‘ফ্যাসিবাদী শক্তি আসামে বাঙালি নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে’- আসামে বাঙালিদের ভোগান্তি দেখে বারবারই এই অভিযোগ উঠেছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে৷ ইতিমধ্যেই লাখ দুয়েক বাঙালি নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। জেল খাটছেন ৯৮৮ জন। আবার ২৭ জন প্রাণও হারিয়েছেন ডিটেনশন ক্যাম্পে। এরই মধ্যে সামনে এল ৪ বাঙালির দুর্দশার কথা। যাঁরা ভারতীয় হলেও, শুধুমাত্র ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সন্দেহের কারণে তাঁদের জীবনের মূল্যবান কিছু সময় কেটে গেল জেলখানার ভিতর ডিটেনশন ক্যাম্পে।
জানা গিয়েছে, আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ওই ৪ বাঙালিকে বিদেশি বা বাংলাদেশি সন্দেহে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল। যাঁদের মধ্যে আবার তিনজনই হিন্দু। তবে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে এই ডিসেম্বরে তাঁরা চারজন ভারতীয় হয়েই ছাড়া পেলেন বিদেশি বন্দীশালা থেকে। কিন্ত এই বন্দীদশায় এঁদের একজন হারিয়ে ফেলেছেন মানসিক ভারসাম্য। বাকি তিনজনও মানসিক ও শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। যা দেখে আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির সাধন পুরকায়স্থের মন্তব্য, বিজেপি বাঙালিবিদ্বেষী। মুখে যাই বলুক, বাঙালি হিন্দুদের সঙ্গেও প্রতারণা করছে তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬-র ২৮ জানুয়ারি থেকে গোয়ালপাড়া জেলের বিদেশি বন্দীশালায় আটক ছিলেন সুভাষ রায় ও ফণী রায়। দুজনেরই বাড়ি আসামের বাসখার নাত্রিমুনিতে। সুভাষ ১৯৭৬ সালে আসাম থেকেই মাধ্যমিক পাশ করেন। তাঁর বাবার নামও ছিল ১৯৫১-র এনআরসি তালিকায়। তবু তাঁকে বিদেশি বলে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। ফণীও ভারতীয়। কিন্তু তাঁর কাগজপত্র অগোছালো ছিল। দুজনই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এখন মুক্ত। শুক্রবার দিল্লী থেকে এসেছে তাঁদের মুক্তির সংবাদ। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, তাঁরা দুজনই ভারতীয়।
অন্যদিকে, মণিপুর থেকে বিবাহ সূত্রে আসামের শিলচরে এসেছিলেন কাজলবালা দেব। এই বৃদ্ধাকেও বিদেশি বলে জেলে ভরে শিলচর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। ২ বছর ৮ মাস জেল খাটার পর ১৯ ডিসেম্বর গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশে কাজলবালাও ভারতীয় পরিচয়ে মুক্তি পান। কিন্তু জেলে যাওয়ার পরই নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। আবার দরং জেলার খারুপেটিয়ার এক নম্বর কুয়ারি ফুয়ারি গ্রামের মমতাজ বেগমও মুক্তি পেয়েছেন ডিসেম্বরে।
লোকের বাড়িতে ঠিকে ঝি-র কাজ করতেন দিনমজুর আব্দুল হান্নানের স্ত্রী মমতাজ। শিবসাগরে গিয়েছিলেন কাজ করতে। জোরহাট ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ১৯ জানুয়ারি সন্দেহের বশে তাঁকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠায়। ৮ মার্চ ট্রাইব্যুনাল জানায় মমতাজ বিদেশি। জানা গিয়েছে, ওই দিন মমতাজের আইনজীবীর বিয়ের দিন ছিল। তিনি চিঠি দিয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু মেলেনি। সবশুনে গুয়াহাটি হাইকোর্ট ১৭ ডিসেম্বর মমতাজকে মুক্তি দেয়। সঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া হয় নাগরিকত্ব।
এ প্রসঙ্গে সাধনবাবুর অভিযোগ, ‘বিজেপি সরকার বাঙালি বিদ্বেষী। তাই বেছে বেছে বাঙালিদেরই ভরা হচ্ছে জেলে। অথচ আদালত থেকে বন্দীরা নাগরিকত্ব প্রমাণ করেই ছাড়া পাচ্ছেন।’ তাঁর দাবি, আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে কোনও বাংলাদেশিই বন্দী নেই। সবাই ভারতীয়। শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনালের একপেশে বিচারে তাঁদের হয়রানি হতে হচ্ছে। চারটি ক্ষেত্রেই ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত আধিকারিকদের শাস্তি দাবি করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে বিনা অপরাধে ওই ৪ জনকে জেল খাটানোর জন্য ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন।