কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০২০ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও কমাল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াবে মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ আগে এসবিআই জানিয়েছিল, বৃদ্ধির হার হবে ৬.১ শতাংশ। এমনকী চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশে নামতে পারে বলেও আশঙ্কা। এ বিষয়ে আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ওইসিডি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও আইএমএফ।
অর্থ মন্ত্রকের এক সূত্র বলছেন, ‘শুধু দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে যাওয়ার বিষয়ে নয়, গোটা অর্থবর্ষের জন্যও তা ৬ শতাংশের থেকে খুব বেশি কিছু আশা করছে না সরকার।’ মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মমণ্যনেরও মত, ২০১৯-২০ সালে ওই হার ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।
কেন অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমছে? এসবিআই জানিয়েছে, এর কারণ একাধিক। গাড়ি বিক্রি কমছে। কমছে বিমানযাত্রীর সংখ্যা। বিমান সংস্থাগুলির ব্যবসা বাড়ছে না। শিল্পের কোর সেক্টরে উৎপাদন বাড়ছে না। নির্মাণ ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিল্পোৎপাদনের সূচক সেপ্টেম্বরে নেমে এসেছে ৪.৩% হারে, যা খুবই উদ্বেগজনক। শিল্পে মন্দার পাশাপাশি নন ব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি ঋণদান কমিয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কৃষি সঙ্কট। এসব কিছু মিলিয়েই রাশ টানছে অর্থনীতির অগ্রগতিতে, এমনই উল্লেখ করা হয়েছে এসবিআই রিপোর্টে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে যে ৩৩টি গুরুত্বপূর্ণ সূচকের বৃদ্ধির হার ছিল ৬৫%, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সেগুলির বৃদ্ধি নেমে এসেছে ২৮%–এ। এর ওপর এ বছর অতিরিক্ত বর্ষার কারণে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক ও পাঞ্জাবের মতো কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলিতে খরিফ শস্যের ফলনে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রেদেশে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ সয়াবিন চাষ, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাদাম চাষ, গুজরাটে ৩০% তুলো চাষ ক্ষতির মুখে। এর প্রভাব পড়বে কৃষির বৃদ্ধিতেও।
বেহাল দশা ঋণ বাজারেরও। আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ক্রেডিট সুইজ জানিয়েছে, জুলাই থেেক সেপ্টেম্বের মধ্যে ভারতে ঋণদানের হার নেমে এসেছিল মাত্র ৬%–এ, যা নোটবন্দির সময়ের সমান। এর কারণ নন ব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিলে ঋণ দেওয়ার মতো পুঁজি নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিতে সাহস করছে না। সরকার বিপুল পরিমাণ পুঁজি জোগানো সত্ত্বেও চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ কমেছে ৩ শতাংশ। এমনকি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ঋণ গত এক বছরে ২২ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। মিউচুয়াল ফান্ড থেকেওপুঁজি জোগান কমেছে ৩০ শতাংশ। আইএলঅ্যান্ডএফএস–এর বিপুল অনিয়মের খবর সামনে আসার পর অন্য নন ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলিকে কেউই পুঁজি জোগাতে রাজি নয়। সমস্যা মেটাতে বাজার থেকে ঋণ করার চেষ্টাও সফল হচ্ছে না। আবার ধার করার খরচও বেড়েছে বিপুল হারে। ফলে চরম সঙ্কটে ঋণের বাজারও ।