বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ঠিক তেমনই চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুই কারণেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে। সর্বোপরি এই অবস্থায় প্রায় তলানিতে পৌঁছেছে পরিকাঠামো বৃদ্ধিও। বৃহস্পতিবারই সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দেশে মূল শিল্পগুলিতে সেপ্টেম্বরে উৎপাদন কমেছে ৫.২ শতাংশ। যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এমন তীব্র সঙ্কোচন শিল্পের বড়সড় দুরবস্থার কথা জানান দিচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে বেরোতে আরও অনেক সময়ের প্রয়োজন।
অবস্থা হাতের বাইরে বেড়িয়ে গেছে দেখে, ইতিমধ্যেই অর্থনীতিতে গতি আনতে বেশকিছু পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। কর্পোরেট করের হার কমানো হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিকে অর্থ জোগানো হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সীমা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নির্মাণ শিল্পে সহযোগিতা এবং নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলিকে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। কিন্তু, তারপরও অর্থনীতির গতি শ্লথ থেকে শ্লথতর হয়ে চলেছে। অনেকের ধারণা, এর মূল কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। এবং এই সমস্যা মেটানোর লক্ষ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও ঠিকঠাক ব্যবস্থা নেয়নি মোদী সরকার।
প্রসঙ্গত, ৮টি মূল শিল্প হিসেবে ধরা হয় কয়লা, অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পরিশোধিত তেল, রাসায়নিক সার, ইস্পাত, সিমেন্ট এবং বিদ্যুৎক্ষেত্রকে। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই সব ক্ষেত্রে অগ্রগতির হার ছিল ৪.৩ শতাংশ। এই ৮টি শিল্প দেশের আইআইপি (ইনডেক্স অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন)-র ৪০ শতাংশ জুড়ে থাকে। গত আগস্টের তুলনায় এই ক্ষেত্রগুলিতে ১.১ শতাংশ উৎপাদন কমে গিয়ে থাকতে পারে। গত ৭ বছরের মধ্যে যা সবচেয়ে খারাপ। এ নিয়ে ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থা আইসিআরএ-র আধিকারিক অদিতি নাইয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সূচকে জিডিপি এবং জিভিএ-র অগ্রগতি আরও নিম্নগামী হতে পারে।
উল্লেখ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মনে করছে, জিডিপি বৃদ্ধির হার জুলাই-সেপ্টেম্বরে কিছুটা ভাল (৫.৩ শতাংশ) হতে পারে। জিডিপি হারে বৃদ্ধির পূর্বাভাস বলছে, পুরো বছরের হিসেবে ৬.৮ থেকে কমে তা দাঁড়াতে পারে ৬.১ শতাংশে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিক জিডিপি হারের সূচক প্রকাশিত হবে ২৯ নভেম্বর। অন্যদিকে, শুক্রবার একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় গত অক্টোবরে ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রে বিগত দু’বছরের সর্বনিম্ন গতি নথিভুক্ত হয়েছে। চাহিদা ও উৎপাদনের ঘাটতি ব্যবসায় মন্দা এনেছে। এখন তা গত আড়াই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। চাহিদা কমায় সেপ্টেম্বরে ম্যানুফ্যাকচারিং পার্চেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) ছিল ৫১.৪। জুনে তা ছিল ৫২.৫। অক্টোবরে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৫০.৬।