নতুন বছরের শুরুতেই নতুন করে ফের ধোঁয়াশা তৈরি হল জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) নিয়ে। কারণ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার এনপিআরের কাজেও লাগবে বায়োমেট্রিক তথ্য। বেশ কয়েকটি রাজ্যে এনপিআরে সাম্প্রতিকীকরণের সময় বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এনপিআর পরিমার্জন খাতে যে দিন অর্থ বরাদ্দ করে, সে দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর কিন্তু দাবি করেছিলেন, এনপিআরে কোনও বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ও ওই একই কথাই জানিয়েছিলেন।
স্বরাষ্ট্র সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালের এনপিআরে ১৬টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বছর সেগুলি থাকছে। এর মধ্যে একেবারে শেষ পর্বে বলা রয়েছে, যাঁদের বয়স পাঁচ বছরের বেশি, তাঁদের ১০টি আঙুল ও দু’চোখের মণি স্ক্যান করা হবে। তবে যে প্রকাশ জাভড়েকর বলেছিলেন, এ যাত্রায় কোনও বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হবে না? পাল্টা যুক্তিতে কেন্দ্র জানিয়েছে, সব রাজ্যে ওই তথ্য নেওয়া হবে না। কিছু নির্দিষ্ট রাজ্যের ক্ষেত্রেই নেওয়া হবে। সূত্রের খবর— বাংলা, বিহার, দিল্লী, কর্ণাটকের মতো কিছু রাজ্যে অতীতে এনপিআরের সময়ে জনগণের থেকে ওই তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি। সেখানে এবার ওই তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
প্রসঙ্গত, এনআরসি-সিএএ-র মতো জনগণনার আগের ধাপ হিসেবে এনপিআরে বায়োমেট্রিক ব্যবহারের প্রয়োজন নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিরোধী দলগুলি। ওই কাজ স্থগিত রেখেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে এনপিআরে ৭টি নতুন বিষয় যোগ করা হয়েছে। তাতে আধার, ভোটার কিংবা প্যান কার্ড নম্বর ছাড়াও বাবা-মায়ের জন্মতারিখ ও তাঁদের জন্মস্থানের বিষয়টি রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বাবা-মায়ের জন্মস্থানের তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের নিয়ে সন্দেহজনক ভোটারের তালিকা তৈরি করবে সরকার। এক্ষেত্রে নিশানা করা হতে পারে মুসলিমদের।
তবে বিরোধী দলগুলি অতিরিক্ত বিষয়গুলি প্রত্যাহারের দাবি তুললেও, কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, প্রত্যাহারের কোনও প্রশ্নই নেই। স্বরাষ্ট্রকর্তাদের কথায়, এনপিআরে তথ্য জানানো আবশ্যিক নয়। ঐচ্ছিক বিষয়। কিন্তু বিরোধীদের আশঙ্কা, কেউ তথ্য না দিলে তাঁর নাম সন্দেহজনক ভোটারের তালিকায় উঠে যেতে পারে। এই বিতর্কের মধ্যেই আবার নয়া নাগরিকত্ব আইনের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ভূমিকা এড়াতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। বাংলা, কেরালা ও কংগ্রেসশাসিত একাধিক রাজ্য জানিয়েছে, তারা তাদের রাজ্যে সিএএ হতে দেবে না। কেরালা বিধানসভায় এ নিয়ে প্রস্তাবও পাশ হয়েছে।
আর তাই ভবিষ্যতে জটিলতা এড়াতে সিএএ-তে রাজ্যের কোনও ভূমিকাই রাখতে রাজি নয় কেন্দ্র। এ যাবৎ নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নে ক্ষমতা ছিল জেলাশাসকের হাতে। জেলাশাসক কেন্দ্রীয় আমলা হলেও তিনি রাজ্য সরকারের নির্দেশও মানতে বাধ্য। কেন্দ্র এখন জানাচ্ছে, সিএএ-র যে নিয়ম তৈরি হচ্ছে, তাতে জেলাশাসকের ভূমিকা থাকবে না।