সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা আর একি সঙ্গে বাড়ছে দূষণ। আর রাস্তাঘাটে জ্যাম তো আছেই। তাই নিত্যদিনের যাতায়াত সুষ্ঠু ভাবে করতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে নদীপথকেই পাখির চোখ করছে মমতার সরকার। সড়ক পথের ভোগান্তি থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে নদীপথকে বেশি করে কাজে লাগানো হবে। অদূর ভবিষ্যতে ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি ছেড়ে দূর-দুরান্তের যাত্রীরা নদীপথে সরাসরি পৌঁছে যাবেন কলকাতায়।
গঙ্গার জলপথ পরিবহনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য পরিবহন দপ্তর। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল লজিস্টিক অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোজেক্ট’। তারই অংশ হিসেবে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন নদ-নদীতে জলপথ পরিবহনের কী ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং তার জন্য কতটা পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, তার সলুকসন্ধান পেতে কনসালট্যান্ট সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারা সমীক্ষা করে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে। সেই মতো টেন্ডার ডেকে জলপথের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে।
কলকাতা ছাড়াও হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জলপথ উন্নয়নের সম্ভাবনা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।জলপথে লঞ্চ ও স্টিমার চালানোর জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীদেরও আরও বেশি করে উৎসাহিত করা হবে। মাছ ধরার নৌকার জন্য অনেক সময় লঞ্চ চালাতে সমস্যা হয়। সেজন্য কোন কোন আইন সংশোধন করা দরকার সে বিষয়েও সুপারিশ করবে সংশ্লিষ্ট পরামর্শদাতা সংস্থা। এই তালিকায় রয়েছে দি বেঙ্গল ফেরিজ অ্যাক্ট, দি ইন্ডিয়ান পোর্ট অ্যাক্ট, দি ইনল্যান্ড ভেসেলস অ্যাক্ট, দি হুগলি রিভার ব্রিজ অ্যাক্ট।
এর ফলে জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতেও সুবিধা হবে। তার জন্য জলপথে অনেক নতুন রুট চালু হবে। বানানো হবে নতুন জেটি। নদীপথে যাত্রী পারাপারের জন্য চালু হবে অত্যাধুনিক লঞ্চ-স্টিমার। জলপথের নিরাপত্তা বাড়াতে জিআইএস প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হবে। তার রূপরেখা তৈরি করতে পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগের জন্য সম্প্রতি গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হয়েছে।
পরিবহন দপ্তরের আধিকারিকরা মনে করছেন, নদী পথের সদ্ব্যবহার করতে পারলে কলকাতার রাজপথে গাড়ির চাপ অনেকটাই কমবে। যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনের খরচও অনেকটাই হ্রাস যাবে। তাতে লাভবান হবে রাজ্যের মানুষ। চাঙ্গা হবে রাজ্যের অর্থনীতি। এক আধিকারিকের কথায়, ‘হুগলি থেকে যারা কলকাতায় আসেন তারা হয় ট্রেন অথবা বাসে আসেন। তার জন্য বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু ব্যান্ডেল থেকে লঞ্চে কলকাতায় সময় লাগবে ৪০ মিনিট থেকে একঘণ্টা। যানজটেও পড়ারও ভয় নেই। তাই জলপথে কলকাতায় আসার সুযোগ থাকলে কেউ বাস-ট্রেনে আসতে চাইবে না।’