গত ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। তারপর দু’মাস পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও যে অচলাবস্থা কাটেনি, উপত্যকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে তা নিয়ে গুঞ্জন। এয়ারপোর্ট থেকে ডাল লেক- সর্বত্রই রাস্তাঘাটের শুনসান ভাব স্পষ্ট। আপাত দৃষ্টিতে শ্রীনগর এখন আর অবরুদ্ধ নয়। নিষেধাজ্ঞাও উঠে গিয়েছে। তবে ফেরেনি উপত্যকাবাসীর সেই স্বতঃস্ফূর্ততা। অক্টোবর মাসে ভরা ট্যুরিস্ট সিজন থাকে কাশ্মীরে। তবে এ বার তাঁদের সংখ্যা হাতেগোনা। গাড়ি চলছে সংখ্যায় কম। দোকান খুলেছে কিছু কিছু। অল্প দূরত্বের ব্যবধানে মোতায়েন অসংখ্য সেনাকর্মী। ডাল লেকের আশেপাশে কোনও হোটেল বা রিসর্টই খোলেনি। অসংখ্য বুকিং বাতিল হয়েছে আগস্টের এক্কেবারে গোড়া থেকে।
এক হাউজবোটের মালিক যেমন বলছিলেন, ‘এ বছর জুন-জুলাই মাসে খুব ভাল চলছিল ব্যবসা। ফেব্রুয়ারির পুলওয়ামা কাণ্ডের পরেও আমরা পর্যটকদের আলাদা করে ফোন করে গ্যারান্টি দিয়েছিলাম নিরাপত্তার। তাঁরা আসতে শুরুও করেছিলেন। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে আচমকা সব শেষ। আড়াই মাস ধরে বন্ধ সব কিছু।’ আরেক হাউজবোটের মালিকও নিজের হতাশা ও বিরক্তি গোপন না করেই বলেন, ‘কেন্দ্র যদি কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্যই এই পদক্ষেপ করে থাকে তা হলে এ বিষয়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মতামত হয়ত অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু সরকারকে এটাও বুঝতে হবে উপত্যকার অর্থনীতি, সমাজনীতি বাকি রাজ্যের থেকে অনেকটা আলাদা। মানুষের জীবনধারণ পদ্ধতিও আলাদা। শ্রীনগরকে আর পাঁচটা ঘিঞ্জি ও দূষিত শহর হিসাবে দেখতে ভাল লাগবে কি? কলকারখানা, শিল্প – এসব শুরু হোক, কিন্তু তার বিনিময়ে ক্ষুদ্র শিল্প যদি হারিয়ে যায়, বহু বছর ধরে চলে আসা সংস্কার ও ঐতিহ্য যদি বাণিজ্যের কবলে পড়ে হারিয়ে যায়, তা হলে কি তা দেশের জন্য মঙ্গল?’
তবে শুধু কাজ নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও অসংখ্য অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে কাশ্মীরবাসীকে। এক তরুণী সাংবাদিক যেমন জানান, তাঁর মা আগের দুটো কেমো নিতে পারেননি অবরোধের জন্য। তিনি জানান, ‘পোস্টপেড মোবাইল কানেকশন সবে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। তার আগে এটুকুও ছিল না। অথচ রাতবিরেতে অসুখবিসুখ ছিল আমাদের ঘরে ঘরে। ছিল ছোট বড় নানা বিপদ। হাতে ফোন শুধু নেই তা নয়, ঘর থেকে বেরনোর নিরাপত্তা নেই। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে অভিন্ন সংবিধান বা সমানাধিকার বা অন্য কোনও অধিকার তো পেতে চাইনি।’ সকলেরই এক কথা, ‘আমরা দেশের বিরুদ্ধে নই। আমরা ভারতের থেকে বিচ্ছিন্নও নই। কিন্তু দেশের জন্য নিজেদের জাতিসত্ত্বাটুকু হারিয়ে ফেলতে চাই না। এই বিবাদের সমাধান এত বছরে হয়নি। শুধু ৩৭০ ধারা তুলে দিলেই সমাধান হয়ে যাবে, সে কথা বিশ্বাস করি না।’