছরের বেশি বয়সের তফসিলি বৃদ্ধ, যাঁরা অন্য কোনওরকম ভাতা পান না, তাঁদের প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে বার্ধক্যভাতা দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা, এই প্রকল্পের আওতায় উপকৃত হবেন আনুমানিক ২১ লক্ষ মানুষ। এই প্রকল্পের ব্যয় বাবদ বরাদ্দ করা হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একই রকমের একটি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে তফসিলি উপজাতি এবং আদিবাসী মানুষদের জন্য। এই প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জয় জহর’ প্রকল্প। যাঁর অধীনে আদিবাসী সমাজের ৬০ বছরের বেশি ১০০ শতাংশ মানুষ (যাঁরা অন্য কোনও ভাতা পান না) মাসে ১ হাজার টাকা করে বার্ধক্যভাতা পাবেন। এই প্রকল্পে উপকৃত হবেন ৫ লক্ষ মানুষ। এবং এর জন্য আগামী অর্থবর্ষে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণার ফলে রাজ্যের তফশিলি এবং আদিবাসী সমাজের মোট ২৫ লক্ষ পরিবার উপকার পেতে চলেছে।