রায়ের কপি পড়ে জানলাম, বিভিন্ন দস্তাবেজ থেকে এটা প্রমানিত, ১৫০৭ সালে ভাদ্রপদ পূর্ণিমার দিনে, গুরু নানক নামে এক জনৈক সন্ত সুলতানপুর থেকে দিল্লি হয়ে অযোধ্যা গেছিলেন বেশ কিছু দিনের জন্য। তার উল্লেখ ও আছে। কী কারণে গেছিলেন সেটা অবশ্য উনিই বলতে পারেন। তবে ওনার বয়স এখন ৫৫০ বছর আর কারতারপুরে তার বিপুল আয়োজন চলছে।
আমরা যারা হিন্দুদের বোকা বোকা মহাকাব্যকে আইনি মান্যতা দেওয়া নিয়ে বিব্রত তারা জানি, উনি নিশ্চয়ই বাবরের সাথেই দেখা করতে গেছিলেন! কিন্তু ইতিহাসের বই বলছে ১৫২৬ সালে উনি ভারতে আসেন। এক হাতে গোলাপ ফুল এবং আরেক হাতে শান্তির পতাকা নিয়ে। তারপর বড্ড আদর করে ভারতের সব স্থাপত্যগুলোকে বাদ রেখে বেছে বেছে মরুভূমিতে স্বর্গোদ্যান বানান। পুরনো ভারতীয় স্থাপত্যগুলি ভ্যানিশ হয়ে যায় এরপর। বরফির মতো কোন মহান জাদুকর নিশ্চিত ছিল বাবরের দরবারে নয়তো এ সম্ভব না। কারণ বাবর তো কোন মন্দির, বৌদ্ধ জৈন স্থাপত্য গুড়িয়ে দেয়নি। বুদ্ধ অসহিষ্ণু হতে পারে বাবরি নয়!!!!!!!!
কাট টু স্বাধীনতা পরবর্তী অযোধ্যাঃ ১৯৪৯ সালের এক বিশেষ রাতে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি বাবরি মসজিদে পাহারারত এক হাবিলদার আবুল বরকত নাকি রাতে এক অদ্ভুত ঘটনা দেখতে পায়। আচমকা রাতে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে আর এক ফুটফুটে বাচ্চাছেলে নাকি কৃষ্ণ বেশে আবির্ভূত হয় মসজিদের অলিন্দে। সকালে তাকে আর দেখতে পাওয়া যায় না। তার জায়গায় পরে থকতে দেখা যায় এক রামের মূর্তি। এবার মুশকিল হলো, যে দেখেছে এটা সে মুসলিম আর ইসলাম ধর্ম মূর্তিপুজোকে সমর্থন করেনা। যে পুরাতাত্ত্বিক প্রথম খনন চালিয়েছিলেন বাবরি মসজিদের নিচে আর জানিয়েছেন যে, এর তলায় বিশাল কোন অ-ইসলামী স্থাপত্য ছিল, সে ও কিন্তু মুসলমান। এম.এম.কুট্টি।
সাল ১৯৮৬। এ বছর দুটো ঘটনা ঘটবে। ফৈজাবাদ জেলা আদালত বাবরি মসজিদের তালা খোলার রায় দেবে আর আমাদের রাহুল গান্ধীর বাবা রাজীব বাবু একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ভোট একত্রিত করতে “শাহা বানু” কেসকে মান্যতা দেবে।দুটোই দেশের বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের মা মাসি করার জন্য যথেষ্ট ছিল বলে আমি মনে করি, আপনি অবশ্যই মনে করবেন এটাই করা উচিৎ ছিল কারণ গান্ধী মানে ধোয়া তুলসীপাতা।
এরপর এই তালা খোলার দাবী নিয়ে আদালতে যাওয়া হলো। ১৯৮৬ সালে জজসাহেব একটা হনুমানকে কেস ফাইলগুলোর ওপর বসে থাকতে দেখে সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে বাবরি মসজিদের তালা খুলে দেওয়া উচিৎ। এরসাথে রাজীব গান্ধী ও এন.ডি.তিওয়ারি সরকারের হলফনামা জমা পরলো যেখানে সাফ জানানো হয়, তালা খুললে বিশাল কোন অসুবিধা হবে না। সামলে নেওয়া যাবে। আজ্ঞে! এটাই ছিল প্রথম পেড়েক ধর্মনিরপেক্ষতার কফিনে। আপনি অবশ্য যা গেরুয়া তাতেই জুজু দেখবেন। আর কোন দুজন লোককে ঘৃণা করেন বলে তেড়ে খিস্তি করবেন গোটা ধর্মটাকে।
ভুল করছেন বাবুরা। আপনার পক্ষে রায় গেলে সুপ্রিম কোর্ট নিরপেক্ষতার কষ্টিপাথর আর বিপক্ষে গেলে আরএসএস এর দালাল এই হেরোগিরি চলবে নি।
দেশটাকে চিনুন দাদা-দিদিরা। এ দেশে এখনো হাজার হাজার গ্রামের মানুষ প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে থাকে দীপালোকে সীতা-রাম বাড়ি ফিরবে বলে। এ দেশে আজ ও মানুষ বিশ্বাস করে অযোধ্যা বলে একটি রাজ্য সত্যি ছিল। ওই যে সরয়ূ নদীর তীরে যে রাজ্য অবস্থিত। যে রাজ্যের রাজা দশরথ ছিলেন প্রজা পালক, দেব দ্বিজে ভক্তি পরায়ণ , জিতেন্দ্রিয় , ধর্মনিষ্ঠ। যে রাজ্যের সোনার টুকরো যুবরাজকে বনবাসে যেতে হয়েছিল।
এ দেশে আজ ও কিছু মানুষ সীতাকে বিহারের মিথিলা থেকে উত্তর প্রদেশে বিয়ে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অরন্ধন করে, রোদন করে। আবার এ দেশের মহাজ্ঞানী, পরাক্রমশালী রাবনের মৃত্যুতে শোকাভিভূত হয় কিছু মানুষ। অসুরদের গ্রামের নাম ও শুনেছেন নিশ্চয়ই? এসবটা আমার সভ্যতার, আমার জাত, ধর্মচেতনার অংশ।
দোহাই আপনার, মধ্যপ্রাচ্যের ওয়াহাবি সংস্কৃতিকে তোল্লা দিয়ে ভাববেন না এদেশের বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের সুরাহা করছেন। শেষমেশ তোষণই করছেন ওদের আর হিন্দুধর্মকে খিস্তি করাকেই ভেবেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা!
আজ যেটা হলো সেটা পরিসমাপ্তিই। দু দশক ধরে সব পক্ষের Sacred Games খেলার পরিসমাপ্তি। পাকিস্তানের মাথায় বোম মেরে এসেছি, কাশ্মীর কবজা করে ফেলেছি, রাম মন্দির বানিয়ে ফেলেছি প্রায়, এবার প্রশ্ন করুন গ্যাসের দাম বাড়া নিয়ে, অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে, বেকারত্ব নিয়ে, সরকারি সংস্থাগুলোকে বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্তগুলোকে। হিন্দুধর্মের সমালোচনা না করে ওগুলো করি চলুন। কলার চেপে ধরে কৈফিয়ত চাই রুটি-রুজির। মন্দির বানানো তো হলো, মন্দিরের সামনের ভিখারিদের দিনবদল হবে কবে? রাম রাজ্যে তো তাই হয় নাকি!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত