অধিবেশন শুরুর আগেই মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিশ দিয়ে রেখেছিল বিরোধী দলগুলি। এমনকী অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদ চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। গতকাল শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতেই সোচ্চার হয়ে উঠেছিল বিরোধী বেঞ্চ। আর্থিক মন্দা থেকে কাশ্মীর ইস্যু ইত্যাদি সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় কেন্দ্রের ব্যর্থতা তুলে ধরে সংসদে সরব তৃণমূল।
রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে গতকালই সোচ্চার হয়েছিলেন তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়। একইসঙ্গে চিট ফান্ড স্কিম, অর্থনৈতিক মন্দা, জম্মু-কাশ্মীর, পরিবেশ ইত্যাদি একের পর এক ইস্যুতে কেন্দ্রকে বিঁধেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। প্রথম দিনেই তৃণমূল একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে, সরকারকে এক ইঞ্চি জমিও তারা সংসদে ছেড়ে দেবে না।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বেকারত্বের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা চেয়েছে তৃণমূল। এ নিয়ে রাজ্যসভায় একটি নোটিশ দিয়েছে তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি৷ সূত্রের খবর, তৃণমূল কংগ্রেস যাতে ‘পেপার লেড অন দ্য টেবিল’ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করে, সে বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে তৃণমূলকে অনুরোধ করা হয়েছিল৷ কিন্তু তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন৷
চিট ফান্ড সংশোধনী বিল নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, চিট ফান্ড ব্যবসাই অবৈধ ঘোষণা করা উচিত। তাঁর যুক্তি, ‘দীর্ঘদিন ধরে মামলার তদন্ত করা হলেও চার্জশিট পেশ করছে না তদন্তকারী সংস্থা৷ সেবি বা আরবিআই-এর মতো সংস্থার আধিকারিকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়েছিল চিট ফান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে এই সংস্থাগুলির পদাধিকারীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে হবে৷ পঞ্জি স্কিম ও চিট ফান্ড-এর মধ্যে সাধারণ মানুষ তফাত করতে পারছেন না৷ পঞ্জি স্কিমগুলিকে নিষিদ্ধ করা হলেও কেন চিট ফান্ড ব্যবসাকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না? আমাদের দাবি, চিট ফান্ড কাণ্ডে যাঁরা প্রকৃত দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এটিকে ভোটের ইস্যু করবেন না।’
বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা তুলে ধরে সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন। বলেন, ‘আইএমএফ বলছে দেশের অর্থনৈতিক প্রগতির হার হ্রাস পাচ্ছে, মুডিও তা-ই বলছে৷ শিল্পে উৎপাদনের হার তলানিতে, কার্যত এখন ঋণাত্মক পর্যায়ে৷ এই অর্থনৈতিক মন্দার জন্য কি সরকারের বিমুদ্রাকরণের নীতি দায়ী? তাদের এই সিদ্ধান্তের জেরেই কি বাজারে টাকার জোগান কমে গিয়েছে?’ সাপ্লিমেন্টারি প্রশ্নে সরকারের কাছে তথ্য চান সৌগত৷
গতকাল সৌগত আরও বলেন, ‘ফারুক আবদুল্লাকে আটক করে রাখা হয়েছে। যা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে লজ্জাজনক। গৃহবন্দীর কারণ কী? তা সরকারকে জানাতে হবে।’ সৌগত রায়ের সুরে সুর মিলিয়ে সরব হন ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝিও।