সমুদ্রের পারে ডেক চেয়ারে পিঠ এলিয়ে বসে, অফুরন্ত কফির কাপে আর বই পড়িনা। হাজার হাজার ঢেউ এর শব্দ বারবার শুনে ও মনোযোগ দিতে পারিনা একটা পাতাতে ও। বই পড়িনা এক আধটা বা এক পাতা ও। যদি ও বা শেষ করি কোন বই সেটা আমার নিজের সাম্রাজ্যের নিজের স্থাপিত গিনিস কমিটিতে রেকর্ড হিসেবে ঘোষিত হয়, পুরস্কৃত করি নিজেই নিজেকে অন্য কোন বই উপহার দিয়ে। তারপর নিজেই সে বই তাকে তুলে রাখি, ধুলো ঝেড়ে ফের গুছিয়ে রাখি নিয়ম করে।
বাড়ি বানানোর সময় ক্যাবিনেট বানানো হয় ইদানীং ড্রইংরুমে৷ ওখানে কাঠ দিয়ে নক্সা করা হয়। বই এর জায়গা আজ ও ছেড়ে রাখা হয় তবে ওতে শোপিস বা টেরাকোটার মূর্তি রাখতে পারেন। অনেকটা জায়গা তাও খালিখালি লাগলে তিনটে ভারী বই গুঁজে দিতে পারেন। টুলের উপর আলুথালু বইপত্তর আছে আপনার ঘরে? ওর মধ্যে সবকিছু পড়ে ফেলেছেন আপনি?
কিলো দরে বই বিক্রি হয় এখানে। এখানে দু লাইন কবিতা কিনতে পারেন সবচেয়ে সস্তায়৷ কারণ যে যত কিলো শব্দ লিখবে, তার দাম ততো বেশী। অনেকপাতার মোটা বইতে অবশ্য কিচ্ছুটি না লিখে শেষ পাতায় লিখে রাখতেই পারেন ছাপার অক্ষরে “তোর এই কিলো দরে শব্দবেচায় আমি মুতি।” ওটা ও কিলো দরে বিক্রি হয়ে যাবে। তবে আপনি লেখক বা কবি হওয়ার সমস্ত অধিকার হারাবেন। আপনাকে নাম দিলাম আঁতেল৷ হাজার হাজার বই হাতে লাখো লাখো আঁতেল ঘুরে বেড়ায়, কিছু একটা লিখতে চায় কিন্তু একটা ও বই পড়েনা। হাজার খানা বই পড়লে সে মারা যায় কোন গোপন আস্তানায়৷ পচা গন্ধ পেয়ে লোক মিউনিসিপালিটিকে খবর দেয় কুকুর মরেছে ভেবেছে।
হাজার খানেক বই উপহার পেলে হাজার কয়েক মানুষ আনন্দ পায় খুব, ওরা গ্যাস চেম্বারে পেন কাগজ পেলে ও লিখে যাওয়ার চেষ্টা করে কিছু। বাকিরা বড্ড কষ্ট পায়। এ কষ্ট কালো মেয়ে জন্মানোর কষ্টকে ও ছাপিয়ে যায়। অন্ধকার নেমে আসে অপ্রাপ্তির। কী যেন না পড়েই পিছিয়ে পরার গ্লানি৷ এর চেয়ে বই পোড়ানোর দৃশ্য গুলো ভালো। এক এক করে, হাজার হাজার বই চোখের সামনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই এর উপর রাজার মতো দাঁড়িয়ে থাকার আনন্দ।
দূরে কোথাও কেউ শুনলাম এক হাজার বই পড়ে ফেলেছে তিন মাসে। মানে প্রায় দশটা করে বই রোজ পড়েছে। লাইব্রেরিতে বসে টানা বই পড়ে গেছে। বাইরে যখন মাংস পোড়া গন্ধ, জানালা বন্ধ করে বই পড়েছে কেউ। হজার হাজার মানুষকে দেশহীন করে দেওয়া হচ্ছে যখন, দূরে কোথাও কেউ বই পড়ছিল নিশ্চয়ই তখন। ভরসা পাচ্ছি। ভরসা জাগছে হলদে পাতায়।
ঠিক যখন ভরসা পেয়ে উঠে দাঁড়াবো ফের, শুনলাম ইনভার্টেট কমার গন্ডগোল৷ ওটা নাকি ‘এক হাজার বই’ হবে। দাদের বই, হাজার বই, চুলকানির বই পড়া বেড়েছে ইদানিং। চুলকে চুলকে আমাদের নড়বড়ে জায়গা গুলোতে ঘা করতে হবে। চুলকে হাজা করে দিতে হবে আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের একে অপরের প্রতি বিশ্বাস। হাজা হচ্ছে তো আমাদের মস্তিষ্কে। আমরা সন্দেহ করতে শিখছি ছোটবেলা থেকে যে আমার বিজাতীয় বন্ধু ছিল তাকে, হাজার কারনে চুলকে চুলকে সন্ত্রাসী বা দেশদ্রোহী তকমা দিয়ে ফেলছি নৈশব্দকে।
‘এক হাজা র বই’ খুব গুরুত্বপূর্ণ এক ধরনের হাজা নিয়ে লেখা৷ এটা আমাদের সমাজে, ভাতৃত্ববোধ, বহুত্ববাদে আক্রমণ করে৷ তারপর খুব করে চুলকোতে বলে। ততক্ষণ অবধি চুলকোতে হবে যতক্ষণ না ভোটে জিতে ফের আসনে বসা যায়। তারপর স্যালিকল মলম লাগানো হবে কিন্তু সে মলম পরবর্তী নির্বাচন অবধিই চলবে। তারপর ফের দাদ, হাজা, চুলকি… খ্যিচ খ্যিচ খ্যিচ খ্যিচ!
পুনশ্চঃ এটি একটি কাল্পনিক রম্যরচনা। মানে স্যাটায়ার। জাদুঘরে কাঁচের বাক্সে থাকার কথা স্যাটায়ারের কিন্তু ওর নিতম্বে হাজা হয়েছে বলে ডাক্তার রোজ একবার করে ওকে বের করতে বলেছে। স্যাটায়ার আমার মতোই নখদাঁত হীন, ক্যালানে। বাস্তবের সাথে মিল নেই। থাকলে ও বা, কতৃপক্ষের কোন দায় নেই!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত