বুধবার সকালেই সাত তাড়াতাড়ি মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(ক্যাব)-এ অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। আগামী সোমবার লোকসভায় পেশ হবে বিলটি। তারপর মঙ্গলবার ৪ ঘণ্টার আলোচনা শেষে হবে ভোটাভুটি। তবে এই বিল নিয়ে মোদী সরকার যখন এতটাই এগিয়ে গিয়েছে, তখন আসাম ও ত্রিপুরা উত্তাল ক্যাব-বিরোধী আন্দোলনে।
বিজেপির শরিকরা এবার বিক্ষোভে শামিল না হলেও বৃহস্পতিবার আসামে আসু (সারা অসম ছাত্র সংস্থা) ও কেএমএসএস (কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি) এবং ত্রিপুরায় আইএনপিটি (ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা)-র ডাকে ব্যাপক সমর্থন চোখে পড়ে।
আইএনপিটির ডাকে গতকাল ত্রিপুরায় রেল ও সড়ক পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। গুয়াহাটিতে আসু ও কেএমএসএস-এর বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশও জনজোয়ারের চেহারা নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গুয়াহাটিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ক্যাব-এর বিরোধিতা করেছেন হামারো সিকিম পার্টির নেতা, প্রাক্তন ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়াও। হামারো সিকিম পার্টির সুপ্রিমোর মতে ক্যাব ‘ভয়ঙ্কর’। তাঁর আশঙ্কা, ক্যাব পাশ হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই তাঁর দল ক্যাব-বিরোধিতায় পথে নামবে বলে জানিয়েছেন বাইচুং।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈন, শিখ ও বৌদ্ধদের শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকত্ব দিতে বুধবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা নতুন বিল অনুমোদন করে। জানা গিয়েছে, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বিলটিতে ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) সুবিধাভুক্ত রাজ্যগুলির পাশাপাশি আদিবাসী এলাকাকে ক্যাব-এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
তাই বিজেপির শরিকরা এবার তেমন একটা বিরোধিতা করছে না। তবে হিন্দু বাঙালিরা আতঙ্কিত। কারণ ক্যাব-এর রক্ষাকবচ তাঁদের কাজে লাগবে না। বিজেপির বিরুদ্ধে উঠছে প্রতারণার অভিযোগ।
আসামে বিজেপির জোট শরিক অসম গণ পরিষদ (অগপ)-এর পরিষদীয় দল বৃহস্পতিবার ক্যাব নিয়ে বৈঠকে বসেন। জানা গিয়েছে, অগপ এবার ক্যাব-বিরোধিতা করছে না। উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের আগে ক্যাব-বিতর্কেই বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছিল অগপ। কিন্তু এবার সে পথে না হেঁটে তারা দাবি তুলেছে, আসামে আইএলপি চালু করতে হবে।
আসামে কেএমএসএস নেতা অখিল গগৈ এদিন বলেন, ‘ক্যাব চালু হলে বাংলাদেশিদের হাতে চলে যাবে অসমের ক্ষমতা। অগপ আত্মহত্যামূলক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’ আসু–র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁরা কিছুতেই ক্যাব মানবেন না। আসামের জনপ্রিয় শিল্পী জুবিন গর্গও ক্যাব-বিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়েছেন।
অসমের পাশাপাশি ত্রিপুরাতেও শুরু হয়েছে ক্যাব-বিরোধী আন্দোলন। রেল ও সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছিল আঞ্চলিক দল আইএনপিটি। ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্তের মধ্যেও গোটা ত্রিপুরা স্তব্ধ হয়ে পড়ে। আইএনপিটির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ দেববর্মা জানিয়েছেন, ক্যাব-বিরোধিতায় আন্দোলন চলবে। বিরোধিতা করেছেন ত্রিপুরার ‘মহারাজা’ প্রদ্যোতকিশোর দেববর্মনও।