রেলকে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল মোদী সরকার। যে সমস্ত রুটের রেলকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে, ইতিমধ্যে সেগুলি চিহ্নিতও করে ফেলেছে কেন্দ্র। জানা গেছে, কলকাতার ১২ টি, মুম্বইয়ের ২৬ টি এবং দিল্লীর ৩৫ টি ট্রেন চিহ্নিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রেলের এই ন্যূনতম যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি। প্রিমিয়াম ট্রেনের টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ফ্লেক্সি ফেয়ার স্কিম চালু করা, কিংবা আজ, ১ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন শ্রেণীতে রেলের যাত্রীভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক থেকে চার পয়সা বাড়িয়ে দেওয়া- মোদী সরকারের আমলে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাধারণ বাজেটকে এড়িয়ে যাত্রীভাড়ায় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক। আর যাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ঠিক কী কারণে এভাবে সাধারণ বাজেটে রেলভাড়া সংক্রান্ত ঘোষণা না করে তা আগেই কার্যকর করে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে জল্পনা চরমে উঠেছে। সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, সংসদে এই প্রস্তাব আনলে কেন্দ্রকে সংসদীয় বিতর্কের আওতায় আসতে হবে। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেই সংসদীয় বিতর্ক এড়াতে চাইছে।
যদিও রেলমন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকদের বক্তব্য, সাধারণ বাজেটের সঙ্গে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি অথবা নতুন ট্রেন ঘোষণার কোনও সম্পর্ক নেই।
এরই পাশাপাশি যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে রেল বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সপ্তম পে কমিশন কার্যকরের পর যে মাত্রাতিরিক্ত যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা কিছুটা সামাল দিতেই যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে প্রথমবারের জন্য ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের যে রেল বাজেট ঘোষণা করেছিল, তাতে রেলের যাত্রীভাড়া এবং পণ্য মাশুল দুটোই বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া সমস্ত শ্রেণীতে রেলের যাত্রীভাড়া ১৪.২ শতাংশ এবং পণ্য মাশুল সাড়ে ছয় শতাংশ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছিলেন। সেটিই শেষ।
পরবর্তী ক্ষেত্রে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সুরেশ প্রভু এবং পীযূষ গোয়েলের আমলে যতবার রেলের যাত্রীভাড়ায় পরিবর্তন হয়েছে, কোনওটিই কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষণা করা হয়নি। প্রশ্ন উঠছে প্রধানত তা নিয়েই। যেমন ২০১৪-১৫ সালের রেলবাজেটে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির পরেও ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার রেলের ন্যূনতম যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বরও বাজেটকে এড়িয়েই নন-সাবার্বান ক্ষেত্রে ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণীতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে দেওয়া হয়।
আর ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী, শতাব্দী এবং দুরন্ত এক্সপ্রেসের মতো প্রিমিয়াম ট্রেনের টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ফ্লেক্সি ফেয়ার ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় রেলমন্ত্রক। এটিও শর্তসাপেক্ষে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধিরই নামান্তর। এই ব্যবস্থায় উল্লিখিত ট্রেনের ১০ শতাংশ আসন ‘বুকড’ হয়ে গেলেই টিকিট মূল্য ১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তবে সেকেন্ড ক্লাস এসি, স্লিপার, সংরক্ষিত সেকেন্ড সিটিং এবং এসি চেয়ার কারের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ দেড় গুণ। থার্ড এসির ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ১.৪ গুণ। কেন্দ্রীয় বাজেটকে এড়িয়েই আগেভাগেই রেল এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে দেয়। এবং গতকাল রেলের বিভিন্ন শ্রেণীতে কিলোমিটার পিছু যাত্রীভাড়া বৃদ্ধিও করে দেওয়া হয়েছে বাজেটকে এড়িয়ে।