উত্তর কলকাতার খান্নার অদূরে সরু একটা গলি৷ আর সেই ছোট্ট গলিতেই হয় শহরের এক অন্যতম ‘বড়’ পুজো নলিন সরকার স্ট্রিটের দুর্গাপুজো। ১৯৩২ সালে এই পাড়ার বাসিন্দারা বারোয়ারি পুজোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই শুরু। প্রথমে পুজো হত পাড়ার একটি গ্যারাজে। পরে প্যান্ডেল সরে আসে রাস্তার ওপর। প্রতিবছরই পুজোর থিমে নলিন সরকার স্ট্রীট সর্বজনীন দর্শকদের মনে একটা বাড়তি উৎসাহের জন্ম দেয়। এ বছর তাদের থিম ‘কর্মই ধর্ম’৷ অসুর নিধনের মতো মহান কর্ম করে দুর্গতি নাশ করেছিলেন বলেই মর্ত্যে পূজিতা মা দূর্গা। তাঁর এই কর্মের জন্যই তাঁকে ভক্তিভরে পুজো করে আসছে মানুষ। ফলে প্রত্যেকের কৃতকর্মই যে তাঁর মানদন্ড, এবার তাদের ৮৭ তম বর্ষে সে কথাই তুলে ধরছে নলিন সরকার স্ট্রিট৷
এ প্রসঙ্গে থিম শিল্পী মানস দাস এখন খবরকে বলেন, ‘৮৭ তম বর্ষে নলিন সরকার স্ট্রীটের নিবেদন কর্মই ধর্ম। সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে, মানুষ কর্মকে গুরুত্ব না দিয়ে ধর্ম নিয়েই বেশি মাতামাতি করছে। আর তার ফলে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে তারা। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধছে। কিন্তু আমি এখানে এই বার্তাই দিতে চেয়েছি যে, মানুষের কর্মই তার আসল পরিচয়, তার ধর্ম। কারণ দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসে অসুর বধ করেছেন বলেই কিন্তু তাঁকে দেবী রূপে সবাই পুজো করেন। পার্বতী রূপে কিন্তু তিনি পূজিত হন না। কারণ আমরা মায়ের কর্মের রূপ অর্থাৎ মহিষাসুরমর্দিনী রূপটাকেই বেছে নিয়েছি।’
শিল্পী জানান, এই হাতিবাগান অঞ্চলে প্রচুর দিনমজুর, শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে। তাঁদের কাছে কিন্তু তাঁদের কর্মটাই আসল ধর্ম। তাদের জীবনযাত্রাটাকেই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। মন্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে হাতুড়ি, লাঙল, কাস্তের মতো দৈনন্দিন জীবনের নানা উপকরণ। আসলে একজন কৃষক যখন লাঙল দিয়ে চাষ করে ফসল ফলাচ্ছেন, তখন কিন্তু কর্মের, তাঁর শ্রমেরই জয় হচ্ছে। তাই এমন সব জিনিসকেই আমি মূলত আমার মন্ডপ তৈরির উপকরণ হিসেবে বেছে নিয়েছি। প্রায় দুমাস ধরে চলছে এই মণ্ডপ তৈরির কাজ। প্রতিবারই দর্শনার্থীদের ঢল নামে উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলের এই পুজো দেখতে। নানা পুরষ্কারেও ভরে যায় পুজোকমিটির ঝুলি। এবারও তাদের ‘কর্মে’ যে এর অন্যথা হবে না, তা বলাই বাহুল্য।