দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এর আগেও দলের নেতারা অজস্র বার তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এমনকি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে তাঁকে অনুরোধ করেছেন বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবুও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তিনি। সিওপিডি-র রোগীর জন্য পাম অ্যাভিনিউয়ের ওই ঘুপচি ফ্ল্যাট কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়। নিজের স্বাস্থ্যের জন্যই এবার ঠিকানা বদলানো উচিত তাঁর। কিন্তু প্রত্যেকবারই সবার অনুরোধ পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।
যেতে চাইতেন না হাসপাতালেও। কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে দিনের পর দিন চলেছে, সঙ্গে আছে আরও ওষুধ। ভিতরে শরীর যে ভাবে ভাঙছে, সেই অনুপাতে রক্ত তৈরি হচ্ছে না। শরীরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের অনুপাতও গোলমাল করছে। পরিবারের লোক, দলের সহকর্মী, বিরোধী দলের নেতারা— কারও আর্জিতেই তিনি সাড়া দেননি। হাসপাতালেও তিনি যাবেন না। বন্দি থাকবেন নিজের ঘরেই।
শেষ পর্যন্ত শুক্রবার শারীরিক কষ্টে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাধা থেকে আপাতত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন চিকিৎসকেরা! দক্ষিণ কলকাতার হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসায় এখন অনেকটাই স্থিতিশীল ৭৫ বছরের বুদ্ধবাবু। ফুসফুসে সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়া আছে। তবে তিন ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। তার ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়েছে, স্থিতিশীল হয়েছে রক্তচাপও। প্রথমে অরুচি থাকলেও শনিবার দুপুর থেকে নিজেই খাচ্ছেন, কথা বলছেন।
তাঁর মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘উনি নিজে সমস্যাগুলোর কথা আমাদের ভাল ভাবে বলতে পারছেন। যার ফলে আমাদের চিকিৎসা করতেও সুবিধা হচ্ছে। কিছু সময় অন্তর অন্তর ওঁকে বাইপ্যাপ দেওয়া হচ্ছে, যাতে বাড়তি কার্বন ডাই অক্সাইড বার করে দেওয়া যায়।’’ প্রসঙ্গত, এই ব্যবস্থায় মুখে মাস্ক লাগিয়ে কাজ সেরে নেওয়া যায়। গলায় পাইপ ঢোকাতে হয় না।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও বুদ্ধবাবুর মন অবশ্য বদলায়নি। তিনি কেবলই বলে চলেছেন, বাড়ি যেতে চান। এমন কিছুই তাঁর হয়নি, যার জন্য হাসপাতালে এ ভাবে থাকতে হবে— এমনই মনোভাব তাঁর। চিকিৎসকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, আপাতত কয়েক দিন হাসপাতালের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সিপিএম নেতার মন্তব্য, ‘‘যে ধরনের খাওয়া-দাওয়া করলে রক্ত তৈরি হতে পারে শরীরে, সেটা উনি করেন না। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও দরকার আছে। হাসপাতালে থাকলে এ সব কাজে সুবিধা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যত দিন প্রয়োজন মনে করবেন, তত দিনই রাখবেন।’’