দীপাবলিতে প্রদীপ জ্বালাননি ওঁরা, পুজোতেও কেনেননি নতুন পোশাক, ভাইফোঁটার মিষ্টি ওদের জন্য নয়। তেলঙ্গানা সড়ক পরিবহণ নিগমের ৪৮ হাজার কর্মীর এখন একটাই চাওয়া— তাঁদের চাকরিটা ফিরিয়ে দিন। দেড় মাস কেটে গিয়েছে, বেতন পাননি।
নিগমকে পুরোপুরি সরকারি অধিগ্রহণের দাবিতে আন্দোলনে নামায় পরিবহণ নিগমের সব কর্মীকেই ছাঁটাই করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থেকেই সপরিবার তাঁরা রাস্তায়।
মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও সকলকে ছাঁটাই করে দিয়ে ঘোষণা করেছেন, ‘ওদের দায় রাজ্য সরকার নেবে না।’ তার পর থেকে এ পর্যন্ত তিন জন পরিবহণ কর্মী আত্মঘাতী হয়েছেন। শেষ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার, নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন নালগোন্ডার ৫৩ বছরের বাস চালক বেঙ্কটেশ্বরালু। তাতেও নরম হননি মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের দুই বিরোধী দল বিজেপি আর কংগ্রেস কেসিআর-এর এই আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। ৩ পরিবহণ কর্মীর মৃত্যুর জন্য তারা মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করেছে। কেসিআর তাও বলে চলেছেন, ‘আমার কোনও দায়িত্বই নেই!’
এর আগেও পরিবহণ কর্মীরা দাবি-দাওয়া জানানোয় মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সাফ বলে দিয়েছিলেন, ‘নিগম বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা লোকসান করে। আন্দোলন না করে আপনারা বরং মন দিয়ে কাজ করে নিগমকে শক্তিশালী ও লাভজনক করে তুলুন।’ এর পরেও কর্মীরা আন্দোলনে অনড় থাকলে সবাইকে ছাঁটাই করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি নই, তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ছাঁটাই করেছেন। কাজ করার অধিকারই নেই এই কর্মীদের।’
পরিবহণ সমস্যার সমাধান খুঁজতে গত সপ্তাহে ৬ সদস্যের একটি দল তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। তার পর থেকে কয়েক বার আলোচনা হলেও জট কাটেনি। সেপ্টেম্বর মাসের মাইনেও এই কর্মীদের দেয়নি সরকার। বাস কনডাক্টরের মেয়ে ছোট্ট নেহা বলছে, ‘বাজি বা নতুন পোশাক আমাদের দরকার নেই। মাইনে না-পাওয়ায় স্কুলে ফি জমা দিতে পারেননি বাবা। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের পরীক্ষায়ই বসতে দিচ্ছেন না!’ তাঁর মা সৌভাগ্যলক্ষ্মী বলছেন, ‘উৎসবের কথা আমরা ভাবতেই পারছি না। ছোটরা তো অত বোঝে না, তারা আনন্দ করতে চায়। কিন্তু জামাকাপড় কিনে দেব কোথা থেকে, হাতে তো টাকাকড়িই নেই। সরকারের উচিত বকেয়া মাইনেটা অন্তত দিয়ে দেওয়া!’