প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তোলার মিছিলে অনেকের ভিড়ে মিশেছিলেন বছর বাইশের দু’টি ছেলেও। পড়াশোনা করেন শিবপুরের আইআইইএসটিতে। অভিজিৎ বোরা আর অঙ্কুরন দেওঘোড়িয়া হস্টেলে রুমমেটও বটে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী মিছিলে নন্দন চত্বর থেকে হাঁটতে হাঁটতে অভিজিৎ ছবি তুলছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তা ফেসবুকে আপলোড করে দিচ্ছিলেন ‘গো ব্যাক মোদী, নো সিএএ’ হ্যাশট্যাগ সহযোগে। কারও সঙ্গে সামান্য কথা এগোলেই ওঁরা দু’জন জানিয়ে দিচ্ছিলেন, বাড়ি আসামে। তাই জানেন, এনআরসির বিপদ আসলে কতখানি।
অভিজিৎ বলছিলেন, ‘এনআরসি যে কত বড় ভাঁওতা, সেটা আমাদের জিজ্ঞাসা করুন। মানুষে মানুষে ভাগ করার যন্ত্র ওটা। আসামে গিয়ে দেখুন, সরকার জাত দেখে পরিষেবা দিচ্ছে। নাগরিক হিসেবে নয়!’ প্রায় একই কথা জানাতে গিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেন অঙ্কুরন। তবে এনআরসি আর নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে এই মিছিলে সামিল অন্যদের থেকে তাঁদের বক্তব্য যে খানিকটা আলাদা, তা জানাতেও দ্বিধা করেননি। অঙ্কুরন বলছিলেন, ‘আসাম-চুক্তি মেনে যে এনআরসি অসমিয়ারা দাবি করেছিলেন, সেই নীতিতে আমাদের রাজ্যে এনআরসি হয়নি। অথচ সারা দেশের কাছে বিজেপি বোঝাতে চাইছে, আমরা নাকি এমনই এনআরসি চেয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন যে, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চাই, আমরা এমন বিভাজনকারী এনআরসি চাইনি।’ একইসঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘এই এনআরসির পর সিএএ এনে ফের সেই অনুপ্রবেশকারীদেরই তো নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? তা হলে এত টাকা খরচ করে কেন আসামে এনআরসি করা হল?’ মিছিলের অন্যদের থেকে খানিক আলাদা বক্তব্য, তবু এলেন কেন? অভিজিতের জবাব, ‘এসেছি, কারণ আমরাও সিএএ চাই না। এটুকু মিলই তো যথেষ্ট। এটুকুর জন্যই তো প্রধানমন্ত্রীকে গো-ব্যাক বলা যায়।’
অভিজিতদের এই কথাই পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন আদতে জার্মান, অধুনা লন্ডনের বাসিন্দা রিকার্ডো। কিছু দিন হল তিনি শহরে এসেছেন লন্ডন থেকে। সারা পৃথিবীর আন্দোলন নিয়ে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সে গবেষণা করছেন রিকার্ডো। গবেষণার কাজেই প্রতিবাদের শহর কলকাতাকে ছুঁতে চাওয়া। তিনি ঘুরে ঘুরে সবার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘সারা পৃথিবীতে আন্দোলন, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম অনেক দেখেছি। কিন্তু আপনাদের শহরের প্রতিবাদগুলোয় কী যেন একটা আছে, যা অন্য কোথাও পাই না। এখানকার ছাত্র-যুবদের মধ্যেও একটা এক্স ফ্যাক্টর আছে। সেটা কী বোঝার জন্যই ঘুরে ঘুরে দেখছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলছি।’