বেফাঁস মন্তব্য করায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তিনি কখনও বলেন ‘মহাভারতের সময়ে স্যাটেলাইট অস্তিত্ব’, আবার কখনও নিদান দেন, ‘শিল্প আনার থেকে গো-পালন ভালো’। তবে এ নিয়ে একেবারেই হাসিঠাট্টা করা যাবে না। হ্যাঁ, এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করে সাসপেন্ড হলেন আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক-চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী।
ত্রিপুরার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ কৌশিক চক্রবর্তী নাগরিক সংশোধনী বিলের সমালোচনা করে টুইটারে ও ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তাতে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবেরও সমালোচনা করেছিলেন।
টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, ‘প্রিয় বিপ্লবদা, উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলার জন্য কোনও নোবেল প্রাইজ নেই। তাই একটা সম্মাননীয় পদকে এভাবে সারা দেশে হাসির খোরাক না বানিয়ে এবার ক্ষেমা দিন। অনেক সংগ্রাম ও বলিদানের মাধ্যমে গড়া এই নতুন সরকারের উপর ত্রিপুরার মানুষের অনেক আশা। সবাইকে আশাহত করবেন না।’ আর ফেসবুক পোস্টটি ছিল, ‘ডাক্তাররা রক্তের অপচয় করছে না তো— এই ধরনের ফালতু প্রশ্নে জল ঢেলে দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সব ডাক্তারদের তরফ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’
এই প্রেক্ষিতে গত ২ রা আগস্ট তাঁকে শো-কজ নোটিস পাঠায় ত্রিপুরা স্বাস্থ্য দফতর। শো-কজ নোটিসে বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করেছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে তাঁর বিরূপ মন্তব্য রাজ্যের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করতে পারে। শো-কজ নোটিসে অভিযোগ আনা হয়, একজন সরকারি আধিকারিক হিসাবে এমন মন্তব্য করে সিভিল সার্ভিস কনডাক্ট রুল ভঙ্গ করেছেন ডাঃ কৌশিক চক্রবর্তী।
ইংরেজি নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়ার সূত্রে খবর, অভিযুক্ত চিকিৎসকের কাছে শো-কজ নোটিসে জানতে চাওয়া হয়, সরকারি বিধিভঙ্গের অভিযোগে কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না স্বাস্থ্য দফতর? এর প্রতিক্রিয়ায় গত ১৯ শে আগস্ট চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী লেখেন, তাঁর কোন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এই অভিযোগ আনা হয়ছে, তা না জানা পর্যন্ত তিনি ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না।
সূত্রের খবর, এরপর ত্রিপুরার মেডিকেল এডুকেশনের ডিরেক্টর চিন্ময় বিশ্বাস একটি চিঠি পাঠান তাঁকে। সেইসঙ্গে তাঁর দুটি টুইট ও একটি ফেসবুক পোস্টের স্ন্যাপশট পাঠানো হয়। এই চিঠি পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে কৌশিকের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে ১১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য দফতরকে পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় তিনি লেখেন, এই মন্তব্যগুলো কোনও সরকারি আধিকারিক হিসাবে নয়, স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসাবে ব্যক্তিগতভাবে নিজের মত প্রকাশ করেছেন।
যদিও চিকিৎসকের এই প্রতিক্রিয়ায় খুশি নয় ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। গত ২১ শে অক্টোবর কৌশিক চক্রবর্তীকে সাসপেনশনের চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তাঁর আগরতলা ছাড়ার ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।