এনআরসির জেরে আসামে এক ধাক্কায় ঘরছাড়া হয়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। এবার বাংলাতেও এনআরসি করার হুঙ্কার ছেড়েছে বিজেপি। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন বাংলায় এনআরসি হচ্ছে না। তবে বিজেপির হম্বিতম্বিতে ভয় ঢুকেছে মানুষের মনে। ইতি মধ্যে সেই ভয়ের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। এবার এনআরসি আতঙ্কে ফের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল মালদাতে। আত্মঘাতী হলেন এক ভ্যানচালক।
দীর্ঘদিন ধরে ঘুরে বেড়িয়েও আধার কার্ড করতে পারেননি। যার জেরে আতঙ্কে গলায় ফাঁস দিয়ে রবিবার আত্মঘাতী হলেন চাঁচল মহকুমার রতুয়া থানার বিনপাড়ার বাসিন্দা মিঠু সাহা (৪৬)। পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন মিঠু সাহা। টানাটানির সংসারে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক চেপে বসে। আর তার জেরেই এরকম কাজ করেছেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছেন মৃতের পরিবার।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্যকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী–সন্তানেরা। পাশাপাশি এই আত্মহত্যার ঘটনার জন্য মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মৃত শ্রমিকের পরিবার। মৃতের এক ছেলে রবি সাহা বলেন, ‘বাবাকে অনেক বুঝিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, কাউকে দেশ ছাড়তে হবে না। এনআরসিও হবে না। কিন্তু অনেক বলেও বাবাকে বোঝাতে পারিনি। এখন আমরা কী করব, বুঝতে পারছি না। সব শেষ হয়ে গেল। এর জন্য বিজেপি সরকার দায়ী।’
মৃতের স্ত্রী পঞ্চমী সাহা বলেন, ‘গ্রামে এনআরসি নিয়ে অনেকে আতঙ্কে রয়েছেন। আমাদের আধার কার্ড তৈরি হয়নি। রুজি, রোজগার ছেড়ে আধার কার্ড তৈরির জন্য প্রায়দিনই ভিড়ে ঠাসা লাইনে দাঁড়াতে হত স্বামীকে। কিন্তু আধার কার্ড তৈরি করতে পারেননি তিনি। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।’ এনআরসি আতঙ্কেই তাঁর স্বামী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন পঞ্চমীদেবী।
তিনি জানান, যেভাবে এনআরসি নিয়ে প্রচার চলছে। তাতে সকলেই আতঙ্কিত ছিলেন। ভয় পেতেন যে কোনও সময় আমাদের নাগরিকত্বের প্রমাণের অভাবে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। ভোটার কার্ড থাকলেও আধার কার্ড ছিল না। কার্ড না থাকলে সরকার আমাদের জেল বন্দি করে রাখতে পারেও বলে আতঙ্ক ছড়ায় পরিবারে। শেষমেশ সেই অবসাদেই স্বামী আত্মঘাতী হন বলে দাবি তঁার। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি বাবলা সরকার বলেন, এসব হচ্ছে শুধুমাত্র কেন্দ্রে থাকা বিজেপি সরকারের জন্য। ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ধিক্কার জানাচ্ছি।