সুনীল ছেত্রীর দুরন্ত গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হল না। বদলাল না ওমানের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার ছবিটাও। শেষ আট মিনিটে দু’গোল খেয়ে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রথম ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন অধরাই থাকল ভারতীয় ফুটবল দলের। প্রথমার্ধে সুনীল ছেত্রীর লক্ষ্যভেদ লিড এনে দিলেও শেষ দশ মিনিটে রক্ষণের ব্যর্থতায় দু’টি গোল হজম করতে হল ইগর স্টিম্যাচের দলকে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর গ্রুপ-ই’র দ্বিতীয় ম্যাচে দোহায় কাতারের বিরুদ্ধে খেলবে ভারত।
ম্যাচের শেষ পনেরো মিনিটের ওমান-ঝড় ওলটপালট করে দিয়ে গেল সবকিছু। আরও একটু পরিষ্কারভাবে লিখতে হলে আট মিনিটের ব্যবধানে করা ওমানের রাবিয়া আল মান্ধারের অসাধারণ দুটো গোলের সৌজন্যে মাথা নত করতে বাধ্য হল উদান্ত সিংহ, শুভাশিস বসুরা। ওমানের জয়ের গোলটা তো এক কথায় বিশ্বমানের। তবে আল মান্ধারের প্রথম গোলটার জন্য আমি ভারতের গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুকে দায়ী করব। তরুণ বসু বা ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো কেউ থাকলে এই গোল বাঁচিয়ে দিত। চার বছর আগের পুনরাবৃত্তিও হত না। সে বারও তো একই ব্যবধানে হেরেছিল সুনীলরা। পার্থক্য শুধু একটাই যে, ভারত ম্যাচের বেশিরভাগ সময় এগিয়ে থেকেও শেষরক্ষা করতে পারল না।
কোচ ইগর স্টিম্যাচ এদিন দল সাজিয়েছিলেন ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। গোলে গুরপ্রীত সিং সান্ধু। রক্ষণ সামলানোর প্রধান দায়িত্ব ছিল রাহুল ভেকে, সন্দেশ ঝিংগান, আদিল খান ও শুভাশিস বসুর উপর। ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসেবে অনিরুদ্ধ থাপা ও রোলিন বর্জেস। সিঙ্গল স্ট্রাইকারে সুনীল ছেত্রীর পিছনে ভারতের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ব্যবহার করেন উদান্তা সিং, ব্র্যান্ডন ও আশিক কুরুনিয়ানকে। ঘরের মাঠে শুরু থেকেই ইতিবাচক ফুটবল উপহার দেয় স্টিম্যাচ-ব্রিগেড। দুই উইং দিয়ে উদান্তা এবং আশিক কুরিয়ানের গতি বারবার বিপদে ফেলেছে ওমানকে।
বিরতির আগে ওমান গোলশোধ করতে পারেনি ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধুর দৃঢ়তায়। ডানদিক থেকে ওমানের সাদ সুহেলের ক্রস এসে পড়ে বিপক্ষ বক্সে। সন্দেশ-আদিলদের টপকে তাতে হেড নেন আমেদ কানো। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে নেওয়া তাঁর সেই প্রয়াস অনবদ্যভাবে বাঁচান গুরপ্রীত। বিরতির পর ওমান আক্রমণের তীব্রতা বাড়ায়। ৬০ মিনিটে ইগর স্টিম্যাচ মাঝমাঠ সংগঠন জোরালো করার লক্ষ্যে ব্র্যান্ডনের পরিবর্তে চাংতেকে ব্যবহার করেন। ম্যাচ যতই শেষের দিকে এগিয়েছে ততই বেড়েছে ওমানের চাপ। এই পর্বে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষকে সুবিধা করে দেয় ভারত। কোচ স্টিম্যাচের স্ট্র্যাটেজি ছিল, প্রতি-আক্রমণে ব্যবধান বাড়ানো। কিন্তু তাঁর সেই লক্ষ্য সফল হয়নি। মাঝমাঠে লোক বাড়িয়ে ম্যাচের দখল নেয় ওমান। ৭৪ মিনিটে গাফরির শট কোনওক্রমে বাঁচান গুরপ্রীত। ফিরতি বল দ্রুততার সঙ্গে ক্লিয়ার করতে ভুল হয়নি সামনে দাঁড়ানো রাহুল ভেকের। ৮২ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরায় ভারত। পিছন থেকে আসা বলের দখল নিয়ে নিখুঁত লবে গুরপ্রীত সিং সান্ধুকে হার মানান রাবিয়া আলওয়াই (১-১)।
জিততে না পারলেও হতাশ নন ভারতীয় দলের কোচ। ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘রোজ কেউ গোল করতে পারে না। ৮২ মিনিট পর্যন্ত আমরা এগিয়ে ছিলাম। তা ছাড়া আশিক কুরিয়ান ও সন্দেশ ঝিঙ্ঘান ফিট ছিল না। তা সত্ত্বেও ছেলেরা যা খেলেছে, তাতে গোটা দেশ গর্বিত।’’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘‘আমাদের ছেলেরা ওমানের ফুটবলারদের চেয়ে ফিট ছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতাতেই আমরা মার খেয়ে গেলাম।’’
ম্যাচের পরে ভারত অধিনায়ক সুনীল বলেছেন, ‘‘এমন হার মেনে নেওয়া কঠিন। আমার মনে হয়, দ্বিতীয়ার্ধে যতটা বল দখলে রাখার দরকার ছিল, তা পারিনি। ওমানের মতো দলকে বল দখল করতে দিলে জেতা সহজ নয়। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তবে দলের ছেলেরা দারুণ লড়াই করেছে।’’ সুনীল আরও বলেছেন, ‘‘৮১ মিনিট পর্যন্ত ১-০ এগিয়ে ছিলাম। দুর্দান্ত সুযোগ ছিল ম্যাচটা জেতার। এই সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত ছিল।’’ ম্যাচ দেখতে এ দিন গ্যালারিতে ছিলেন সুনীলের বাবা, মা ও স্ত্রী।