রাজ্যে রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেওয়ার দিন রাজ্য সরকার জগদীপ ধনখড়কে সদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। একসঙ্গে ভালোভাবে রাজ্য চালানোর কথাও বলেছিলেন মমতা। কিন্তু ধনখড়ের কাজকর্মে সেরকম কোনো আভাসই পাওয়া যায়নি। রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত বেড়েছে ক্রমশ। রাজ্য চেষ্টা চালিয়েছে সম্পর্ক শীতল করার, কিন্তু সেটা কমার বদলে বেড়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে বারবার সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এইবার সংবিধান দিবসেও সেই বিষয় এড়ালো না।
মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় সত্তরতম সংবিধান দিবসে আমন্ত্রিত কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের বক্তব্যে রাজভবন ও নবান্নের ঠান্ডা লড়াই ঠাঁই করে নিল এদিনের বিশেষ অধিবেশনে। সংবিধান নিয়ে আলোচনায় কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক, ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্কট, পরিষদীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের গুরুত্ব, মহিলা সংরক্ষণের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদর্থক ভূমিকা থেকে নির্বাচনী সংস্কারে একশো শতাংশ বুথে ভিভিপ্যাট বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ, কর্পোরেট তহবিল ইত্যাদি প্রসঙ্গ উঠে এলো আমন্ত্রিত বক্তাদের আলোচনায়। তাঁর কথায়, রাজ্যে সমান্তরাল প্রশাসন চালানো রাজ্যপালের কাজ নয়।
কেন্দ্র বা রাজ্যের কোনও শাসকের নাম কেউ নিলেন না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আমলে সংবিধানকে কেন্দ্র করে যেসব বিতর্ক রাজনীতিতে প্রাধান্য পেয়েছে, অধিবেশনের প্রথম বক্তা প্রাক্তন রাজ্যপাল এমকে নারায়ণনের ভাষণের পরতে পরতে জড়িয়ে রইল সেই প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অথচ বর্তমানে দেশের কোথাও কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতা কুবাক্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। অথচ ভারতীয় গণতন্ত্রের ধারণা ধর্ম ও জাতিগত ঐক্যের উপর দাঁড়িয়ে। তাই সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাটাই ভারতের সংবিধান প্রণেতারা অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। কিন্তু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বদলে বিভাজন— এভাবে সংবিধানকে বিপন্ন করা উচিত নয় বলে মনে করেন এম কে নারায়ণন। তাঁর দাবি, গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে ভারসাম্য নষ্ট হলে তা সংবিধানের মূল ভাবনাকেই ধ্বংস করে। এক্ষেত্রে রাজ্যকে যেন কেন্দ্র তার অধস্তন বলে না মনে করে।
লোকসভায় দ্বিতীয় ইউপিএ আমলের স্পিকার মীরা কুমার এর আগে রাজ্য বিধানসভার পঁচাত্তর বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। এদিন এই শহরের সঙ্গে তাঁর পূর্বপূরুষদের সম্পর্কের কথা স্মরণ যেমন করেছেন, তেমনই গণআন্দোলন থেকে উঠে আসা আজকের মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসাও করেন। গণআন্দোলন করে উঠে এসে আইনসভায় প্রবেশের অধিকারও প্রতিষ্ঠা করেছে ভারতের সংবিধান। বর্তমানের মুখ্যমন্ত্রী সেই আন্দোলনেরই ফসল বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস নেত্রী তথা জগজীবন রাম তনয়া মীরা। তাঁর মতে, সংবিধানই সর্বজনীন ভোটাধিকার দিয়েছে।