শেক্সপিয়ার বলেছিলেন, ‘নামে কী আসে যায়’। তবে নাম বদলের রাজনীতিই এখন অন্যতম মুখ্য কর্মসূচী হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবিরের। মোদী জমানায় দেশের একের পর এক স্টেশনের নাম বদল হতে দেখা গিয়েছে। সেই আবহেই শিয়ালদহ স্টেশনের নাম বদলে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বিজেপির তরফে। কিন্তু তা এখনও হয়নি। এরই মধ্যে শহরে এসে কলকাতা বন্দরের নাম বদলের ঘোষণা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা বন্দরের ১৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান থেকে মোদী তার নয়া নামকরণ করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাতেই একই সঙ্গে বিস্মিত ও অস্বস্তিতে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের কর্তারা।
সূত্রের খবর, ১৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতা পোর্টকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে ঘোষণার কথা তাঁরা কেউই আগাম জানতে পারেননি। এখনও তাঁরা জানেন না যে, এই নাম পরিবর্তনের আইনি প্রক্রিয়া কী, গেজেট বিজ্ঞপ্তি কীভাবে প্রকাশিত হবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে কি না, কলকাতা পোর্টের ট্রাস্টি বডিকে কোনও প্রস্তাব নিতে হবে কি না, ইত্যাদি। এর চেয়েও কলকাতা বন্দরের কর্তাদের অস্বস্তি বাড়িয়েছে একটি ডকের সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম জড়িয়ে থাকায়। এই নাম বদলের ফলে কলকাতা বন্দরের নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পোর্ট ট্রাস্ট হিসেব পরিচিত হবে। এর অধীনে থাকবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ডক।
প্রশ্ন উঠছে, বাংলার মানুষ এটা কি মেনে নেবে? কারণ বাঙালির আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সুভাষচন্দ্রের নাম। শ্যামাপ্রসাদের গ্রহণযোগ্যতা তুলনায় অনেক কম। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বন্দরের নামবদলের ঘোষণা করায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন কলকাতা পোর্টের কর্তারা। কেউই বলতে পারছেন না কবে থেকে ‘কলকাতা’ শব্দটা উঠে গিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পোর্ট ট্রাস্ট লেখা হবে। উল্লেখ্য, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে কলকাতা বন্দর সিস্টেম ও হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স। আবার কলকাতা ডক সিস্টেমের অধীনে রয়েছে খিদিরপুর ডক, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ডক আর বজবজ অয়েল জেটি।
ইতিমধ্যেই বিরোধী শিবিরে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভবিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুরে কলকাতা জেলা ছাত্র পরিষদ কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সদর দফতরে গিয়ে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখায় ও কুশপুত্তলিকা পোড়ায়। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলছেন, কলকাতা পোর্টের অধীনে একটি ডকের নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নামে। তাই নাম বদল করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পোর্ট করা হলে সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি অসম্মান জানানো হবে।