৮ নভেম্বর, ২০১৬। বছর তিনেক আগের এই একটি দিন, যা আজও প্রায় বেশিরভাগ দেশবাসীর কাছেই দুঃস্বপ্নের মতো। হঠাৎই ওদিন সন্ধ্যায় ৭টায় দূরদর্শনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকলেরই চোখ তখন টেলিভিশনের পর্দায়। তারপরই হল সেই বিশেষ ঘোষণা, রাত বারোটার পর থেকে গোটা দেশে বাতিল পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল দেশবাসীর। তার পর থেকে ঠিক ৩ বছর কেটে গেছে। কিন্তু নোটবন্দীর সুফল কোথায়? মোদীর কথা মত আদতেও আটকানো গেল কালো টাকার কারবার? প্রশ্ন উঠছে কারণ এবার দেখা যাচ্ছে বেহিসেবী টাকার বেশিরভাগই নয়া ২০০০টাকার নোটে। তাই নোটবন্দী যে বিফল এমন ইঙ্গিত মিলছে অর্থমন্ত্রী নির্মলার রিপোর্টে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে বলেন, চলতি অর্থবর্ষে ৪৩.২২ শতাংশ বেহিসেবি নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আর তার সবই ২০০০ টাকার নোট। এদিকে এই পরিস্থিতিতে ২০০০ টাকার নোট ছাপানো বন্ধ করে দেওযা হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাহলে নোট বাতিল যে কারণে করা হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য কী পূরণ হল? উঠছে প্রশ্ন।
নোট বাতিল করে দেশের অর্থনীতি হাল ফিরবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। বরং ২০০০ টাকার নোট বাজারে আনলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। সমাজ বিরোধীমূলক কাজ করা আরও সহজ হবে। আর তিন বছর পর দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। সমস্যার যে সমাধান হয়নি তা বোঝা গেল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দেওয়া তথ্যে।
উল্লেখ্য নোট বাতিল করে আদৌ লাভের কিছু হল না, কিছুদিন আগেই এই প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী থেকে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দেশের বিরোধী নেতা-নেত্রীরা।মোদী সরকারের ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, দুর্নীতি রোধ, কালো টাকা উদ্ধার আর সন্ত্রাসবাদ খতম করতেই নাকি নোটবন্দী! কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এর একটিও হয়নি। বরং বেড়েছে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, জাল নোটের কারবার। পঙ্গু হয়েছে দেশের অর্থনীতি। আর ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়েছে বেকারত্বও।