সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের অন্যতম আলোচনার বিষয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব। মোদী সরকারের এই বিল নিয়ে দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। শুধু বিরোধী শিবিরে নয়, খোদ বিজেপির অন্দরেই বাড়ছে ক্ষোভ। উত্তর–পূর্ব ভারতের গেরুয়া শিবিরই মোদী সরকারের এই বিল নিয়ে ক্ষুদ্ধ। অরুণাচল প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু নিজেই সর্বদলীয় বৈঠকে জানিয়েছেন, ক্যাব সংশোধিত চেহারায় পেশ করা না হলে তাঁরাও বিরোধিতায় শামিল হবেন। মঙ্গলবার সন্ধেয় ক্যাব–এর বিরোধিতায় বিক্ষোভ মিছিল বার হয় অসমের শিলচরে।
হিন্দু–সহ অমুসলিম ৬ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বাংলাদেশ, পাকিস্তানও ও আফগানিস্তানের শরণার্থীদের শর্তসাপেক্ষে ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে চায় বিজেপি। গত সাধারণ নির্বাচনের আগে ক্যাব লোকসভায় পাশ করিয়েও রাজ্যসভায় পেশ করেনি বিজেপি। ফলে বিলটি বাতিল হয়ে যায়। তারপরও ক্যাব নতুন করে সংসদে পেশ করে পাশ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন বিজেপি নেতারা। নতুন করে ক্যাব আনা হবে। অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছিলেন অপরিবর্তিত ক্যাব–ই আনা হবে। আর সেটা সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দু’দিনেই পাশ করানোরও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। কিন্তু এক সপ্তাহেরও বেশি সংসদ চললেও এখনও পেশই হয়নি ক্যাব।
তবে এই বিলের বিরোধিতা চলছেই। খোদ বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুও বিরোধিতা করছেন ক্যাব–এর। তাঁর সাফ কথা, ক্যাব–এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করা না হলে বিরোধিতা করা হবে। উত্তর–পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব রাজ্যেই ক্যাব–বিরোধিতার সুর তীব্রতর হচ্ছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, মিজোরামের জোরাম থাঙ্গা, মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিং থেকে শুরু করে ত্রিপুরায় বিজেপি–র জোট শরিক আইপিএফটি–র সুপ্রিমো তথা রাজস্বমন্ত্রী এন সি দেববর্মা ক্যাব–এর বিরোধিতা করছেন। শুরু হয়েছে ক্যাব–বিরোধী আন্দোলনও।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার শিলচরে এআইপিপিসি (অসম ইন্ডিজেনাস পিপলস প্রোটেকশন কমিটি) ক্যাব–এর বিরোধিতায় বিক্ষোভ দেখায়। কুশপুতুল পোড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি স্থানীয় বিজেপি সাংসদ রাজদীপ রায়েরও। বরাকের পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়ও চলছে ক্যাব–বিরোধী আন্দোলন। আসু, কেএমএসএস ক্যাব–বিরোধিতায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অসম বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়াও এদিন ক্যাব–এর কড়া বিরোধিতা করেন। তাঁর আশঙ্কা, ক্যাব পাশ হলে অসমের জনবিন্যাস বদলে যাবে। আক্রান্ত হবে অসমিয়া কৃষ্টি ও সংস্কৃতি।