দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন চলুক। কিন্তু কর্মনাশা ধর্মঘট প্রতিবাদের কোনও উপায় হতে পারে বলে মনে করে না রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। ধর্মঘট করে যে রাজ্যকে অচল করতে দেওয়া হবে না, সে কথাও বারবারই বলে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই শ্রমিক সংগঠনগুলি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিলেও আগামী ৮ জানুয়ারি বাংলাকে সচল রাখতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল।
উল্লেখ্য, সঙ্ঘপরিবারের বাইরের সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন ও বেশ কিছু সামাজিক সংগঠন কেন্দ্রের মোদী সরকারের শ্রম ও আর্থিক নীতির প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন আরএসএসের ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস) মোদি সরকার বিরোধী এই ধর্মঘটের বিরোধিতা করছে। তবে, ধর্মঘটীদের দাবির বিরুদ্ধে না হলেও রাজ্যে শ্রমদিবস নষ্ট না করার লক্ষ্যে কারখানা থেকে পরিবহণ, অফিস সব খোলা রাখার বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে চলেছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই ধর্মঘটের সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়েছেন মমতা। বাম আমলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতি বছরই প্রায় ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হতো। কখনও তা সরাসরি শাসক দলের নামে, কখনও আবার বাম শ্রমিক ও কৃষক সংগঠন ওই ধরনের ধর্মঘট করত। শাসক ও ধর্মঘটী একই দলের হওয়ায় বস্তুত রাজ্যের প্রশাসনের মদতেই জোর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পাঞ্চল, ক্ষেত-খামার থেকে রেলসহ সমস্ত পরিবহণ স্তব্ধ হয়ে থাকত।
এভাবে ধর্মঘট বা বনধের জেরে বামেদের প্রায় সাড়ে তিন দশকের রাজত্বে রাজ্যে প্রায় ৭৭ লক্ষ শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছিল বলে দাবি তৃণমূলের। মমতা ক্ষমতায় আসার পর ধর্মঘটের জেরে শ্রমদিবস নষ্ট হওয়ার ঘটনা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্যোপাধ্যায়ের দাবি, মানুষের দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই উঠে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নীতিগতভাবে তৃণমূল কোনও রকম কর্মনাশা বনধের বিরোধী। দলনেত্রী স্পষ্টভাষায় তা রাজ্যবাসীকে জানিয়েও দিয়েছেন। যারা রাজ্যটাকে ধ্বংস করে কোটি কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে চলে গিয়েছে, তারাই ফের ধর্মঘটের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে। বাংলায় উন্নয়নকে ব্যহত করাই তাদের লক্ষ্য বলে মনে করেন তৃণমূল মহাসচিব।
আবার রাজ্যকে আগামী ৮ তারিখ সচল রাখাই তাঁদের লক্ষ্য বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক নেত্রী তথা সাংসদ দোলা সেন। তিনি বলেন, সারা বাংলার সমস্ত কারখানা খোলা থাকবে। পরিবহণ সচল রাখবেন শ্রমিক কর্মচারীরা। অফিস-কাছারিতেও কর্মীরা অন্যন্য দিনের মতো স্বাভাবিক কাজ করবেন। অর্থাৎ শিল্প বা পরিবহণ ধর্মঘটে বাংলার শ্রমিকরা অংশ নেবেন না।
যদিও কেন্দ্রের বেপরোয়া বেসরকারিকরণ, বিলগ্নীকরণ-সহ এনআরসি, সিএএ বিরোধী আন্দোলন আইএনটিটিইউসি চালিয়ে যাবে। কোনও মতেই কেন্দ্রের সরকারের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত তাঁরা মেনে নেবেন না। দোলা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বন্ধ বা ধর্মঘট করে কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের মোকাবিলা সম্ভব নয়। সেই কারণে, এই ধর্মঘটে তাঁদের কোনও আস্থা নেই।